মাত্র ৩৪ বছরেই শেষ হয়ে যাওয়া সুশান্তের জীবনকাহিনীও কম অসাধারণ নয়

0
125

বাংলা খবর ডেস্ক:
রবিবার নিজের বাড়িতে বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। কোনও সুইসাইড নোট এখনও মেলেনি। তবে নিজের শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মাকে নিয়ে লেখা এক মর্মভেদী পোস্ট এবং দিন কয়েক আগে তাঁর প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিবের ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পর সুশান্তের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট হয়ত তাঁর মৃত্যুরহস্যে কোনও আলোকপাত করতে পারে বলে মনে করছে মুম্বই পুলিশ। পড়াশোনা, নাচ, অভিনয়ে সমান পারদর্শী, মাত্র ৩৪ বছরেই শেষ হয়ে যাওয়া সুশান্তের জীবনকাহিনীও কম অসাধারণ নয়।
বিহারের পাটনায় ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম সুশান্তের। পৈতৃক বাড়ি পূর্ণিয়া জেলায়। সুশান্তের বোন মিতু রাজ্যস্তরের ক্রিকেটার। ২০০২–এ মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছিলেন সুশান্ত। তারপরই তাঁর পরিবার পাটনা থেকে দিল্লি চলে যায়। সেখানেই স্কুলজীবন শেষে দিল্লি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হন তিনি। পড়াশোনায় তুখোড় সুশান্ত ভৌতবিজ্ঞানে ন্যাশনাল অলিম্পিয়াড জিতেছিলেন। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ মাইনস্‌ মিলিয়ে মোট ইঞ্জিনিয়ারিং–এ মোট ১১টি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ই নৃত্য পরিচালক শ্যমক ডাভারের দলে যোগ দেওয়ার পর নাচ আর অভিনয়ের প্রতি তাঁর অদম্য আকর্ষণ গড়ে ওঠে। তার ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ না করেননি সুশান্ত। নাচের দলের কয়েকজন বন্ধুদের দেখে ব্যারি জনস্‌–এর নাটকের ক্লাসে যোগ দেন। পরে সুশান্ত অনেক সাক্ষাৎকারেই স্বীকার করেছিলেন নাটকের স্কুলে যাওয়ার পরই অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল তাঁর মনে।
২০০৫ সালে ৫১তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্যমক ডাভার ডান্স ট্রুপের ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সারের দলের অন্যতম ছিলেন সুশান্ত। ২০০৬–এ অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েল্থ গেমসের অনুষ্ঠানেও নাচের দলে ছিলেন তিনি। ফিরে এসে ইঞ্জিনিয়ারিং–এর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মুম্বই গিয়ে নাদিরা বব্বরের নাটকের দলে যোগ দেন। আড়াই বছরের মধ্যেই নেস্‌লে মাঞ্চের বিজ্ঞাপনের সুবাদে দেশে জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন সুশান্ত। সেখান থেকেই তাঁকে দেখে ২০০৮–এ ‘‌কিস্‌ দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’‌ ধারাবাহিকে সুশান্তকে প্রীত জুনেজার চরিত্রে নিয়েছিলেন মেগা কুইন একতা কাপুর। কিন্তু ওই চরিত্র ছিল ছোট এবং কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তবে সুশান্তের জনপ্রিয়তা এতে আরও বেড়েছিল। যার জেরে একতা কাপুর ২০০৯–এ তাঁর আরেকটি ধারাবাহিক ‘‌পবিত্র রিস্তা’‌–য় নায়কের ভূমিকায় নেন সুশান্তকে। অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে জুটিতে সুশান্তের এই ধারাবাহিক তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। তিনটি টিভি পুরস্কারে জেতেন তিনি। এর মধ্যেই কয়েকটি ডান্স রিয়েলিটি শো–ও করেছিলেন সুশান্ত। আর এই ধারাবাহিক থেকেই বলিউডে পা রাখেন সুশান্ত তাঁর প্রথম ছবি ‘‌কাই পো চে’‌–তে।
চেতন ভগতের বই ‘দ্য ‌থ্রি মিসটেকস্‌ অফ মাই লাইফ’‌ অবলম্বনে তৈরি ২০১৩–য় মুক্তি পাওয়া ‘‌কাই পো চে’‌–তে বলিউডের আরেক নতুন দক্ষ নায়ক রাজকুমার রাও এবং অমিত সাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সুশান্ত। প্রথম ছবি থেকেই নিজের জাত চিনিয়ে দেন তিনি। এরপর পরপর আমির–অনুষ্কা অভিনীত ‘‌পিকে’‌–তে সহ অভিনেতা, ‘‌ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সি’, ‘‌শুদ্ধ দেশি রোমান্স’‌–এ নায়ক‌, আর ২০১৬–য় ‘‌এমএস ধনি, দ্য আনটোল্ড স্টোরি’‌–তে ধোনির ভূমিকায় অভিনয় সুশান্তকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছিয়ে দেয় প্রায় উল্কার গতিতে। ২০১৭–এ জন্মান্তরবাদ নিয়ে ছবি ‘‌রবতা’ এবং ২০১৮ সালে হিমালয়ের সুনামির পটভূমিকায় তৈরি প্রেমকাহিনী ‘‌কেদারনাথ’ সেভাবে সফল না হলেও ২০১৯–এ ‘‌ছিছোড়ে’‌–র বিশাল সাফল্য তাঁকে ফের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠিয়ে দেয়।
নিজের ব্যক্তিগত জীবন সেভাবে কখনও ‌সামনে না আনলেও ‘‌পবিত্র রিস্তা’‌–য় তাঁর সহ অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে সুশান্তের প্রেমকাহিনী প্রায় বলিউড এবং টিভি জগতে আলোচিত ছিল। পরে তা ভেঙে যায়। এরপর বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর নাম জড়ালেও সেব্যাপারে কখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি অভিনেতা।
‘‌দিল বেচারা’ নামে একটি ছবিতে নায়কের ভূমিকায় সই করেছিলেন সুশান্ত। এছাড়া চাণক্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এপিজে আবদুল কালাম সহ ১২জন বিখ্যাত ভারতীয়ের জীবন–নির্ভর ছবিতে তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল। লকডাউনের জন্য শুটিং বন্ধ থাকায় এই ছবিগুলির অনেকগুলিরই শুটিং বন্ধ ছিল। ফলে হাতে কাজ না থাকার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সুশান্তের কোনও কারণ ছিল না বলেই মনে করছে পুলিশ। তাহলে কেন তিনি আত্মঘাতী হলেন সেটাই তদন্ত করে দেখছে তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here