‘সুইসাইড ইজ় নট দ্য সলিউশন’ বলে আত্মহত্যাই করলেন সুশান্ত!

0
162

বাংলা খবর ডেস্ক:
আকাশের তারা দেখতে ভালবাসতেন। রিসার্চের জন্য বাড়িতেই বসিয়েছিলেন এক ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সিস্টেম আর এক পেল্লায় টেলিস্কোপ। সে সব পড়ে রইল যথাস্থানে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ফুরিয়ে গেল অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জীবন। রবিবার দুপুরে বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ। সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে কিছু প্রেসক্রিপশন। অনুমান করা হচ্ছে, অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। দিন কয়েক আগেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের। দুটো মৃত্যুর মধ্যে কি আদৌ যোগসূত্র রয়েছে? বলিউডের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই অভিনেতার চরম পথ বেছে নেওয়ার কারণ কি অবসাদ? মুম্বই পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার সম্ভাবনাই জোরালো। তবে আজ তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ জানা যাবে। পটনা থেকে তাঁর পরিবার মুম্বই পৌঁছলে সোমবার অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।

‘সুইসাইড ইজ় নট দ্য সলিউশন’… বড় পর্দায় তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ছিছোরে’র এই সংলাপটি যেন ফিরে আসছিল এ দিন। শনিবার রাতেও ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন সুশান্তের বাবা। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মীদের প্রায় কেউই আঁচ পাননি, বিগত কয়েক মাস ধরে অবসাদের সঙ্গে লড়াই এত কঠিন হয়ে গিয়েছে সুশান্তের। একতা কপূরের শেয়ার করা স্ক্রিনশটে উঠে এসেছে, এক সপ্তাহ আগেও কাজ নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। এ বছর কোনও নতুন ছবিতে সই করেননি অভিনেতা। তবে অফার কম ছিল না তাঁর হাতে, বিশেষ করে শেষ ছবি ‘ছিছোরে’ হিট হওয়ার পরে। মাসকয়েক আগে ভাড়া নেওয়া নতুন ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সুশান্ত, মাসিক ভাড়া ছিল ৪.৫১ লক্ষ টাকা। লকডাউনে কখনও এক্সারসাইজ়, কখনও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের নতুন কোডিং শেখা, আবার কখনও নিজের প্রিয় টেলিস্কোপে চোখ রাখার নানা পোস্টে ভরে ছিল তাঁর ইনস্টাগ্রাম। তবে গত ৩ জুনের পর থেকে আর কোনও পোস্ট করেননি সুশান্ত। সেই পোস্ট ছিল তাঁর মাকে নিয়ে। ২০০২ সালে মাকে হারানোর পরে জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল তাঁর।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই মেধাবী ছাত্রের কেরিয়ারের মোড় ঘুরেছিল শামক দাভরের ডান্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তির পরে। ২০০৮ সালে ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকে পার্শ্বচরিত্র দিয়ে অভিনয়ে পথচলা শুরু। এর পরেই একতা কপূরের চোখে পড়ার ফলে ‘পবিত্র রিশতা’র হিট জার্নি। নায়িকা অঙ্কিতা লোখণ্ডের সঙ্গে প্রেমের শুরুও সেখান থেকেই। এর পরে কয়েকটি ডান্স রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ ও ২০১৩য় প্রথম ছবি ‘কাই পো চে’র মুক্তি। আর পিছনে ফিরতে হয়নি সুশান্তকে।

‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘পিকে’-র পরে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ধুতি পরিয়ে বাঙালি ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সীরূপে হাজির করলেন সুশান্তকে। তবে যে চরিত্রের জন্য মনে থেকে যাবেন সুশান্ত, তা এম এস ধোনি। খড়গপুর আইআইটি-র মাঠে তাঁর ‘মাহি’ হয়ে ওঠার অক্লান্ত পরিশ্রম মনে করছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কিরণ মোরে। প্র্যাকটিসে দেরি করে আসার জন্য তাঁর কাছে বকুনিও খেতেন অভিনেতা। ‘রাবতা’র শুটিং চলাকালীন কৃতী শ্যাননের সঙ্গে জড়িয়ে যায় সুশান্তের নাম। তত দিনে ভেঙে গিয়েছে অঙ্কিতার সঙ্গে পার্টনারশিপ। সম্প্রতি সম্পর্কে ছিলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে। তবে সুশান্তের মৃত্যুতে এঁদের কেউই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট করেননি। ‘রাবতা’ তেমন না চললেও ‘কেদারনাথ’-এ ফের ঘুরে দাঁড়ালেন সুশান্ত। ক্লাইম্যাক্সে বন্যার দৃশ্যে সুশান্তের পরের পর রিটেক দেওয়ার কথা উঠে এল ছবির ডিওপি তুষারকান্তি রায়ের কথায়, ‘‘জলের তোড়ে ওর হাতটা ধরে রেখেছিলাম। যদি আবার হাতটা ধরতে পারতাম…’’

শেষ দিকে তাঁর হাত না ধরতে পারার কথা উঠে এসেছে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের শোকবার্তাতেও। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সকলেই। কর্ণ জোহরের টুইটে স্পষ্ট, সুশান্তের ডিপ্রেশনের আঁচ তিনি আগেই পেয়েছিলেন। সুশান্তের মৃত্যুতে যখন সকলে অবসাদ নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, তার সমালোচনা করে সেলেব্রিটি হেয়ারস্টাইলিস্ট স্বপ্না ভবনানি লিখেছেন, ‘‘যখন সুশান্ত খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেউ ওর হাত ধরতে এগিয়ে আসেনি।’’ সমালোচকের প্রশংসা কুড়োলেও ‘সোনচিড়িয়া’ ব্যবসা করতে পারেনি। তবে ‘ছিছোরে’র সাফল্য ফিরিয়েছিল লাইমলাইট।

সুশান্তের জীবনে এই বাঙালি বান্ধবী কে?

রিয়া চক্রবর্তী। বেঙ্গালুরুতে বেড়ে ওঠা বাঙালি মেয়ে। সুশান্তের জীবনে যিনি এসেছিলেন শেষ বসন্ত হয়ে। সুশান্তের মৃত্যুর পর আজ তিনি কোথায়?

মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেছেন। ফোন বন্ধ। অথচ তাঁর ইনস্টাগ্রাম বলছে, সকালেও স্যাসি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন প্রোফাইলে। কালকেও পিৎজা বানিয়েছেন মায়ের সঙ্গে। প্রেমিকের জীবনে যে ঝড় উঠেছিল তা কি এক বারের জন্যও টের পাননি রিয়া? নাকি সম্পর্কটাই আর ছিল না দু’জনের মধ্যে?

সুশান্তের জন্মদিনে এই ছবিই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন রিয়া।

কে এই রিয়া চক্রবর্তী? কী তাঁর পরিচয়? কেন সুশান্তের মৃত্যুতে বারে বারে উঠে আসছে বছর ২৭-এর এই মেয়ের নাম?

পেশায় অভিনেত্রী রিয়ার বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। সৈনিক পরিবারে মানুষ। তাই রিয়ার ছোটবেলা কেটেছে ভারতের নানা প্রান্তে। পড়াশোনা করেছেন হরিয়ানার আম্বালার আর্মি পাবলিক স্কুলে। অভিনয়ে আসার ইচ্ছা ছিল ছোট থেকেই। ২০০৯-এ এমটিভি আয়োজিত এক রিয়্যালিটি শো-তে বিজয়ী হয়েই বিনোদন জগতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এর পর তেলুগু ছবি দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু।

বলি ব্রেক মেলে ২০১৩-তে। ছবির নাম ‘মেরে ড্যাড কি মারুতি’। ধীরে ধীরে ‘সোনালি কেবল’, ‘দোবারা’ সমেত বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন রিয়া। এই সময়েই মহেশ ভট্টর সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন ছড়ায় বাজারে।

অসমবয়সী এই প্রেম নিয়ে কম কথা হয়নি বলিপাড়ায়। রিয়া বলেছিলেন, ‘‘উনি আমার শিক্ষক। ওঁকে আমি শ্রদ্ধা করি।’’

দু’জনে সে ভাবে একসঙ্গে কাজ না করলেও সুশান্তের সঙ্গে রিয়ার পরিচয় কী করে হল? কী ভাবেই বা সেই পরিচয় পরিণতি পেল প্রেমে? বলিউড তা জানে না। দু’জনের কেউই আগে বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। উঠে এসেছিলেন সাধারণ পরিবার থেকে। এমনও হতে পারে, তাই হয়তো অন্য কোনও সমীকরণ কাজ করেছিল দু’জনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

‘কেদারনাথ’ মুক্তির পর যখন সারা আর সুশান্তের প্রেম নিয়ে খুব গুঞ্জন বাজারে ঠিক সেই সময়েই সবাইকে অবাক করে গত বছরের জুনে রিয়ার সঙ্গে লাদাখ ঘুরতে যান সুশান্ত। যদিও লাদাখ থেকে একসঙ্গে ছবি তাঁরা দেননি। প্রথমে ফ্যানেরা অতটা ঠাওর করতে না পারলেও দু’জনের একসঙ্গে লাদাখ যাওয়াটা যে নেহাতই কাকতালীয় নয়, তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও।


কখনও রেস্তরাঁ, আবার কখনও বা জিমে…।সুশান্ত-রিয়ার প্রেম নিয়ে তখন তোলপাড় হয়েছিল বলিউড।

তার ঠিক কয়েক মাস পর, অক্টোবরের মাঝামাঝি চুপিচুপি প্যারিস পাড়ি দিয়েছিলেন রিয়া-সুশান্ত। সেলেব মানুষ। খবর চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। তার পরেই জোর গুঞ্জন। ও দিকে রিয়ার সঙ্গে আবার মহেশ ভট্টর নাকি সম্পর্ক রয়েছে, বলাবলি করতে শুরু করেন অনেকেই। সে যা-ই হোক, হ্যাঁ-না কিছুই বলেননি সুশান্ত-রিয়া। কথাতেই তো আছে, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। এর পরে কখনও রেস্তরাঁ, আবার কখনও বা জিমে… একসঙ্গে দু’জনেই ধরা পড়তে লাগলেন পাপারাৎজির লেন্সে। মুখে ‘উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস’ বলে কাটিয়ে দিলেও সুশান্ত-রিয়ার প্রেম নিয়ে তখন তোলপাড় বলিউড।

ওদের লাভ স্টোরি যেন মান্যতা পায় গত ২১ জানুয়ারি। সুশান্তের ৩৪ বছরের জন্মদিনে। তামাম দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রায় খোলাখুলি সুশান্তের সঙ্গে প্রেমকে প্রকাশ্যে আনেন রিয়া। ইনস্টাতে দু’জনের আদরের ছবি পোস্ট করে রিয়া লেখেন, ‘মাই ক্রেজি ডায়মন্ড’। অতঃপর সম্পর্কে শিলমোহর। যদিও রিয়া বলেছিলেন, ‘‘ধুস, আমরা তো বন্ধুই। খুব ভাল বন্ধু।’’

এরই মাঝে খবর আসে, সম্পর্কে নাকি চিড় ধরেছে ওঁদের। একসঙ্গে আর নেই তাঁরা। শোনা যাচ্ছিল, সুশান্তের পর পর কয়েকটা ফ্লপ নাকি এর পিছনে দায়ী।

তবে সে সমস্তকে মিথ্যে প্রমাণ করে ১১ মার্চ মুম্বইয়ের এক জিমের সামনে দু’জনে একসঙ্গে ধরা দেন ক্যামেরার লেন্সে। জনসমক্ষে রিয়া আর সুশান্তকে ওই শেষ বারই দেখা গিয়েছিল।

এর পর শুরু হয়ে যায় লকডাউন। ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তারকারাও। সুশান্ত আর রিয়ার প্রেমেও কি অশনি সঙ্কেত হয়ে দাঁড়ায় এই লকডাউন?

বান্দ্রার ফ্ল্যাটে একা থাকতেন সুশান্ত। মা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। বাবা রয়েছেন দেশের বাড়িতে। দিন দিন যে হতাশার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তার বিন্দুমাত্র আঁচও কেন পেতে দেননি রিয়াকে?

কী বা হল ১১ মার্চের পর? কথা বলাও কি বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওঁরা দু’জন? উঠে আসছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন? মহিলা ম্যানেজারের আত্মহত্যার চার দিন পর সুশান্তের মৃত্যু, ‘বয়ফ্রেন্ড’-এর মৃত্যুর পরেও রিয়ার হাসিখুশি ইনস্টা পোস্ট কোন রহস্যের ইঙ্গিত?

ধরে নেওয়া যাক, বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। যদি তাই হয়, কারণ কী? আর সে কারণেই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সুশান্ত? প্রশ্ন অনেক। উত্তর জানা নেই। চারি দিকে জট পাকিয়ে যাওয়া এক থমথমে রহস্য।

মাত্র ৩৪ বছরেই জীবন থেমে গেল সুশান্তের। তাঁর জীবনের শেষ ভালবাসা হয়ে রয়ে গেলেন বাঙালি মেয়ে রিয়া চক্রবর্তী!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here