কবীর চৌধুরী তন্ময় :
কম্পিউটারে বিল তৈরি করার আগে হাতে যখন বিল তৈরি করতো তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমার একদল ছাত্রছাত্রী ছিল যাদের দিয়ে হাতে বিল করাতাম। বিনিময় প্রতি বিলের জন্য তাদের পাঁচ টাকা করে দেওয়া হতো। এই কাজ করে মাসে বেশ কিছু টাকা একেক জন ছাত্রছাত্রী পেত যা তাদের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি অনেকে আবার বাড়িতেও পাঠাতে পারতেন। কিন্তু বিল তৈরি করার কৌশল ছিল- মিটার রিডিং ৮০ ভাগ মুখস্ত লিখতে হতো। গত মাসের চেয়ে এদিক সেদিক করে বিল তৈরি করা হতো। এই ধরুন- জুন মাসের বিল তৈরি করতে গিয়ে মে মাসের মিটার রিডিং দেখতে হতো। মে মাসে কম বিল তৈরি করলে জুন মাসে আইডিয়া করে একটু বেশি বিল করতে হবে-এই কৌশল শেখানো হয়েছে বিল তৈরিকারকদের।
এখানে মূল কথা হলো- ৮০ ভাগ মিটারের ডিসপ্লে দেখে মিটার রিডিং নোট করা হতো না। যার ফলে এদিক-সেদিক করে বিল তৈরি করা হতো। এমনি করে চলতে চলতে একটা সময় যখন মিটার রিডিং দেখা হতো তখন হঠাৎ করেই এক মাসে আশ্চার্য জনক বিল চলে আসতো। এখানে মটার রিডিংম্যানের কাজে ফাঁকি দেওয়ার কারণে এই ধরনের সমস্যা তখন সৃষ্টি হয়েছিল। আরেকটি বিষয়- মিটার রিডিং ম্যানের সাথে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্প কল-কারখানার মালিক বা ম্যানাজারের সাথে একটা গোপন আঁতাত তখনও ছিলো। সে আবার তার উপরের বস-এর সাথে যোগ সাজেশে এই ধরনের কাজ করতে সাহায্য সহযোগিতা সাহস পেয়ে থাকে।
যেসকল গ্রাহক মিটার রিডিং নিয়ে সচেতন নয় কিংবা এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানে না-এই ধরনের গ্রাহকের ডাটা মিটার রিডিংম্যানের হাত ধরে উপরের কর্মকর্তার কাছে চলে যেতো। তখন কয়েকজন মিলে নিজেদের পকেটভারী করার জন্য ভুতুরে বিল তৈরি করতো। যেহেতু গ্রাহক তেমন কিছু বোঝে না বা মিটার রিডিং নিয়ে অভিজ্ঞ নয়, তাদের অধিকাংশ বিল ভুতুরে করার একটা পরিকল্পনা থাকে। তবে সেটা ধীরে ধীরে… আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি- সরকার এখানে শক্তভাবে উদ্যোগ নিলে ভুতুরে বিল আটকানো সম্ভব। যদিও ইতোমধ্যে সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে সব ভুতুরে বিল ঠিক করে দিতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি এই অতিরিক্ত বিল করার জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। এখন দেখার বিষয় এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতোটুকু করা সম্ভব।