বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল বিশ্ব:সমর্থনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬৫ চিকিৎসক

0
298

বাংলা খবর ডেস্ক:
পুলিশ হেফাজতে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদের যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন । পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদ শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তাও জোরদার করে প্রশাসন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, শিকাগো এবং স্যান ফ্র্যান্সিসকোতেও ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে নর্থ ক্যারোলিনায় ফ্লয়েডের জন্মস্থানে মানুষেরা তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেনেও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আন্দোলনকারীরা অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ হেফাজতে আদিবাসীদের মৃত্যুর বিচারের দাবি করেছেন। এছাড়া ইউরোপের দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনেও শনিবার বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যেও করোনা প্রকোপের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মেনে আন্দোলনকারীরা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন।

গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ হেফাজতে মারা যান জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। সেইদিনই পুলিশ তাকে আটক করেছিলো। এরপর হাঁটু দিয়ে জর্জের গলা চেপে ধরেন পুলিশ। এভাবে অন্তত আট মিনিট তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়।এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ডেরেক চাওভিনসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। পাশপাশি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়।

বিক্ষোভের সমর্থনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬৫ চিকিৎসক

ওদিকে মিনেপোলিসে পুলিশি নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬৫ জন আমেরিকান চিকিৎসক। পুলিশের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে দেওয়া এক বিবৃতিতে চিকিৎসকেরা আমেরিকার অভিবাসীদের সম-অধিকার, ব্যক্তি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার লক্ষ্যে সহনশীলতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। আমেরিকার ১৬টি স্টেটে কর্মরত প্রবাসী চিকিৎসকেরা এই যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

চিকিৎসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযান চলছে। আরও অনেক চিকিৎসক রয়েছেন, শিগগির তাঁদের কাছে পাব। কারণ, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় সবাই ক্ষুব্ধ।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আজকের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সৃষ্ট নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অবদান অনস্বীকার্য। সে আন্দোলনে অসংখ্য আফ্রিকান-আমেরিকানের রক্ত ঝরেছে, অশ্রুপাত হয়েছে। তাদের সেই ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারের বলেই আমরা আমেরিকায় অভিবাসনের সুযোগ পেয়েছি। নিজেদের আমেরিকান হিসেবে পরিচিত করার অধিকার পেয়েছি। তাই কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক যে আচরণ চলছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। শামিল হতে হবে চলমান গণ-আন্দোলনে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয় , ‘আমেরিকায় চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান চিকিৎসকেরা অত্যন্ত গর্বিত। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা মহামারি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সামনের সারিতে নিবেদিত, এমনকি আমাদের চিকিৎসকেরা প্রাণ দিতেও পিছপা হননি। আমরা জানি আমেরিকায় আমাদের এবং সব সংখ্যালঘুর আজ এই সম্মানজনক পরিস্থিতি উপভোগ করার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান আফ্রিকান-আমেরিকানদের। আমরা তাঁদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি এবং তাঁদের সংগ্রামের জন্য আজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দায়বদ্ধ। তাই আজকের আমাদের এই প্রতিবাদে নির্ভয়ে শামিল হওয়া একটি নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব বলে মনে করি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা নিজেরা দেখেছি আমেরিকাজুড়ে আজ সহিংসতা এবং ভাঙচুর চলছে। আমাদের কমিউনিটির অনেকের ব্যবসা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁরা পরিবার নিয়ে অসহনীয় বিপদের মধ্যে পড়েছেন। অকারণে মানুষ হত্যা, ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা, অসম্মান করা এবং শোষণ করা—এভাবে চলতে পারে না। আমরা আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সময় সংবিধানকে উন্নত রাখতে শপথ নিয়েছিলাম। তখন আমরা সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং নাগরিকদের সমান অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমরা যখন চিকিৎসক হয়েছিলাম তখনো মানুষকে যেকোনো ক্ষতি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার শপথ নিয়েছিলাম। এখন এই দুর্যোগে এটি প্রমাণ করার সময় এসেছে । বিভিন্ন রাজ্যে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব দেওয়ার অঙ্গীকারে আজ এই অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকান কমিউনিটির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে আরও অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান চিকিৎসক শিগগির একাত্মতা ঘোষণা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

স্বাক্ষরকারী ৬৫ চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন পেনসিলভানিয়ার জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফাতেমা আহমেদ, মনজুর আহমেদ, কাজী আলতাফ হুসাইন, ইবরুল চৌধুরী, আজাদ আহমেদ, নাহরীন আহমেদ ও মালিহা আহমেদ। নিউইয়র্কের আবুল কালাম আজাদ, মাহবুব আহমেদ, কামাল আহমেদ, মোহাম্মদ আলম, আশফাক হোসাইন, মাসুদুল হাসান, প্রতাপ দাস, জুন্নুন চৌধুরী, তানভীরা মুস্তাফা ইসলাম, ইউসুফ আল মামুন, নাহরীন মামুন, সাঈদা হোসাইন, নওশীন হাকিম, নাজমুল খান, নাসরিন খান ও মাসরুর খান। নিউজার্সির মাহবুব রহমান, ফিরোজ রহমান ও ফজলে নূর। ফ্লোরিডার বি এম আতিকুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ, মাহমুদুল হক, ইমতিয়াজ আহমেদ, বশির আহমেদ ও হাসান জামান। ক্যালিফোর্নিয়ার আবু নসর, রুবি হোসাইন, সালমা খান ও সুহেলা খান। নর্থ ক্যারোলাইনার আবুল ইমাম, দাবিরুদ্দিন হুমায়ুন, মালেক আহমেদ ও রিয়াজ চৌধুরী। মেরিল্যান্ডের হালিদা হানুম আক্তার, আবদুল্লাহ হেল বাকী ও রফিক আহমেদ। ডেলাওয়ারের আশিক আনসার ও নুরুন বেগম। জর্জিয়ার মহম্মদ আলী মানিক, খাজা আহমেদ ও সায়মা খান। কেনটাকির আয়েশা শিকদার, ইয়াহিয়া মান্নান ও মুশতাক আহমেদ। নেভাদার চৌধুরী হাফিজ আহসান ও সেলিনা পারভীন। টেক্সাসের নওশীন জামাল ও বাসেত খান। মিশিগানের মহম্মদ হোসাইন ও মোতাহার আহমেদ। ম্যাসাচুসেটসের ইসমত হাকিম। কানেকটিকাটের গোলাম রাসূল গাজী ও আদিবা গীতি। ওহাইওর জামিল আহমেদ। নিউ মেক্সিকোর ফারিনাজ খান। লুইজিয়ানার দেওয়ান মজিদ এবং ইন্ডিয়ানার তাসবিরুল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here