বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে প্রতিদিন। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। দৈনিক দুই হাজারের নিচে নামছেই না আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮১ জনে। এই অবস্থায় ২রা জুন প্রকাশিত এক রিপোর্টে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশিয়াস ডিজিজ এনালাইসিস বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কত জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জুন মাসের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি কী হতে পারে তার একটি চিত্র উপস্থাপন করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত চার সপ্তাহে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই হিসাবে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ২৬ হাজার ৫৬ জন।
কীভাবে এই সংক্রমণ ঘটেছে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রিপোর্ট প্রকাশের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্তের তথ্য রিপোর্ট করা হয়েছে ৪৯,৫৩৪। ওই দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৮১ জন। মারা গেছেন ২২ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৭২। তবে বলা হয়েছে, এই সংখ্যা প্রতিদিন আপডেট করা হচ্ছে। এতে কি পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন তা নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যসেবায় কি কি প্রয়োজন তা প্রক্ষেপণে ব্যবহার করা হয়েছে গাণিতিক মডেলের টেকনিক। এতে একটি গ্রাফ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১০ম ব্যক্তির মৃত্যু থেকে এই গ্রাফ করা হয়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষিতে। এতে ৩ দিনকে ডাবলিং টাইম ধরা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, যদি বর্তমানে মৃতের সংখ্যা হয় ২০, তাহলে তিন দিনের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪০। ৬ দিনে মারা যাবে ৮০ জন। ৯ দিনে মারা যাবে ১৬০ জন। অর্থাৎ জ্যামিতিক হারে মারা যাবে। এতে বলা হয়েছে, হস্তক্ষেপ ব্যতীত বেশির ভাগ মহামারীতে এই ডাবলিং টাইমকে ৩ থেকে ৪ দিন ধরা হয়। এতে ট্রান্সমিশন মডেলিংয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন সেটাই এই মহামারীর অবস্থা বুঝাতে উত্তম সূচক। এতে বলা হয়, আমাদের হিসাবে একজন মানুষের মৃত্যু এটাই ইঙ্গিত করে যে, আরো ১০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন, যেখানে অন্য ৯৯ জন সুস্থ হবেন। এই পরিমাণ সংক্রমণ আগে ২১ দিনে ঘটতো। এর মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে ৫ দিন সময় নেয়। লক্ষণ প্রকাশ থেকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত ৪ দিন সময় ধরা হয়। মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে ১২ দিন সময় ধরা হয়। তিন দিনকে ডাবলিং টাইম ধরা হলে, ১৫ দিন আগে যদি ১০০ মানুষ আক্রান্ত হতেন, তাহলে ১২ দিন আগে ২০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন। ৯ দিন আগে ৪০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন। ৮০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন ৬ দিন আগে। ১৬০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন তিন দিন আগে। আর ৩২০০ মানুষ আক্রান্ত হবেন, যখন প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
রিপোর্টে বলা হয়, মহামারী শুরুর তারিখ ও বেসলাইন নির্ধারণ করতে একটি দেশের টাইম সিরিজ অব ডেথ প্রণয়নে ব্যবহার করা হয়েছে বয়সভিত্তিক এসইআইআর মডেল। ধরে নেয়া হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত শতকরা ১০০ ভাগ মৃত্যুকে রিপোর্ট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলো এবং তাতে মানুষের চলাচলে কী প্রভাব পড়ে তাও আমলে নেয়া হয়েছে। সংস্থাটির ভাষ্য হলো, আমাদের গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে দেখেছি যে, আমাদের এই ফর্মুলা বলে, গত ৪ সপ্তাহে মোট ৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, করোনার উপসর্গ এবং সামান্য লক্ষণযুক্ত সংক্রমণ পর্যবেক্ষণের সময় শনাক্ত করা জরুরি হয়ে ওঠেনি। ফলে শনাক্ত হয়েছে এমন রিপোর্টেড ঘটনার চেয়ে অনুমিত সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।
‘সিচুয়েশন রিপোর্ট ফর কোভিড-১৯: বাংলাদেশ, ২০২০-০৬-০২’- শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি পদক্ষেপ বাড়ানো হয় তাহলে ৩০ জুন নাগাদ তা নেমে দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১২,৭১৬ এ। তবে বর্তমান গৃহীত পদক্ষেপ যদি শতকরা ৫০ ভাগ শিথিল করা হয়, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জুন পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে ৯ লাখ ১১ হাজার ৬০। এতে আরো বলা হয়েছে, যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে ৩০শে জুনের মধ্যে করোনা রোগী চিকিৎসায় উচ্চ চাপযুক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ বেডের চাহিদা ২৩৮০ থেকে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৯,৮৪৮ এ। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আইসিইউ বেডের চাহিদা ৭১১ থেকে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫২৫৪টি। এসব বেডে চিকিৎসা দিতে থাকতে হবে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, যদি কোনো হস্তক্ষেপ করা না হয়, তাহলে যেসব রোগীকে উচ্চ চাপের অক্সিজেন সম্পন্ন চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে তাদের জন্য বর্তমানের বেডসংখ্যার চাহিদা ২৩৮০ থেকে ৩০শে জুনের মধ্যে দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৮৪৮। ওই রিপোর্টে আরো পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছে যে, যদি বর্তমান হারে সংক্রমণ ঘটে তবে আগামী চার সপ্তাহে আইসিইউ বেডের চাহিদা ৭১১ থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৫৪-তে দাঁড়াতে পারে। এই প্রক্ষেপণ এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, সমস্ত সংক্রমণের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫ ভাগকে উচ্চ চাপের অক্সিজেন সমৃদ্ধ চিকিৎসা এবং শতকরা ৩০ ভাগকে হাসপাতালে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তির মধ্যে ১০ দিনের বিলম্ব ঘটলেও এতে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।