‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ৭)

0
94

শাহজাহান সরদার:
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

(পর্ব- ৭)

পরদিন ঠিক সকাল সাড়ে ৯টায় মূসা সাহেবের মোহাম্মদপুরের বাসায় গিয়ে পৌঁছি। তিনি অপেক্ষা করছিলেন। যদিও আমি নাস্তা সেরে গিয়েছিলাম তবুও উপায় ছিল না। বললেন, আগে খাও। পরে কথা। পরোটা, মুরগির মাংস ভুনা, ভাজি, হালুয়া খেতেই হলো। এরপর চা এলো। মূসা সাহেব জানতে চাইলেন কী কথা। আমি তার কাছে ভয়ে ভয়ে প্রস্তাবটি তুলে ধরলাম। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। কথা নেই। আমি পড়লাম এক অস্থিরতার মধ্যে। মুখ খুলে সোজাসুজি কথা বলার লোক মূসা সাহেব। মৌনতা ভেঙ্গে প্রথমেই বললেন, সারওয়ারকে (সারওয়ার সাহেব) তো তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে। কেন সে থাকল না। আমি বললাম, সারওয়ার সাহেব আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে বাবুল সাহেব তার মতো করে বলেছে। সারওয়ার সাহেব না বললে তো আমি জিজ্ঞেস করতে পারি না। মূসা সাহেব বললেন তা ঠিক। আচ্ছা শোন, আমি যেতে পারি কিন্তু কথায় কথায় ওই ১২ তলায় ডেকে নেয়া যাবে না। আমি আমার মতো কাজ করব। আমি যোগ দিলে মালিক পক্ষ কেউ কথা বলতে চাইলে আমার সঙ্গে অফিসে এসে কথা বলতে হবে। ১২ তলা বলতে তিনি সেনাকল্যাণ ভবনে বাবুল সাহেবের যমুনা গ্র“পের অফিসকে বুঝিয়েছেন। আমি বললাম, আপনি রাজি থাকলে আমি এসব কথা বলে নেব। তবে প্রথম দিন তো যেতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে। তিনি রাজি হলেন। আমি বাবুল সাহেবকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি। তিনি বললেন, আমিই মূসা সাহেবের বাসায় আসব। তখন মূসা সাহেব জানান, ঠিক আছে আমিই যাব। ঠিক হলো। পরদিন ১১টায়। সকালে প্রেসক্লাব থেকে আমাকে নিয়ে যেতে হবে। কথা বলে ফিরে এলাম। পরদিন সকালে মূসা সাহেবকে নিয়ে গেলাম বাবুল সাহেবের অফিসে। এ সময় তার ছেলে শামীম ইসলামও ছিলেন। তিনি যুগান্তরের মালিকানা প্রতিষ্ঠান যমুনা মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এখন যমুনা টিভিরও একই পদে আছেন। বাবুল সাহেবই কথা শুরু করলেন। বললেন, মূসা সাহেব আপনি মুরব্বি মানুষ। আপনি আমার পত্রিকার দায়িত্ব নেন। আপনার মতোই চালাবেন। মূসা সাহেব বললেন, ঠিক আছে, কিন্তু সারওয়ার গেল কেন? বাবুল সাহেব উত্তর দিলেন। এমন সময় মূসা সাহেব বললেন, আমি আসতে পারি কিছু শর্ত আছে। সকালে ঘণ্টাখানেক থাকব। আর বিকালে এসে রাত ৮টা পর্যন্ত। আর শর্ত, সরদারকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে। আমি একা পুরো সামলাতে পারব না। সরদার মানে আমি। এবার আমি বেকায়দায়। ইত্তেফাকের চাকরি মানে নিরাপদ। যুগান্তর বের হওয়ার সময়ও সারওয়ার সাহেব একই কথা বলেছিলেন। আবার আমি সমস্যায় পড়লাম।

মূসা সাহেব তার যোগদানের শর্ত হিসেবে আমাকে সঙ্গে যাবার প্রস্তাবে বাবুল সাহেব বললেন, শাহজাহান ভাই এবার আপনাকে আসতে হবে। আমি কোন কথা শুনবো না। আপনাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। আসলে বাবুল সাহেবের সঙ্গে আমার দীর্ঘ পারিবারিক সম্পর্ক। বয়সে বড় হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাই আমি দূরেই থাকতে চেয়েছি। কিন্তু এবার আমি বেশ এড়াতে পারলাম না। দুজনের সামনা-সামনি কিছু বলাও সম্ভব নয়। বাবুল সাহেব একদিনও সময়ক্ষেপণ করতে চান না। অগত্যা আমাকে রাজি হতে হলো। তবে কয়েক দিন সময় দিতে হবে। কেননা ইত্তেফাকে এত বছরের চাকরি কয়েক দিন সময় না দিয়ে আসা কঠিন। মূসা সাহেব বললেন, সময় দেয়া যাবে না। জবাবে আমি বললাম, আপনি যোগদান করেন। আমার আসতে কমপক্ষে সপ্তাহখানেক লাগবে। কেন না মাত্র কয়েক দিন আগে আমি ইত্তেফাকের চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পেয়েছি। মঞ্জু সাহেবকে (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ভালভাবে বলে আসতে হবে। তিনি আমাকে তার পরিবারের সদস্যের মতো ভালবাসেন। এ-কথা বলার পর মূসা সাহেব আমাকে কয়েক দিন সময় দিতে রাজি হলেন। তবে তার যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত কথা হলো। একই দিনে তার সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলো। পরদিন তিনি সম্পাদক পদে যোগ দিলেন। যুগান্তরে সম্পাদক হয়ে মূসা সাহেবের যোগদানের আগে কিন্তু সাংবাদিক মহল এমনকি যুগান্তরের দু’একজন মধ্যম সারির সাংবাদিক ছাড়া অন্য কোনো সাংবাদিক কর্মচারী জানতেন না। সবাই আশ্চর্য হলেন। মূসা সাহেব কাজ শুরু করলেন। রোববার আমার যোগদান করতে হবে। বৃহস্পতিবার মূসা সাহেব ফোন করলেন। ইত্তেফাক থেকে বিদায় নেয়া আমার জন্য খুব কঠিন কাজ। কিন্তু বিদায় না নিয়ে তো আর আসা যাবে না। কারণ ইত্তেফাক আমাকে অনেক যশখ্যাতি এনে দিয়েছে। আর এখনও অনেকে শাহজাহান সরদার বলতে আমাকে ইত্তেফাকের শাহজাহান সরদার বুঝে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তার কাছ থেকে বিদায় নেয়া সত্যিই কঠিন। সারা রাত টেনশনে ঘুমাতে পারিনি। শুক্রবার সকালে উঠেই মঞ্জু সাহেবকে ফোন করে বাসায় গিয়ে দেখা করার অনুমতি চাই। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, চলে আসো। আমি গেলাম। অনেক কথা রাজনীতি, ইত্তেফাক প্রসঙ্গ ইত্যাদি। অবশেষে কথা তুললাম। ‘মঞ্জু ভাই’ আপনার কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই। তিনি কিছু বুঝলেন বলে মনে হলো না। বললেন, যাও, কাল দেখা হবে আবার। আমি তখন বললাম, আমি ইত্তেফাক থেকে চাকরি ছেড়ে যুগান্তরে যোগ দিতে চাই। তিনি এ কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। আমিই আবার কথা তুললাম, মঞ্জু ভাই আমি এখন চিফ রিপোর্টার আছি, যুগান্তরে উপ-সম্পাদক পদে যাচ্ছি। মূসা সাহেব সম্পাদক। তারপরই আমার অবস্থান। আপনি দোয়া করবেন। আমি সালাম করলাম। উনি কিছুই বললেন না, চেয়ে রইলেন। আমি চোখে পানি নিয়ে বের হয়ে আসি। ঠিক এ সময়ই মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মঞ্জু সাহেবের বাসায় প্রবেশ করছিলেন। বাসার লনে চোখ মুছতে মুছতেই তার সঙ্গে আমার দেখা। ২০০৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে অফিসে গিয়ে আমি পদত্যাগপত্র দাখিল করি। সেদিন ছিল সম্পাদকের সাথে রির্পোটারদের সাপ্তাহিক সভা। রির্পোটাররা সবাই উপস্থিত ছিলেন। আমি তাদেরসহ অন্যান্য সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বিদায় নিই। রিপোর্টাররা সম্পাদক মঞ্জু সাহেবের বৈঠকে যোগ দিতে চলে গেলেন। আর আমি ব্যক্তিগত কিছু কাগজপত্র নিয়ে সোজা বাসায় ফিরি।

পরদিন রোববার সকালে পূর্ব-কথামতো সেনাকল্যাণ ভবনে যাই। সেখান থেকে বাবুল সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন যুগান্তর অফিসে। মূসা সাহেব অপেক্ষা করছিলেন। ছোট একটা বৈঠক হলো। ১২ সেপ্টেম্বর যুগান্তরের উপ-সম্পাদক পদে যোগ দিলাম। মূসা সাহেব হলেন আমার সম্পাদক। বাবুল সাহেব কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। যাবার আগে যুগান্তর অফিসে চেয়ারম্যানের জন্য অর্থাৎ তার যে রুমটি সংরক্ষিত ছিল সেটিতে আমাকে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। বেশ বড় রুম। ইত্তেফাকে আমার বসার রুম ছিল না। অফিসের উন্মুক্ত চেয়ার-টেবিলে বসেছি। একটু বিব্রত হচ্ছিলাম। পরে অবশ্য রুমটি ছোট করে ও চেয়ার-টেবিল পাল্টে বসা শুরু করি। বাবুল সাহেবের বিদায়ের পর অফিসে উপস্থিত যারা ছিলেন সবার সঙ্গে পরিচিত হয়ে মূসা সাহেবের সঙ্গে বৈঠকে বসলাম। মূসা সাহেব বললেন, ‘বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমারে নিয়া আইলা এখন কীভাবে সামলাবা’। বিষয়টি হলো, সারওয়ার সাহেব চলে যাওয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন তার সঙ্গে চলে গেছেন। আরও অনেকে চলে যাবেন এমন শঙ্কা। যা বাবুল সাহেব আগেই ধারণা দিয়েছিলেন। তবে সংকট যে এতটা তা ভাবিনি বা বিশ্বাস করিনি। মূসা সাহেব কয়েক দিন ধরে কাজ করছেন, তাই তিনি সব বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। খবর নিতে থাকলাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অফিস থেকে বের না হয়ে পরিস্থিতি জানার জন্য অনেকের সঙ্গেই কথা বলতে থাকি। বুঝলাম অবস্থা মূসা সাহেব যা বললেন, তাই। কেননা সারওয়ার সাহেব যুগান্তর গড়েছিলেন, তিনি চলে যাওয়ায় অনেকের এমন বিশ্বাস ছিল, এ কাগজ আর চলবে না। আমি সন্ধ্যায় আবার মূসা সাহেবের সঙ্গে বসলাম। জানালাম ঘটনা ঠিক। অনেকেই থাকবে না, তবে আপনি আসায় আবার অনেকে আশ্বস্তও হয়েছেন। তিনি বললেন, আমি এতকিছু জানি না, কী করবা কর, বেইজ্জতি যেন না হই। আমি বললাম, আপনি সকাল-বিকাল আসেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।

মূসা সাহেবের কথাই ঠিক হলো, দুই দিন পর এক রাতে হঠাৎ করে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী পদত্যাগপত্র জমা দিলেন। বেতনের জন্য অপেক্ষা করলেন না। পরে শুনেছি সারওয়ার সাহেব তাদের আগের মাসের বেতনও দিয়েছিলেন। যে কারণে পাওনা বেতন না নিয়েই পদত্যাগ। পত্রিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ভেতরে ভেতরে কেউ কেউ আবার উসকানিও দিচ্ছেন। মূসা সাহেব-ই জানালেন ভেতরে থাকা কারও কারও কথা। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। কথা বললাম বাবুল সাহেবের সঙ্গে। তিনি বললেন, লোক নিয়ে আসুন। যা করতে হয় করুন, সমস্যা নেই। রাতেই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ কেউ জানালেন, সামনে ঈদ এখন এলে বোনাস পাওয়া যাবে না। ঈদের পর আসবেন। কিন্তু আমাদের তো একদিনও দেরি করার সুযোগ নেই। মূসা সাহেবকে জানালাম বোনাসের বিষয়। তিনি বাবুল সাহেবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিলেন। বাবুল সাহেব জানিয়ে দিলেন, নতুন যারা আসবে সবাইকে বোনাস দেয়া হবে। আপনারা লোক নিয়ে নিন। অস্বস্তি নিয়ে মূসা সাহেব ও আমি বাসায় ফিরি। ফেরার আগে আমি মূসা সাহেবকে শুধু বলি, আপনি কাল সকালে এসে সারা দিন থাকবেন। তিনি বললেন, কেন? আমি বললাম, কালই বেশিরভাগ লোক নিয়ে নেব। না হলে কাগজ বেরোবে না। নিয়োগপত্রে আপনাকে স্বাক্ষর করতে হবে।আমি বাসায় ফিরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলি। আমার অনেক বন্ধুবান্ধবও সহায়তা করেছিলেন। আর ভাগ্যও প্রসন্ন। অনেকেই রাজি হলেন। পরদিন সকালবেলা আমি ওয়েজবোর্ডের একটি কপি এবং অনেক আগে জাপান থেকে আনা আমার ছোট ক্যালকুলেটরটি নিয়ে সাড়ে ১০টায় যুগান্তরের কমলাপুরের অফিসে পৌঁছি। আগেই মূসা সাহেব হাজির। দুইজন বসলাম। কথা হলো। লোকজন আসতে থাকল। আর নিয়োগপত্র তৈরি করে মূসা সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে কাজে বসাতে থাকলাম। সারাদিনই এভাবে চলল। সন্ধ্যায় তবুও কোনো কোনো বিভাগে লোকের অভাব দেখা দিল। সবশেষে সমস্যা পেস্টিংয়ের। মূসা সাহেব বাড়ি যাবার আগে শুধু বললেন, কাগজ যেন বের হয়। কিন্তু আমি তো রিপোর্টার ছিলাম। প্রোডাকশন ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। যুগান্তরের পুরনো কয়েকজন সাংবাদিক, প্রেস কর্মচারী সাহায্যে এগিয়ে এলেন। এর মধ্যে পোস্টিং বিভাগের প্রধান আজাদ একজন। ফকিরাপুল থেকে ভাড়া করা পেস্টার এনে কাজ করানো হলো। শতাধিক লোক পদত্যাগের পরও যুগান্তর পরদিন এভাবেই বের হলো। বাজারে গেল, সার্কুলেশনেও কোনো সমস্যা হয়নি। মূসা সাহেবের নামের কারণেই হয়তো এটা সম্ভব হয়। সপ্তাহখানের মাথায় সব বিভাগের শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। সবশেষে সার্কুলেশন। সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে ঢাকার হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশের এজেন্টদের ভাল যোগাযোগ ছিল। তাই পত্রিকা বাজারজাতকারী সমিতির নেতা ও এজেন্টদের মধ্যেও ধারণা জন্মে এ কাগজ হয়তো আর চলবে না। তাদের বোঝাতে হবে, কাগজ ঠিকমতো বের হবে। ভালোভাবে বের হবে। এ বিষয়ে মূসা সাহেব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সবচেয়ে বড় কথা, মূসা সাহেবের মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব সম্পাদক হিসেবে যোগদান করায় যুগান্তর রক্ষা পেয়ে গেল। তা না হলে সারওয়ার সাহেবের শূন্যস্থান পূরণ করে যুগান্তর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। অন্তত আমার এ উপলব্ধি। পরের অনেক ঘটনা। যুগান্তরে মূসা সাহেবের একবছরও কাজ করা হয়ে ওঠেনি। আমি ছিলাম চার বছর। সে কাহিনী পরে বলা যাবে। কিন্তু আমার সম্পাদক মূসা সাহেবকে আমি দেখেছি এক অসাধারণ মানুষ হিসেবে। তিনি যখন প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক তখন একজন প্রশিক্ষণার্থী হয়ে আমি তার ছাত্র হিসেবে শিখেছি। পরে যখন আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক হই, উদ্বোধনী সংখ্যায় লেখার জন্য তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, তুমি সম্পাদক হয়েছ, আমি খুবই খুশি। অবশ্যই আমি লেখা দেব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের উদ্বোধনী সংখ্যায় লেখা দিলেন, প্রথম পাতায় ছাপা হলো। লেখার মধ্যে আমার বেশি প্রশংসায় আমিও বিব্রত ছিলাম। এর ক’দিন পর লেখার জন্য পাঁচ হাজার টাকার বিল নিয়ে আমি তার বাসায় যাই। তিনি বলেন, কেন এসেছ। বিল দিতে। কীসের বিল। লেখার বিল। আচ্ছা দাও। একটা প্যাকেট আর স্বাক্ষরের জন্য ভাউচার। তিনি বললেন, এত টাকা এনেছ কেন? আমি বললাম, আপনার সম্মানী। সব টাকা মূসা সাহেব নিতে চাইলেন না। আমি বললাম, অফিসে বিল, ভাউচার হয়ে গেছে। আমি ফেরত নেব কীভাবে। অবশেষে তিনি রাখলেন। এই হলো মূসা সাহেব। অহমিকা, হিংসা, দ্বেষ কিছুই ছিল না। একজন আপদমস্তক সাংবাদিক। এক বছরের কম সময়ে কাজ করে তার সম্পর্কে আমার যে অভিজ্ঞতা, তা লিখে শেষ করা যাবে না।

এরই মধ্যে মূসা ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছি। লোকজন যারা যাবার সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে চলে গেছেন। শূন্য পদ আমরা তাৎক্ষণিক পূরণ করি। সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসাবে সহযোগী সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুর বিকল্প হিসেবে সোহরাব হাসানকে নিয়ে আসি। তিনি তখন সংবাদে ছিলেন। এখন আছেন প্রথম আলোতে। তার সাথে আমি প্রথমে কথা বলে বাবুল সাহেবের কাছে নিয়ে যাই। কয়েক দিনের মধ্যে সোহরাব হোসেন সহযোগী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর ফিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে আরেক সহযোগী সম্পাদক পদ দিয়ে আবু হাসান শাহরিয়ারকে নিয়ে আসি। যুগান্তরে প্রথম দিকেও তিনি ছিলেন। শাহরিয়ার ফিচার বিভাগে একঝাঁক তরুণ নিয়ে আসেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি আবু হাসান শাহরিয়ারকে আনতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তাকে আনার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আমার স্নেহস্পদ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। তিনিই আমাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শাহরিয়ারের ব্যাপারে আমি বাধাগ্রস্ত হই। তার সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না। অফিসের পুরানো এক ঊর্ধ্বতন সাংবাদিক বললেন, তাকে সামলানো কঠিন। কিন্তু কারো কোনো কথা না শুনে আমি তাকে আনার জন্য দৃঢ় ছিলাম। তাই তার এবং ফিচার বিভাগের নতুন কয়েকজনের নিয়োগের জন্য পত্রিকার এম ডি শামীম সাহেবের সহযোগিতা নিতে হয়েছিল। মেধাবী এবং আবেগী দুই মিলে শাহরিয়ার। আমি থাকাকালেই একবার সে পদত্যাগ করে, আবার আসে এবং আবার পদত্যাগে বাধ্য হয়। তার আসা-যাওয়ার পিছনে অন্যরা কালকাঠি নাড়লেও তার এক বইয়ে আমাকে নিয়ে কিছু কথা লেখা হয়। যা পুরোপুরি অসত্য। আর যুগান্তরে চাকরিকালীন শাহরিয়ার তার একটি বই উৎসর্গ করে আমার নামে। তার এ লেখাকে আমি গুরুত্ব দিইনি। এ কারণে বিভিন্ন সংবাদপত্রে তিনি চাকরি করেছেন। বারবার চাকরি ছেড়েছেন অথবা ছাড়তে হয়েছে। আর প্রতিবার তার কোনো না কোনো বইয়ে সে পত্রিকা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে লেখালেখি নিয়মে পরিণত হয়েছিল। সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, আবেদ খান, নাঈমুল ইসলাম খান তারা কেউই তার লেখনীর হাত থেকে মুক্তি পাননি।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here