বৈরুতে বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি নিহত

0
83
বৈরুত

বাংলা খবর ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেশটিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্যসহ ১০১ জন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বিজয়’র ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমানসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদফতর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আবদুল্লাহ আল মামুন ওয়াটস আপ বার্তায় বাসসকে জানান, এ পর্যন্ত চার বাংলাদেশি নিহত এবং ১০০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং ২১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য।

তিনি বলেন, নিহতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান রনি ও রাসেল, মাদারীপুরের মিজানুর রহমান এবং কুমিল্লার রেজাউল। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাশগুলো শিগগিরই দেশে পাঠানো হবে। যেহেতু তারা বৈধ শ্রমিক, তাই তাদের বীমা করা রয়েছে।

ফলে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। নিয়ম অনুসারে আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে সাকসেশন সার্টিফিকেট এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নিসহ কিছু কাগজপত্র লাগবে। লাশগুলো দেশে পাঠানোর পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।

লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বৈরুত সমুদ্রবন্দরে অতি উচ্চমাত্রার দুটি বিস্ফোরণ হয়। এতে দেশটির জানমাল ও স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে।

তিনি বলেন, লেবাননে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ লোক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বিস্ফোরণে আহত হয়ে মাউন্ট লেবানন হাসপাতালে একজন এবং জয়তবী হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮০ বাংলাদেশি।

এদের মধ্যে ৮ জন আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার প্রায় ২০০ গজ দূরে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ছিল।

জাহাজটির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাহাজে গিয়েছি। তিনি বলেন, লেবাননের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপডেট তথ্য নিচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশি কর্মীদের সুচিকিৎসায় তিনি পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন খোঁজখবর নিচ্ছেন। মন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা বা খাদ্য সহায়তা পাঠানো যায় কিনা।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি মনে করি, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা এলে তা দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে। এতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

এদিকে আইএসপিআর জানায়, ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়’র ২১ সদস্য আহত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার নাম চিফ ইআরএ (সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার) মো. হারুন উর রশীদ। তাকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদের ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার/অ্যাম্বুলেন্সে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা আশঙ্কামুক্ত। শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌ সদস্যদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে।

এ দুর্ঘটনায় নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়’র ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নৌবাহিনী জাহাজ, ইউনিফিল সদর দফতর ও বৈরুতের বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে নৌবাহিনী সদর দফতরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।

ওদিকে বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আহত শতাধিক বাংলাদেশির মধ্যে এ পর্যন্ত চারজনের মত্যুর খরব নিশ্চিত করেছে মিশন। বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান বুধবারের ভিডিও বার্তায় চিকিতসাধীন অবস্থায় দু’জন বাংলাদেশি নিহত এবং ৮০ জনের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। রেকর্ডেড ভিডিও বার্তা প্রচারের পর আরও দু’জন মারা যান বলে নিশ্চিত হয় মিশন। রাষ্ট্রদূত তার বার্তায় বাংলাদেশ কমিউনিটির বিষয়ে বলেন, লেবাননে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় কর্মরত। লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ থমথমে। সবাই বেশ আতঙ্কগ্রস্ত। বাংলাদেশি কমিউনিটিও আতঙ্কগ্রস্ত।

আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি। লেবানন পরিস্থিতি বিশেষত বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সবসময় হালনাগাদ তথ্য নিচ্ছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। যাতে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি এখানে ভালো থাকে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা পাঠানো যায় কি না। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশ থেকে যদি চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা এখানে আসে তবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং লেবাননের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে আটজন রফিক হারিরি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা যাতে ভালো হয়, দূতাবাসের তরফ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। মঙ্গলবারের ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিকেল আনুমানিক ৬টায় লেবানন সমুদ্রবন্দরে অতিউচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। এ বিস্ফোরণে লেবাননের জানমাল ও স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শতাধিক লোক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন হাজারের অধিক।বিস্ফোরণটি হয়েছে সমুদ্রবন্দরে এলাকায়। বন্দরে নোঙ্গর করা ছিল আমাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ, যেটি ইউনিফিলে কর্মরত।বিস্ফোরণস্থল থেকে এর দূরত্ব ছিল ২০০ গজ। রাষ্ট্রদূত বলেন, ঘটনার পরপরই আমি আমার কর্মকর্তা ও দূতাবাসের কর্মচারীদের কয়েকজন অতি দ্রুত সমুদ্রবন্দরে চলে যাই বাংলাদেশি জাহাজ ‘বিএনএস বিজয়’ এর কাছে। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলি, দেখতে পাই জাহাজের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা ও নাবিকসহ অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা বেশ গুরুতর ছিল।তাদের আঘাত ছিল মাথায়। চটজলদি দূতাবাসের দু’জন কর্মকর্তা দিয়ে তাদেরকে আমেরিকান হাসপাতালে পাঠাই। তাতক্ষনিক চিকিৎসায় তাদের অবস্থার খানিক উন্নতি ঘটে। একজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, অন্যজন এখনও চিকিতসাধীন। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। রাষ্ট্রদূত জানান, দূতাবাসের মাধ্যমে ইউনিফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আহত অন্য ছয়জন কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টার করে এবং বাকি ১০ জনকে সড়কপথে জাতিসংঘ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় পাঠানো রাষ্ট্রদূতের বুধবারের রিপোর্ট মতে, ওই ১৬ জনের অাঘাত এতোটা শুরুতর নয়, প্রায় সবাই আশঙ্কামুক্ত।

বাংলাদেশ মিশন অক্ষত
এদিকে ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈরুতের বিস্ফোরণস্থলের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান হলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মিশন পুরোপুরি অক্ষত আছে এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে মর্মে সেগুনবাগিচায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে, বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে গোটা উপকূলই কমবেশি বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকে আটকা। ফলে উদ্ধার অভিযানের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস উদ্ধার অভিযানে সক্রিয় রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here