পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়বেন তুরিন আফরোজ

0
110

বাংলা খবর ডেস্ক: ভারতের হায়দরাবাদের সপ্তম নিজামের সম্পদ নিয়ে সাত দশক ধরে চলমান মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে জয় পায় ভারত। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এ মামলা সম্প্রতি নিষ্পত্তি করেছে লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস।

মামলায় ভারত জিতলেও সম্পত্তির মূল মালিক হায়দ্রাবাদের নওয়াব নাজাফ আলি খান রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। এরই মধ্যে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন নওয়াব।

গত ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আদালতের ওই রায়ে বলা হয়েছে, হায়দরাবাদের নিজামের সম্পদে একমাত্র অধিকার ভারতের। এর পূর্ণ মালিকানা নিজাম ওসমান আলি খানের বংশধরদের। এ সম্পত্তির ওপর পাকিস্তানের কোনো ধরনের অধিকার নেই।

ওই রায়ের পর হায়দরাবাদের নওয়াব নাজাফ আলি খান (সপ্তম নিজামের পৌত্র এবং প্রিন্স হাশাম জাহ বাহাদুরের পুত্র) দাবি নিজামের এই সম্পত্তি তার ১২০ বংশধরের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিতে হবে।

নওয়াব নাজাফ আলি খান তার দাবির পক্ষে আইনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন।

গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ খবর জানিয়েছেন তুরিন আফরোজ।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন…

‘আলহামদুলিল্লাহ! আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য একটা সুখবর। গতকাল (১২ নভেম্বর ২০১৯) ভারতের হায়দরাবাদের নওয়াব নাজাফ আলি খান সাহেব (ভারতের হায়দরাবাদের সপ্তম নিজামের পৌত্র এবং প্রিন্স হাশাম জাহ বাহাদুরের পুত্র) আমাকে তার ‘লিগ্যাল অ্যাডভাইজার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে, গর্বের বিষয় হলো, লন্ডনের হাইকোর্ট অব জাস্টিসে বহুল আলোচিত ‘পাকিস্তান বনাম ভারত’ মামলাটির শুনানিতে আমি নওয়াব সাহেবের পক্ষে আইনি লড়াই করবো। আরও বড় কথা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলা লড়বো।’

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময়ে হায়দরাবাদের সপ্তম নিজাম আশঙ্কা করেছিলেন, তার বিপুল সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। লন্ডনে পাকিস্তানের দূতের হাতে তখন তিনি ১০ লাখ পাউন্ড নগদ দিয়েছিলেন। যা ওই দূত লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখেন। সেই অর্থই এখন সুদে-আসলে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর লন্ডনের ওই ব্যাংকে নিজামের গচ্ছিত অর্থ পাকিস্তানকে দেয়ার দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ আদালতে আবেদন করে পাকিস্তান। এ ইস্যুতে মামলা করে হায়দরাবাদের নিজামের পরিবার।

১৯৪৮ সালে নিজামদের রাজ্য দখল করে ভারত সরকার। পরবর্তীকালে নিজামদের সঙ্গে বন্ধুত্বও স্থাপন করে তারা। এখন আইনি লড়াইয়ে তাদেরই পক্ষে দাঁড়ায় দিল্লি।

নিজামের দুই উত্তরসূরি মোকাররম ঝাহ (হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম) ও তার ছোট ভাই মোফাখমও ভারতের সঙ্গে হাত মেলান। এরপরই তারা দাবি করেন যে এই সম্পত্তি তাদের। পাল্টা দাবি জানিয়ে পাকিস্তান বলে, ন্যায়ত এ সম্পত্তি তাদের। বর্তমানে এ বিপুল অর্থ রক্ষিত আছে লন্ডনের ন্যাশনাল ওয়েস্ট মিনস্টার ব্যাংকে।

লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক মার্কাস স্মিথ রায়ে বলেছেন, সপ্তম নিজাম ওই সম্পত্তির অধিকারী। ফলে ভারত সরকার এবং যুবরাজ এ সম্পদের অধিকারী।

তিনি আরও জানান, কোনোভাবেই পাকিস্তান ওই সম্পত্তির দাবিদার হতে পারে না। পাকিস্তান সম্পদের সমর্থনে কোনো তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করতে পারেনি। দুই যুবরাজ এবং ভারতের অধিকার রয়েছে এ অর্থ গ্রহণ করার।

ওই রায়ের পর নিজামের এই নাতি নাজফ আলি খান বলেন, ‘আমরা বিচারপতি মার্কাস স্মিথের রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরিবার দীর্ঘকাল এই রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।’

এর একদিন পরই নাজাফ আলি খান ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘নিজামের ওই অর্থ তার ১২০ বংশধরের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।’ আর নিজামের ওই বংশধররা এই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তাকে পুরো দায়িত্ব দিয়েছে। কেননা তিনি এখন ‘নিজাম ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

নাজাফ আলি খান আরও বলেন, ‘শুধু তারা দুজনেই- প্রিন্স মোকাররম ঝাহ (হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম) ও তার ছোট ভাই মোফাখম এই সম্পত্তি নিতে পারে না। তারা পরিবারের সঙ্গে বসে এর সুরাহা করবে।‘কিন্তু তারা যদি সকলকে সম্পত্তির ভাগ দিতে না চায় তাহলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here