আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ

0
57
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা খবর ডেস্ক:
নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিশেষ বরাদ্দ না দিলে নগর কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের বাজেট সংকটে পড়বে বলে ৬ মে জানিয়েছেন নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও।

৬ মে এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে মেয়র ডি ব্লাজিও বলেন, ‘আমাদের হাতে অর্থ ফুরিয়ে আসছে। আর্থিক সহায়তা না পেলে এই করোনাভাইরাস সংকটকালে যেসব নিঃস্বার্থ কর্মী দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের সারিতে থেকে আমাদের পথ দেখিয়েছেন, তাঁদেরসহ পৌরকর্মীদের অনেককে হয় ছুটিতে পাঠাতে হবে, নয়তো ছাঁটাই করতে হবে।’

নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক নগরী বর্তমানে এমন এক স্বাস্থ্যগত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার নজির গত এক শ বছরের মধ্যে নেই। এমন বাজে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেসব কর্মী বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ এক ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে। এই সময়ে দৃঢ়তার সঙ্গে নিঃস্বার্থভাবে লড়াইয়ের পুরস্কার হিসেবে বর্ধিত মজুরি তো দূরের কথা, নিয়মিত মজুরি নিয়েই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে।

৬ মে ডি ব্লাজিও নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে বেশ ভালো সুখবর দিলেও আর্থিক খাত নিয়ে যে সতর্কতা দিয়ে গেলেন, তা এখন বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেছেন, আর্থিক দুরবস্থার মুখে নগরীর পাঁচটি বরোর প্রতিটিই পড়বে। আর এই সংকট হতে পারে ১৯৭০-এর দশকের অনুরূপ। বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি দেশের সব শহরের মেয়রদের সঙ্গে কথা বলেছি। রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাট সবার সঙ্গেই। তাঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন বা করবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন। হাতে অর্থ না থাকলে আমরা কী করব তা নিয়ে আমাদের সবাইকেই ভাবতে হচ্ছে। জুনে একটি বাজেট ঘোষণা করতে হবে। আমি এখানে কোনো অনুমান নিয়ে কথা বলছি না। একমাত্র প্রণোদনার অর্থই আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বাইরে আনতে পারে। নিউইয়র্ক নগরীর এ প্রণোদনা প্রাপ্য।’

নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটে পৌরকর্মী হিসেবে কোনো না কোনোভাবে প্রায় ৫ লাখ কর্মী নিযুক্ত। করোনা সংকটের কারণে এরই মধ্যে নগরীর বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই ও বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সবাই তাকিয়েছিল প্রশাসনিক কাঠামোগুলোর দিকে। কিন্তু এখন পৌরকর্মীদের চাকরিও আর নিরাপদ থাকছে না। আর্থিক সংকট এমন মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে।

ডি ব্লাজিও বলেন, ‘৭৪০ কোটি ডলারের কর আদায় হয়নি। এই অর্থ আমি হারিয়েছি। কোনো প্রণোদনা না পেলে অর্থনীতিকে গতিশীল করে স্বাভাবিক দশায় আনা সম্ভব নয়। আমাদের অর্থ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।’

পরিস্থিতি জটিল স্বীকার করে নিয়েই অবশ্য নগরীর অন্য নেতারা বলছেন উপায় এখনো আছে। বিশেষত সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার বলেন, ‘ফেডারেল সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কিন্তু মেয়রের হাতেও কিছু বিকল্প আছে। বিশেষত ব্যয় সংকোচনের জন্য কর্মীদের ছুটি বা ছাঁটাইয়ের চেয়ে অন্য বিকল্প এখনো রয়ে গেছে। এই সময়ে নগরীর কর্মীদের কাজের নিশ্চয়তা নিয়ে কোনো হুমকি দেওয়া উচিত নয়। উচ্চ ব্যয়ের চুক্তিগুলোকে পুনর্বিবেচনা করা উচিত বরং।

সেপ্টেম্বরে সবকিছু স্বাভাবিক হবে

আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই নিউইয়র্ক নগরের সবকিছু অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। তার আগেই অবশ্য বিভিন্ন ক্ষেত্র একটু একটু করে চালু করা যাবে। ৪ মে স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

৪ মে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনওয়াই-১ এর স্পেকট্রাম নিউজকে বিল ডি ব্লাজিও বলেন, ‘আমার মতে, আমরা এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেই আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছাতে পারব, যেখান থেকে সবকিছু আবার চালু করে স্বাভাবিক জীবনের পথে আমরা হাঁটতে পারব। আমি দেখতে চাই যে, স্কুলগুলো আবার খুলছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আগামী কয়েক মাস আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা একটু একটু করে অবরোধ শিথিল করব।’

ধাপে ধাপে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসা খাত খুলে দেওয়ার কথা বললেও ব্লাজিও কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবসা খাতের কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করেননি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার আদেশ এখনো জারি আছে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর এ আদেশ জারি থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here