‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ২৭)

0
154

শাহজাহান সরদার
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

(বইটি ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়)

(পর্ব- ২৭)

আমার গৌরব, আমার গর্ব আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশমাতৃকার স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার জীবন ধন্য। ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। ভারতে যেতে পদে পদে বিপত্তি। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরতেও একই অবস্থা। একদিকে পাক-হানাদার বাহিনী অন্যদিকে রাজাকার বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে আসা-যাওয়া। দেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। আমি মনে করি আমার গ্রন্থে এই গৌরবের অংশটি অবশ্যই থাকা উচিত। তবে এ অংশটুকু অনেক আগের লেখা। ২০০৭ সালে দৈনিক যুগান্তরের বিজয় দিবস সংখ্যায় লেখাটি ছাপা হয়। ‘যুদ্ধযাত্রা’ নামে ছাপা হওয়া লেখাটি এখানে হুবহু তুলে ধরলাম।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ

১৯৭১ সালে আমি কলেজের ছাত্র। থাকতাম বনানীতে। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসে। স্কুলজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। কলেজে এসে তা নতুন মাত্রা লাভ করে। আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠি। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সরকারি তিতুমীর কলেজের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গেও ছিলাম। তাই সে-সময়কার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিতে অংশ নিই। উত্তাল মার্চের শুরুর দিনগুলোয় আমি ঢাকায়ই অবস্থান করি। সে-সময় ঢাকায় হরতাল, বিক্ষোভ সমাবেশ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ তিতুমীর কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমাবেশে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে থেকে আমিও আমার কলেজ থেকে আসা ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছি। শুনেছি তার মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা। সেদিনের সমাবেশ শেষে হেঁটে হেঁটে বনানী হোস্টেলে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়েছিল। এরপরও ১৫ তারিখ পর্যন্ত বনানী, মহাখালী, গুলশান এলাকায় এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। তখন রাজধানী ঢাকা ছিল থমথমে। রাস্তায় ব্যারিকেড। বনানী-গুলশান তখন ছিল প্রায় ফাঁকা এলাকা। গুলিস্তান থেকে বিআরটিসি বাস চলাচল করত বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত। ১৫ মার্চ বিকালে মিছিল করে হোস্টেলে ফেরার পথে বনানী মোড়ে চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। চায়ের দোকান মানে একটি টঙের মতো দোকান। এ সময় দেখি আমার চাচাতো ভাই রশিদ সরদার (সাবেক থানা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়াম্যান) বাস থেকে নামছেন। উনি নামতেই আমি এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, তুমি এখনও ঢাকায়। বাড়ির সব চিন্তায় অস্থির। রউফ আগেই চলে গেছে। রউফ মানে আমার আরেক চাচাতো ভাই তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের পরিচালক, ডা. আব্দুর রউফ সরদার)। আমার অবস্থা দেখে তিনি বললেন, কাপড়-জামা এত ময়লা কেন? এক্ষুনি বাড়ি চল, ঢাকার অবস্থা খারাপ। আসলে মিছিলের কারণে প্যান্ট, শার্ট ধুলোয় ময়লা হয়ে গিয়েছিল। সেদিকে খেয়াল ছিল না। আমি বললাম আজ না। কাল যাব। তাকে আশ্বস্ত করার পর বাসস্ট্যান্ড থেকেই তিনি বিদায় নিলেন। আমি হোস্টেলে এসে দেখি খুব বেশি ছাত্র নেই। রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য ও নেতারা ছাড়া অন্যরা তেমন নেই। আমি ক’জনের সঙ্গে আলাপ করে পরদিন সকালে রওনা দিয়ে ৪০ মাইল দূরে নিজ বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে পৌঁছি রাত ১১টায়। ঢাকা থেকে বের হয়েই দেখি গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে হাজারো মানুষ। সবাই দেশে ফিরছে। বাড়ি ফেরার এ কাহিনী অনেক দীর্ঘ। তবে রাস্তায় দেখি দলে দলে মানুষ। কেউ হেঁটে, কেউ বাসে, কেউ রিকশায়।

আমাদের বাড়ি রাস্তার পাশে, তখন কাঁচা রাস্তা ছিল। শুধু রিকশা চলাচল করে। পরদিন সকালে উঠেই দেখি রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। ঢাকাসহ বাইরের কর্মস্থল থেকে দেশে ফিরছে। সবার মনেই অজানা এক আশংকা। এভাবেই এলো ২৫ মার্চের কালরাত। পাক হানাদার বাহিনী সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালির ওপর। আমরা নিয়মিত তখন বিবিসি এবং আকাশ বাণী, কলকাতার খবর শুনি। ২৬ মার্চ সকালে জানতে পারি পিলখানা বিডিআরের ওপর পাক হানাদার বাহিনীর হামলার বিবরণ। প্রতিরোধের খবরও পাই। এরপর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ নিজ কানে শুনি। পাক হানাদার বাহিনীর হামলার পর থেকে যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে। রাস্তা দিয়ে লোক আসা আরও বাড়তে থাকে। অনেকেই টাকা-পয়সা, কাপড়চোপড় নিয়ে আসতে পারেননি। আমরা এলাকার ছাত্র-যুবকরা মিলে ফান্ড গঠন করে অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকি। রাস্তায় পালাক্রমে ডিউটি করে পানি ও শুকনো খাবার সরবরাহ করি। এরই মধ্যে পার্টি থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক এলো। আমি বাবা-মার একমাত্র পুত্রসন্তান। বাবা তখন অসুস্থ। মা সবসময় চোখে চোখে রাখেন। এরই মধ্যে ঠিক করি মুক্তিযুদ্ধে যাব। ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। কিন্তু যাব কী করে? মাকে বলে যাওয়া সম্ভব নয়, ফাঁকি দিয়ে যেতে হবে। আমি সিদ্ধান্তে অটল। গোপনে গোপনে তৈরি হতে থাকি। আলোচনা হয় আমার নিকটাত্মীয় জনাব কামাল হায়দারের সঙ্গে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পরে ন্যাপ থেকে এমপি হন। ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বপালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য যখন সিদ্ধান্ত নেই তখন হাতে টাকা ছিল না। বাড়ির গোলাঘর থেকে গোপনে ধান বিক্রি করে কিছু টাকা সংগ্রহ করলাম। পরে এ বিষয়ে কথা হয় আমার পাশের বাড়ির নূরুল ইসলাম কাকার সঙ্গে। তখন তিনি শিক্ষকতা করতেন। তার কাছ থেকেও কিছু টাকা ধার নিলাম। সিদ্ধান্ত হল, ২৪ এপ্রিল রওনা দেব। মাকে জানাব না। তাই হল। কথামতো সেদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি প্যান্ট কাগজে গুঁজে লুঙ্গি ও শার্ট পরে রওনা দেই। কেউ যেন জানতে না পারে সেজন্য রিকশায় না উঠে কিছুটা পথ পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে এসে মূল রাস্তা না ধরে গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে শিবপুরে পৌঁছি দু’ঘণ্টায়। সেখান থেকে বাসে নরসিংদীর ভেলানগর। কামাল হায়দারও এখানে এলেন। এটি হাবিবুল্লাহ বাহার ও শহীদুল্লাহ বাহারের বাড়ি। বড়ভাই ন্যাপ নেতা, ছোটভাই ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। এখানে আরও একজন এলেন, নারায়ণগঞ্জ বারের উকিল আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন। রাতে তাদের বাসায়ই থাকি। হাবিবুল্লাহ বাহার ও শহীদুল্লাহ বাহারের বাবা বেঁচে নেই। বৃদ্ধ মা ও ছোট বোন শুধু বাসায়। ২৫ এপ্রিল সকালে দু’ভাই মা ও বোনের কাছ থেকে বিদায় নেন। আমরা নরসিংদীর লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে দেড়ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পৌঁছি। নবীনগর থেকে রিকশায় উঠি। কিছুদূর গিয়েই থামতে হয়, সামনে পাকবাহিনী টহল দিচ্ছে। তখন ঢাকা-সিলেট সড়ক হয়নি। মাটির কাজ চলছিল। এরই মধ্যে পাকবাহিনীর টহল। ঘণ্টাদুয়েক সতর্ক অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে এক গ্রামে প্রবেশ করি। তখন পড়ন্ত বিকাল। এ গ্রামের পরই সীমান্ত। সীমান্তে পাকসেনাদের সতর্ক প্রহরা। গ্রামে পরিচয় হল এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন করেন। আমাদের সীমান্ত পারে সহায়তা করবেন বলে তার বাড়িতে নিয়ে যান। আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে তিনি চলে যান বাইরে। বলেন, রাতে পার করে দেবেন। সন্ধ্যায় এসে জানালেন, ভোররাতে যেতে হবে। এখন সম্ভব নয়। তার সঙ্গে নাকি এক রাজাকারের আলাপ হয়েছে। জনপ্রতি একশ’ টাকা দিতে হবে। সকালে পার করে দেবেন। আমরা কিছুটা ভীত হলাম। মনে শংকা, ধরা পড়তে যাচ্ছি না তো। যাহোক, আমরা পাঁচজন একশ’ টাকা করে তার হাতে তুলে দিলাম। ভোররাতে ঠিকই আমাদের সীমান্ত পার করে দিলেন তিনি। ত্রিপুরার সীমান্তে পৌঁছে কিছুটা হেঁটে আমরা একটি মুড়ির টিনের মতো বাস দেখতে পাই। বাসে তিলধরার স্থান নেই। তাই উঠতে পারিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আরেকটি বাস এলে কোনরকম উঠে বাদুড়ঝোলা হয়ে আমরা আগরতলা গিয়ে পৌঁছি। ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ছিল আগরতলার ক্র্যাফটস হোস্টেলে। সেখানে গিয়ে অনেকের সাক্ষাৎ পেলাম। হোস্টেলে স্থান ছিল না। তাই ত্রিপুরার পরিত্যক্ত রাজবাড়িতে আমাদের থাকার স্থান হল।দু’দিন আগরতলা অবস্থানের পর একটি কার্গো বিমানে করে আমাদের আগরতলা থেকে নিয়ে যাওয়া হল আসামের বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ট্রাকে করে তেজপুর ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে আমাদের ট্রেনিং সেন্টার। এক মাসের ট্রেনিং। জীবনে প্রথম অস্ত্র ধরেছি। থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে শুরু। প্রথম দিনগুলি ছুঁড়তে গিয়ে বুকের পাঁজরে বেশ আঘাত পেয়েছিলাম। পরে এলএমজি, এসএমজি ও স্নাইপারের প্রশিক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করি। আমাদের এ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা মরহুম ওসমান গনি এবং উপ-অধিনায়ক ছিলেন বর্তমানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আর প্রশিক্ষণকালে আমার গ্র“পের কমান্ডার ছিলেন বর্তমানে কমিউনিস্ট নেতা ও ডাকসু’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলী। আমরা এ বহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলাম। প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে আমার নম্বর ছিল ৮৮। প্রশিক্ষণকালে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, সব কাহিনীই দীর্ঘ। তবে একটি কাহিনী তুলে ধরছি।

গোসল করার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আমাদের জন্য কোন টিউবঅয়েল বা পুকুর ছিল না। পাশে ছিল এক পাহাড়ি ঝরনা-ঘেরা নদী। এ নদীটিকে ‘জোঁকের ঝরনা’ বললেই চলে। এ নদীতে গোসলের ব্যবস্থা। আমরা গোসল করতে নদীতে নামার আগে ১০-১২ হাত দূর থেকে দৌড়ে ঝাঁপ দিয়ে আবার একই স্পিডে উঠে আসতাম। তবু শরীরে জোঁক লেগে থাকত। যেগুলো পরে হাত দিয়ে ফেলতে হতো। এ-এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। তেজপুরে এক মাস প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেনে করে আবার আগরতলার উদ্দেশে যাত্রা। ট্রেনে তিন দিনের পথ। খাবার শুধু পরোটা ও ডিম। সীমান্তে তখন কড়া প্রহরা। পারাপার হওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের রাখা হল ত্রিপুরার পাহাড়ি এলাকা বাইকোরায়। নিজেরাই জঙ্গল সাফ করে ঘর তৈরি, তাঁবু খাটিয়ে এখানে প্রায় ১৫ দিন অবস্থান করি। পরে এলাকাভিত্তিক টিম করে সীমান্ত পার হয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা হয়। তখন বর্ষাকাল। সীমান্ত পার হয়ে নৌকা করে আমরা রওনা দেই। উঁচু ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে নৌকা যাতে দেখা না যায় সে ব্যবস্থা। এরই মধ্যে একদিন পাকবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে এক গ্রামের মাঠে চারদিকে পানির মধ্যে একটি স্কুলে চিড়ামুড়ি খেয়ে দু’দিন অবস্থান করতে হয়। তিনদিন পর একরাতে নরসিংদীর রায়পুরা এসে পৌঁছি। রায়পুরা একদিন থেকে বেলাবো হয়ে পরে মনোহরদীর পীরপুর গ্রামে এসে পৌঁছি। সেটা জুলাই মাস। মনোহরদী আমার থানা হলেও পীরপুর এলাকা আমার অপরিচিত। আমাদের কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ফওজুল আকবর। বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ নির্মাণসংস্থা জিবিবি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। একসময় ইউকসুর ভিপি ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। পীরপুর কয়েকদিন থেকে পুরো কোম্পানি নিয়ে আমাদের নিজ এলাকায় আসি। বাড়ি ফিরে এলে এলাকায় প্রায় সব লোকই আমাদের দেখতে আসেন। মা আমাকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে উঠান। আমরা বিশজনের একটি দল পীরপুর থেকে আমাদের এলাকায় এসেছি। এই এলাকায় শিবপুর আর নরসিংদীর বর্ডার। আমার গ্রাম মনোহরদীর নোয়াদিয়া। পাশে বৈলাব, বাড়িগাঁও, সাতপাড়া শিবপুর থানা। এই চার গ্রামে কামাল হায়দার সাহেব এবং আমি তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। এদের অধিকাংশই শহুরে পরিবেশে মানুষ হলেও গ্রামের মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলেছেন। পরদিন থেকেই শুরু হয় আমাদের অপারেশন পরিকল্পনা। মনোহরদী, শিবপুর, কাপাসিয়া ও গাজীপুর পর্যন্ত আমাদের দল বিভিন্ন সময়ে অপারেশন এবং পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পর্যন্ত সফলতা অর্জন করে। যুদ্ধের গল্প আরেকদিন লিখব।

আমি ঢাকা ফিরি ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের একদিন পর। সে দীর্ঘ কাহিনী আজ নয়। আমাদের কমান্ডের ক্যাম্প ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স এনেক্স ভবনে। বর্তমান পরিসংখ্যান ভবনে। সেখানে কিছুদিন থেকে তিতুমীর কলেজের হোস্টেলে ফিরে দেখি লণ্ডভণ্ড অবস্থা। পাকবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে কয়েকজন ছাত্রকে। এর মধ্যে কলেজের ভিপি সিরাজউদদৌলাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। সিরাজ ভাই সরকারি তিতুমীর কলেজের তৎকালীন ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তার নামেই এখন তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে সিরাজ ছাত্রাবাস। হোস্টেলে এবং কলেজে বেশ ক’জন পুরানো বন্ধুকে আর খুঁজে পাইনি। মুক্তিযুদ্ধে তারা শহীদ হয়েছেন।

(সুপ্রিয় পাঠক, সময়ের অভাবে যদি কেউ পূর্বের পোস্টকৃত কোন পর্ব পড়তে না পারেন, তাহলে ফেসবুকের এই আইডি থেকে অথবা বাংলাদেশ জার্নাল অনলাইনের ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরি থেকে ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি পড়তে পারবেন।)

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here