বাংলা খবর ডেস্ক:
ছোটপর্দায় প্রথম মুখ দেখান। ধারাবাহিকে রাতারাতি সাফল্য। তার পরেই পা রাখেন বলিউডে। সেখানেও প্রথমদিকটায় সাফল্যই পেয়েছিলেন। হঠাৎ সব বদলে গেল। আত্মহত্যা করলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। শেষ পর্যন্ত কী এমন হল, যে এই পথ বেছে নিলেন অভিনেতা? সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে মুম্বই পুলিশ। পেশাগত রেষারেষির কারণেই অবসাদে ভুগছিলেন কিনা সুশান্ত, খতিয়ে দেখা হবে তাও। জানালেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ।
গত রবিবার মুম্বইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানায় পুলিশ। সোমবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই তারকার মৃত্যুর কারণ নিয়ে জল্পনা চলছে। বলিউডের একাংশ প্রভাবশালীদের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বলিউডের একটি স্বজনপোষণকারী গোষ্ঠী সুশান্ত সিংকে কোণঠাসা করেছিল। ক্রমাগত কাজ হারিয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
এবার সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল সাইটে উঠে আসা এসব অভিযোগই খতিয়ে দেখবে পুলিশ। জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী। অনিল দেশমুখ টুইটারে লেখেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অভিনেতা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, পেশাগত দ্বন্দ্বের কারণে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। এই দিকটাও খতিয়ে দেখবে মুম্বই পুলিশ।’
সুশান্তের মৃত্যুকে ‘খুন’ বলে দাবি করলেন পরিচালক অভিনব কাশ্যপ:
ওদিকে সুশান্তের মৃত্যুকে ‘খুন’ বলে দাবি করলেন পরিচালক অভিনব কাশ্যপ। অনুরাগ কাশ্যপের ভাই। এই নিয়ে পুলিশি তদন্তের দাবিও তুললেন তিনি। সেই সঙ্গে তুলে ধরলেন নিজের হেনস্থার কথা। গত ১০ বছর ধরে বলিউডে কী কী সহ্য করেছেন তিনি, লিখলেন সেসব। আঙুল তুললেন সলমন খান এবং তাঁর পরিবারের দিকে। এও বলতে ছাড়লেন না, তাঁর কিছু হলে পুলিশ যেন আত্মহত্যা মনে না করে তদন্ত করে। বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে আত্মঘাতী হয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তার পর থেকে একে একে বলিউডের শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর দিকে আঙুল তুলেছেন অনেকেই। নেটিজেন থেকে শিল্পীদের একাংশের রোষের মুখে পড়েছেন করণ জোহর, যশ রাজ প্রোডাকশন, এমনকী আলিয়া ভাটও।
সুশান্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন অভিনব কাশ্যপ। সরকারের কাছে আবেদন করেন, যাতে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত হয়। লেখেন, ‘তোমার লড়াই চলবে। আমরা অনেকে যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছি, সুশান্তের আত্মহত্যা সেটাই তুলে ধরল। কী হলে একটা মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন? ওঁর মৃত্যু হিমশৈলের শিখরমাত্র। #মিটু আন্দোলনের মতোই। সুশান্তের মৃত্যু যশরাজ ফিল্মস ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার দিকেই আঙুল তুলে দিল। ওরাই হয়তো ওঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিল। পুলিশ সে বিষয়ে তদন্ত করুক’।
এর পরই নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন অভিনব। জানান, ‘দাবাং’–এর সেটে কীভাবে তাঁকে হেনস্থা করতেন আরবাজ খান। ‘দাবাং ২’–এর পরিচালনা করেননি, তার কারণও আরবাজ, তাঁর ভাই সোহেল এবং গোটা খান পরিবার। ক্রমাগত হেনস্থা করা হত তাঁকে। শাসানো হত। তাঁর কেরিয়ারটাই নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিলেন খান ভাইরা। মানেননি, তাই বেরিয়ে এসেছিলেন সেদিন।
সেই খেসারত গত ১০ বছর ধরে দিতে হয়েছে পরিচালককে। ‘দাবাং’–এর পর শ্রী অষ্টবিনায়ক ফিল্মস–র প্রযোজনায় একটি ছবিতে হাত দিয়েছিলেন অভিনব। সংস্থার প্রধান রাজ মেহতাকে ফোন করে হুমকি দেন খান ভাইরা। শেষ পর্যন্ত ছবি হাতছাড়া হয় পরিচালকের। হুমকি তাঁর কাছেও কম আসেনি। কখনও তাঁকে খুনের, কখনও পরিবারের সদস্যদের। এমনকী মহিলা সদস্যদের ধর্ষণের হুমকিও এসেছে। বিভিন্ন নম্বর থেকে। পরিচালকের কথায়, ‘বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালে থানায় যাই অভিযোগ দায়ের করতে। এফআইআর নেয়নি পুলিশ। অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে অভিযোগ নেয় শুধু। এর পরেও হুমকি আসতে থাকে। পুলিশ কখনওই ফোনে আড়ি পেতে সোহেলকে ধরতে পারেনি। এখনও আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে।’
২০১৭ সালেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পিছনেও খানভাইদেরই দায়ী করেছেন কাশ্যপ। জানিয়েছেন, ক্রমাগত হেনস্থার কারণে মানসিক সুস্থতা হারান তিনি। তারই প্রভাব পড়েছিল বিবাহিত জীবনে। তাঁর ছবি ‘বেশরম’–ও বাজারে চলতে দেয়নি খান পরিবার।
এবার বাবা সেলিম, তিন ছেলে সলমন, আরবাজ, সোহেলকে খোলা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি। এও বলেছেন, সুশান্ত যা করেছেন, তিনি করবে না। তাই তাঁর যদি কিছু হয়, তাহলে পুলিশ যেন খুনের তদন্তে নামে। ফেসবুকে লেখা তাঁর এই পোস্টই বিবৃতির কাজ করবে। ‘সুশান্ত এখন যেখানে আছে, হয়তো খুশি রয়েছে। কিন্তু ওঁর যা হল, আর কারও সঙ্গে হতে দেব না’, জানিয়ে দিলেন অভিনব কাশ্যপ।