আগামী ২ থেকে ৩ বছরে দেশের মানুষের করোনা থেকে মুক্তি নেই !

0
105

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
আগামী ২ থেকে ৩ বছরে দেশের মানুষের করোনা থেকে মুক্তি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার সংবাদ বুলেটিনে করোনা সম্পর্কে এই ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্য অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে করোনা বিষয়ে এই মত দিয়েছেন।

মানুষ যখন আগামী দুই–এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে তখনই এক গভীর অন্ধকারের ছবি আবুল কালাম আজাদ তুলে ধরলেন দেশবাসীর সামনে।

তাঁর এই কথার অর্থ কী? আগামী ২–৩ বছর মানুষ ঘর বন্ধী থাকবে? আগামী ২–৩ বছরের স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে? আগামী ২–৩ বছর মানুষ করোনায় সংক্রমিত হতেই থাকবে? এরকম আরও অসংখ্য প্রশ্ন আছে মানুষের মনে। বিশ্বের অনেক দেশ যখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে তখন বাংলাদেশ বলছে অন্য কথা।

প্রশ্ন হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেন এই কথা বললেন। জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘কিসের ওপর ভিত্তি করে এমন মন্তব্য বুঝতে পারছি না। আপনি যদি সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেন তা হলে করোনা আজীবন থাকবে। এরকম কথার অর্থ হচ্ছে হাল ছেড়ে দেওয়া।’

পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটিতে আছেন ৮ জন সদস্য। এই কমিটি তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। এই কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ২–৩ বছর করোনা থাকবে এমন কোনো কথা তারা সরকার বা অধিদপ্তরকে বলেনি।

জাতীয় কারিগরি পরার্শক কমিটি নামে ১৭ সদস্যের আর একটি কমিটি আছে যারা সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে। এই কমিটির সদস্যরাও বলেছেন, তারাও এরকম কথা কখনও বলেননি।

তা হলে আবুল কালাম আজাদ এ কথা কেন বললেন? আবুল কালাম আজাদ তাঁর বক্তব্যের ভিত্তি প্রসঙ্গে বলেন, সারা বিশ্বে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন এই ভাইরাস সহজে যাচ্ছে না। উচ্চহারে সংক্রমণ হয়তো হবে না। ২–৩ বছর থাকবে। দেশবাসীর আগেভাগে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকা দরকার।

দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আজ এই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত তিন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ করেছে। সেসব কাজে কোনো সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল না, কাজে কোনো সমন্বয় ছিল না। সংক্রমণ প্রতিরোধে আজকের দিনেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ মাঠে নেই। দেশবাসীকে এই উদ্যোগহীনতারই মাসুল দিতে হবে আগামী দুই–তিন বছর ধরে।

ডা. আবুল কালাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ ভাইরাস আগামী দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত থাকবে। এর আগে পুরোপুরি করোনা ধ্বংস করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। করোনাভাইরাসও ছোঁয়াচে রোগ। যার কারণে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন। তবে সরকারকে সাহায্য করতে হলে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অবহেলা, অসাবধানতা আপনারই ক্ষতি করবে।

এ সময় তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, আমাকে কিছুদিন হাসপাতালেও ভর্তি থাকতে হয়েছে। সবার দোয়ায় আমি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৪৩ জনের। একই সময়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৮০৩ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here