লকডাউনেও অমলিন ফুটবল জাদু

0
260
অপ্রতিরোধ্য: লা লিগায় মায়োরকার রক্ষণ ভেঙে এগিয়ে চলেছেন মেসি। গোল করলেন, করালেনও। টুইটার

বাংলা খবর ডেস্ক:
আঠারো বছর আগে স্পেনে পা দিয়েই শুনেছিলাম, মাদ্রিদ শহর নাকি রাতে ঘুমোয় না। সপ্তাহের শেষে তো রীতিমতো উৎসব আবহ তৈরি হয়। এর মধ্যে যদি রিয়ালের ম্যাচ থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। রেস্তরাঁ, পাব, কোথাও বসার জায়গা পাওয়া যায় না। কয়েক জন এক জায়গায় জড়ো হলেই শুরু হয়ে যায় ফুটবল-চর্চা। লিয়োনেল মেসি বনাম সি আর সেভেন দ্বৈরথ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্পেনীয় ফুটবলের আকর্ষণ কমে গিয়েছে বলে আক্ষেপ করতে শুনেছি মাস ছ’য়েক আগেও।

ভয়ঙ্কর মারণ ভাইরাসের আক্রমণে স্পেনে সংস্কৃতিটাই যেন বদলে গিয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা আগে লা লিগায় মায়োরকার বিরুদ্ধে মেসির জাদুতে বার্সেলোনার দুরন্ত জয়। রবিবার ঘরের মাঠে এইবারকে ৩-১ হারাল রিয়াল। স্পেনীয় ফুটবলের দুই সেরা শক্তির জয় এই দমবন্ধকর পরিবেশে এক ঝলক মুক্ত বাতাসের মতো।

স্পেনে এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা ভাল। কিন্তু সাধারণ মানুষ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না। অর্থনীতির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে টিভির চ্যানেল সাবসক্রাইব করার মতো ক্ষমতা অনেকের নেই। তাই রবিবার মাদ্রিদে খেলা হলেও বোঝার উপায় ছিল না। কারণ, রেস্তরাঁ-পাব খুললেও তাতে বেশি লোককে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হচ্ছে। রাস্তাতেও খুব বেশি লোক নেই। আমিও কাজ করতে করতেই ম্যাচের ফলের দিকে নজর রাখছিলাম। ৪ মিনিটে টোনি খোস গোল করে এগিয়ে দেন রিয়ালকে। ৩০ মিনিটে ২-০ করেন সের্খিয়ো র‌্যামোস। ৩৭ মিনিটে ৩-০ করেন মার্সেলো। ৬০ মিনিটে ব্যবধান কমান এইবারের বিগাস।

শনিবার রাতে বার্সেলোনা বনাম মায়োরকা ম্যাচও অফিসে বসে দেখেছিলাম। রিয়ালের অনেক সমর্থকই সাধারণত বার্সার খেলা দেখেন না। শুধু ম্যাচের ফলের দিকে নজর রাখেন। মেসিরা হারলে তো রীতিমতো উৎসব শুরু করে দেন। কিন্তু করোনার জেরে ছবিটাই বদলে গিয়েছে। রিয়ালের সমর্থকেরাও শনিবার অধীর আগ্রহে মেসিদের ম্যাচ দেখেছেন। আমি নিশ্চিত, রবিবার বার্সেলোনার সমর্থকদেরও একই রকম উৎসাহ ছিল রিয়ালকে নিয়ে। ফুটবলের হাত ধরেই তো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন স্পেনের মানুষ।

মাদ্রিদে থাকতে থাকতে আমিও রিয়ালের সমর্থক হয়ে গিয়েছি। তবে উগ্র নই। তাই মেসি আমার প্রিয় ফুটবলার। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মতো আমিও কিছুটা আশঙ্কায় ভুগছিলাম আর্জেন্টিনীয় অধিনায়ককে নিয়ে। প্রথমত, সেই মার্চ মাস থেকে খেলাধুলো বন্ধ স্পেনে। তার উপরে কয়েক দিন ধরেই মায়োরকার বিরুদ্ধে মেসির খেলা নিয়ে জল্পনা চলছিল। আগের দিনই এসি মিলানের বিরুদ্ধে রোনাল্ডো পেনাল্টি নষ্ট করেছেন। মেসি যদি শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারেন তা হলে কী হবে?

মায়োরকার বিরুদ্ধে বার্সেলোনার প্রথম একাদশে মেসির নাম দেখেই মনটা খুশিতে ভরে উঠেছিল। তবুও মনের মধ্যে সংশয় ছিল, এত দিন পরে মাঠে নেমে বার্সা তারকাকে কি আবার আগের মতো খেলতে দেখা যাবে? তার উপরে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচ। কয়েক দিন আগে স্পেনের জাতীয় দলের কোচ লুইস এনরিকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ফাঁকা মাঠে ম্যাচ অনেকটা নাইট ক্লাবে স্ত্রী বা বান্ধবীর বদলে বোনের সঙ্গে নাচতে যাওয়ার মতো।’’

খেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাবতীয় শঙ্কা দূর হয়ে গেল। মেসির নেতৃত্বেই আক্রমণের ঝড় তুলতে শুরু করল বার্সা। ৬৫ সেকেন্ডে প্রথম গোল করেন আর্তুরো ভিদাল। আর মেসি যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। ‘ক্লাস’ যে চিরকালীন, তা ফের প্রমাণিত। মেসির জাদুতেই ভেঙে পড়ে মায়োরকার যাবতীয় প্রতিরোধ। ৩৭ মিনিটে মার্টিন ব্রেথওয়েটকে দিয়ে গোল করান তিনি। ৭৯ মিনিটে জর্দি আলবার গোলও মেসির পাস থেকে। সংযুক্ত সময়ে নিজে গোল করেন আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি। বার্সেলোনার ৪-০ জয়ের ম্যাচে মেসি নিজে একটি গোল করলেও দুটি করালেন সতীর্থদের দিয়ে। প্রতিকূলতা কিংবদন্তিদের কখনও দমিয়ে রাখতে পারে না। মেসি তাই সব অবস্থাতেই অপ্রতিরোধ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here