‘অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নেই’

0
118

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম:

বাজেট প্রণয়নে দুটো বিষয় অবশ্যই থাকতে হবে। এক উচ্চাভিলাষ এবং অন্যটা বস্তুনিষ্ঠতা। এবারের বাজেট প্রস্তাবে উচ্চাভিলাষ যথেষ্ট মাত্রায় থাকলেও বস্তুনিষ্ঠতা সুস্পষ্ট নয়।

এবারের বাজেটে অবাস্তব জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ শতাংশ ধরা হলে বাস্তবসম্মত হতো।

করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। দেশের অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা অর্জন কখনোই সম্ভব নয় বলে অর্থনীতির সূত্র বলে। এ অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রস্তাবের সব সাজানো হয়েছে। এতে বাজেটে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ সংগ্রহে যে সূত্র আঁকা হয়েছে, তাও আমার মতে সঠিক মনে হয়নি।

বর্তমানে পুঁজিবাজার মৃতপ্রায়। সরকার যদি ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভাব কমে যাবে। এবারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এতে করোনার কারণে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মের কোনো উপায় রাখা হয়নি। শিল্প খাত বাঁচাতেও তেমন কিছু দেখছি না। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ আগেও ছিল। এবারও দেওয়া হয়েছে। অতীতে এটাতে খুব বেশি লাভ দেখা যায় না। তবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমবে। করমুক্ত সর্বনিম্ন হার এবং করপোরেট করহার কমানোর উদ্যোগ ভালো হয়েছে।

প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো এখন নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। এ ধারা থেকে সরে আসতে হবে। জাতীয় বাজেটের আকার বাস্তবসম্মত হতে হবে। তাহলে বাজেটের ব্যয় জোগাড় সহজ হবে।

কয়েক বছর থেকে অবাস্তব বাজেটের আকার নির্ধারণ করে অবাস্তব রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না। এই অবাস্তব হিসাবের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর পরিণতি হিসেবে অর্থবছরের শেষ সময়ে সব কাটছাঁট করতে হয়েছে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here