গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা

0
91
পোশাক শ্রমিক রোজিনা বেগম ও তার ছেলে।

বাংলা খবর ডেস্ক:
২৬ বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক নাজমিন নাহার। দুই সন্তানকেই নিয়েই তিনি থাকেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে। যেখানে এখন ধার করা চালের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে তাকে। গত দুই মাস ধরে তার কাছে খাবার কেনার মতো টাকা নেই। নেই বাসা ভাড়া দেয়ার মতো টাকাও।

ঢাকার ম্যাগপাই নিটওয়্যার নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন নাজমিন নাহার। যেখানে দীর্ঘ সময় নিরলসভাবে কাজ করতেন তিনি। যুক্তরাজ্যের বার্টন এবং এইচ এন্ড এম’র মতো নামিদামি ব্রান্ডের পোশাকের পেছনে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে মাস শেষে ১৫০ পাউন্ড বা ১৫ হাজার টাকা আয় করতেন তিনি। গত মার্চের শেষের দিকের ঘটনা। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে লকডাউন জারি করা হয়। গত ৪ এপ্রিল যখন পোশাক কারখানা আবার খোলা হয় তখন নাহার জানতে পারেন তার জন্য কোনো কাজ নেই।

এই বিষয়ে নাহার বলেন, তারা আমাদের বলেছিল যে বিদেশি ক্রেতারা সব অর্ডার বাতিল করছেন। এ জন্য আমাদের নতুন কোনো কাজ নেই। আমরা দুই মাস ধরে বেতন পাই না।

যুক্তরাজ্য এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ফ্যাশন আউটলেটগুলো যখন আবার খোলা হচ্ছে, তখন বিশ্বের আরেক প্রান্তে যারা ওই সব পোশাক সেলাই করেন তারাই না খেয়ে থাকছেন এবং কাজ হারাচ্ছেন। নাহার বলছিলেন, আমরা সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাকিতে নিচ্ছি। কিন্তু পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দোকানিরা আর বাকি দিতে চাইছেন না। এমন অবস্থায় আমাদের বাড়িওয়ালা এক বস্তা চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এখন আমরা সেটি দিয়েই জীবন চালাচ্ছি।

রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী একটি স্থানে আল্টিমেট ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন পোশাক শ্রমিক রোজিনা বেগম। এই পোশাক কারখানাটি মাটালান এবং অন্যান্য পশ্চিমা ব্রান্ডের অর্ডের সরবরাহ করে।

রোজিনা বেগম জানান, চাকরি হারানোর পাশাপাশি তিনি যে ৮ হাজার টাকা বেতন পেতেন সেটিও তাকে দেয়া হয়নি। ওই পোশাক কারখানা থেকে ৩০০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছ বলেও জানান রোজিনা। রোজিনা জানতে পেরেছেন যে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করার কারণে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আঁখি নামের আরেক পোশাক শ্রমিক জানান, স্টার্লিং স্টাইলস নামের একটি পোশাক কারখানায় ৯ হাজার ৩০০ টাকার বিনিময়ে কাজ করতেন তিনি। এই কোম্পানিটি গ্যাপ ব্রান্ডের পোশাক তৈরি করতো। করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ার পর চাকরি হারিয়েছেন বলে জানান আঁখি। এখনো তিনি তারা দুই মাসের বেতন পাননি। আঁখি বলেন, আমরা গ্রামে ফিরে যেতে পারছি না কারণ আমাদের সেখানে কিছুই নেই। আমরা কি করবো?

করোনা মহামারি প্রকোপ দেখা দিলে যখন সারাদেশে লকডাউন জারি করা হয় তখন ফ্যাশন ব্রান্ডগুলো কয়েক শত কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল করে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের(বিজিএমইএ) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু বাংলাদেশেই ফ্যাশন ব্রান্ডগুলো প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছে।

এই বিষয়ে বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, গত মাসে ২৫ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। যদি বিদেশি অর্ডার না বাড়ে তাহলে এই সংখ্যা আগামী ছয় মাসে ৫ লাখে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশে কারখানাগুলো আবারো খুলেছে। কিন্তু এই সব পোশাক কারখানায় অর্ডার প্রায় ৮০ শৎতাংশ কমে গেছে। ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম দ্বারা পরিচালিত একটি অনলাইন ট্র্যাকারে জানা গেছে, আর্কেডিয়া, প্রাইমার্ক এবং এডিনবার্গ উলেন মিলের মতো ব্রিটিশ ব্রান্ডগুলো তাদের যেসব অর্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে তার জন্য পূর্ণ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি এখনো করেনি।

ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, দোকানপাট আবার চালু হয়েছে। তাই সরবরহকারীদের আর্থিক মূল্য পরিশোধ করা অত্যাবশক। ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের সঙ্গে জড়িতে ম্যাগ লেউইস বলেন, আমরা ফাস্ট ফ্যাশনের সামনে গত সপ্তাহে লম্বা ভিড় দেখেছি। যখন কর্মীদের বেশি প্রয়োজন তখনই সেই কোম্পানিগুলো তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

ম্যাগপাই নিটওয়্যার থেকে কোনো তথ্য বাতিল করা হয়নি উল্লেখ করে একটি বিবৃতিতে এইচ এন্ড এম ব্রান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী সকল ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে জাতীয় আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।

গ্যাপ ব্রান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা আমাদের সকল বিক্রেতাদের সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীরভাবে যোগাযোগ রাখছি।অর্ডার সম্পর্কে জানতে আমরা তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠক করছি এবং পরিকল্পনা করছি কিভাবে সামনের দিনগুলোতে চলতে হবে।

আরেক ব্রান্ড মাটালান জান্য, যে সকল অর্ডার ট্রানজিটে রয়েছে সেগুলো আমরা নিয়ে নিচ্ছি, যদিও সেগুলো বিক্রি করতে পারবো না। অর্ডার বাতিল না করার জন্য আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এই বিষয়ে বাংলাদেশের আল্টিমেট ফ্যাশনের একজন মুখপাত্র জানান, করোনা এবং সামাজিক দূরত্বের কারণে আমরা ৭০ শতাংশ কর্মী দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছি। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আমাদেরকে কিছু শ্রমিক ছাঁটাই করতে হয়েছে।

তবে আর্কেডিয়া, ম্যাগপাই নিটওয়্যার, স্টার্লিং স্টাইলস পোশাক কারখানার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গার্ডিয়ান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here