করোনা ভাইরাস: সুরক্ষা সামগ্রীর রমরমা ব্যবসা, নেই তদারকি

0
55
কোভিড ১৯-এর চিকিৎসায় দরকারি সামগ্রীর বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

বাংলা খবর ডেস্ক:
সাইফুল বাশার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রি করছেন।

তিনি বলছিলেন, “আগে এর সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, যেহেতু নিজের ব্যবসা, কোন চাকরি করি না, তাই আয়ের একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা করলাম। তখন অনলাইনে দেখলাম প্রচুর মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। তখন চিন্তা করলাম এটা করা যায়।”

এরপর পরিচিত একজন আমদানিকারকের মাধ্যমে চীনে যোগাযোগ করে সেখান থেকে সরাসরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দরকারি সুরক্ষা সামগ্রী আনা শুরু করলেন।

একটি মোবাইল ফোন ভিত্তিক অর্থ লেনদেনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন আরেকজন বলছেন তিনি ফেসবুকে মাস্ক ও গ্লাভস বিক্রি করছেন।

তিনি বলছেন মাস্ক বিক্রি ও এর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে কোথাও থেকে কোন অনুমোদন নিতে হয়নি। তিনি বলছেন, “আমার কোন বাড়তি অনুমোদন নেই। আমি কোন অনুমতি নেই নি। আমরা যার কাছ থেকে এগুলো নেই উনিই এইগুলো মেইনটেইন করেন।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরপরই ঔষধের দোকানগুলোতে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভস কেনার হিড়িক লেগেছিল।

সংক্রমণ বাড়তে থাকার পর কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় দরকারি সামগ্রী যেমন অক্সি-মিটার, পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, ফেস-শিল্ড এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিক্রিও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

কোভিড-১৯ না হলেও অনেকে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে রেখে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অক্সিজেন প্রস্তুতকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানি লিন্ডে-র বিক্রয় কেন্দ্রে খবর নিয়ে জানা গেল অক্সিজেনের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

তবে সবচেয়ে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা। লাঠিতে ঝুলিয়ে অথবা পলিথিনের ব্যাগে করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করা হচ্ছে মাস্ক ও গ্লাভস। দেশেই তৈরি হচ্ছে পিপিই। এসব সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


রাস্তায় বিক্রি করা হচ্ছে মাস্ক যার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সরকারি সংস্থা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভাইরলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, “এসব সামগ্রী ব্যবহারের বিপদটা হল এর কোয়ালিটি মেইনটেইন হচ্ছে কিনা আর রিসাইকেল করে বিক্রি হচ্ছে কিনা। আমি পত্রিকায় একটা ছবিতে দেখলাম কিছু লোক একটা হাসপাতালের বাইরে আবর্জনা থেকে পিপিই সংগ্রহ করছে। এখন ব্যবহৃত জিনিস আবার রিসাইকেল করে বিক্রি করা হচ্ছে কিনা। যেভাবে একসময় আমরা সিরিঞ্জ রিসাইকেল হতে দেখেছি।”

তিনি বলছেন, “আমরা পয়সা দিয়ে জিনিসটা কিনে মনে করছি ভালোটাই কিনছি। কিন্তু এটা নকল কিনা সেটা আমরা কিভাবে বুঝবো? যে পরবে সে মনে করবে যে সে নিরাপদ। এসব সামগ্রী মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপদ বোধ করার অনুভূতি তৈরি করে, কিন্তু আসলে সে কতটা নিরাপদ সেটা একটা কথা।”

এর আগে একবার কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য নকল এন-৯৫ মাস্ক আমদানির অভিযোগ উঠেছিল। এখন আমদানিকৃত সুরক্ষা সামগ্রীর কিছুটা পরীক্ষা হচ্ছে।


ফেস-শিল্ড ব্যবহার করছেন অনেকে।

কিন্তু সেগুলো পরে কিভাবে বিক্রি হচ্ছে, কিভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে, অক্সিজেন সিলিন্ডারের মেয়াদকাল রয়েছে কিনা, দেশে তৈরি পণ্য কি ধরনের সামগ্রী দিয়ে বানানো হচ্ছে আর এগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কতটা সুরক্ষা দেয় সেব্যাপারে কোন ধরনের মান যাচাই প্রক্রিয়া বাংলাদেশে হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলছেন, মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, “ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এটা করে। তারা মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। তবে অক্সিজেনের মতো দেখি কেউ কেউ কিনে রাখছেন। আমরা বলি এটা সরাসরি হসপিটালে দেয়ার জন্যে।”

এসব সুরক্ষা সামগ্রীর ইচ্ছেমত দামও রাখা হচ্ছে। বাজার ঘুরলে দেখা যাচ্ছে একসময় একবার ব্যবহারযোগ্য যে মাস্ক ও গ্লাভস ৫ টাকায় বিক্রি হতো এখন তার দাম অন্তত চারগুণ। অনলাইন, ফেসবুকে ও খুচরা বিক্রির দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে অন্তত দ্বিগুণ দামে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here