নেপাল নিয়ে নীতি কী হবে, দিশাহারা নয়াদিল্লি

0
107
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত হউ ইয়ানচি (মাঝে)।

বাংলা খবর ডেস্ক:
চলতি বছরের গোড়ায় নেপালে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত হউ ইয়ানচি সে দেশের সোনার গয়না আর লেহেঙ্গা চোলি পরে, লোকসঙ্গীতের তালে নেচে মাত করে দিয়েছিলেন বেজিংকে! আন্তর্জাতিক নারীদিবসের ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির স্ত্রী রাধিকা শাক্যও। চিনা রাষ্ট্রদূতের নাচে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনিও।

শুধু সে দিনের নাচগানই নয়, এই মুহূর্তে নেপালের রাজনৈতিক বৃত্তে অন্যতম জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছেন এই চিনা কূটনীতিক। ভারতের সঙ্গে প্রাচীন সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক সংযোগকে মুছে, চিনের জৌলুসকে তিনি কাঠমান্ডুতে পরিবেশন করছেন। সম্প্রতি নেপালের বিবদমান নেতাদের একজোট করে, ভারতের তিনটি ভূখণ্ডকে জুড়ে বিতর্কিত মানচিত্র বিলটি সংসদে পাঠানোর পিছনেও সক্রিয় ছিলেন ইয়ানচি।

কূটনৈতিক সূত্র অবশ্য দাবি করছে, এটি কারও একার উদ্যোগের বিষয় নয়। কয়েক বছর ধরেই নেপাল নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিশাহীনতার কারণে দু’দেশের মধ্যে সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল। সেই শূন্যস্থান তৎপরতার সঙ্গে দখল করছে বেজিং। এই মানচিত্র-সঙ্কটের সময়েও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত নীলাম্বর আচার্য বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে। সূত্রের খবর, যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।

কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পকে ভারতে নিয়ে আসা, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সংযোগের কাজ, বন্দে ভারত মিশন, সীমান্তে চিনের মোকাবিলা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থেকেছে সাউথ ব্লক, তাদের নজর থেকে নেপাল হারিয়ে গিয়েছে। এর ফলে নেপাল এখন চিনের হাতে তামাক খাচ্ছে, সে দেশে ভারত-বিরোধিতাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

কূটনৈতিক স্তরে একটি বৃহত্তর প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। সেটি হল, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয়— এত রকমের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও নেপাল নীতির প্রশ্নে ল্যাজেগোবরে কেন সাউথ ব্লক? মদেশীয় আন্দোলনকে সমর্থন করে (পরোক্ষ ভাবে যে কারণে নেপালে ভারতের পণ্য সরবরাহ বন্ধ ছিল) নয়াদিল্লি ভুল করেছিল, এটা দলমত নির্বিশেষে সব নেতাই ঘরোয়া ভাবে বলে থাকেন। নেপালে ভারত বিরোধিতার আগুন জ্বলেছিল ২০১৬ সালে। পরে কে পি ওলি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর চিন-ঘনিষ্ঠতার দিকটি নিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই আতঙ্কিত হয়েছিল মোদী সরকার— বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন। ওলির সঙ্গে দৌত্যের জন্য তড়িঘড়ি তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে পাঠানো হয়েছিল নেপালে। সূত্রের বক্তব্য, সে দেশের ক্ষমতাসীন দল, ওলির নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিকে খুশি রাখতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সুসম্পর্ক রাখা নেপালি কংগ্রেসকে ব্রাত্য করে দিয়েছিল মোদী সরকার। তাই আজ তাদের মুখেও ভারত বিরোধিতার সুর।

বিতর্কিত মানচিত্র সংসদে নিয়ে আসার প্রশ্নে ক্ষমতাশীল দলের সঙ্গে সংঘাত ভুলে ভারত বিরোধিতায় এককাট্টা নেপালি কংগ্রেসও।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here