বাংলা খবর ডেস্ক:
ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস আজ। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। এবারের স্বাধীনতা দিবস পালনে দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি বিচারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবারের মত এবারো প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করে ভাষণ দিচ্ছেন। তবে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। লালকেল্লায় প্রবেশে মাস্ক বাধ্যতামূলক। একটি আসন থেকে আরেকটি আসনের দূরত্ব থাকবে দুই গজ। ভারতীয় সেনা বাহিনীর ২২ জন গার্ড অফ অনারে অংশ নেবেন। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটায় পতাকা উত্তোলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
এদিকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লাদাখে নিহত ২০ জন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। মে-জুন মাসে চীনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রথম সারিতে থাকায় স্বাধীনতা দিবসে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের ২১ জন কর্মী।
ওদিকে আজ শনিবার ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লীর লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘আমরা দুনিয়ায় কারো থেকে কম না। আমাদের সবচেয়ে ওপরে থাকার যোগ্যতা রয়েছে। শিক্ষা, গবেষণা, উৎপাদন, প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এখন অনেক এগিয়ে। স্বাধীনতার ৭৪তম দিবসে আমাদের আজ সেই শপথ নিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘ভারত আজ বিভিন্নভাবে গোটা বিশ্বকে সাহায্য করতে পারে। এজন্য বিশ্বের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। ভারতের নতুন দিন আমি দেখতে পাচ্ছি। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য আবশ্যক শ্রমশক্তি। জীবন আরও উন্নত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। ’
স্বাধীনতার এত বছরে নারীদের উন্নয়ন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘নারী শক্তিকে আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। তারা যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে, ভারতের নাম উজ্জ্বল করছে। তারা যেমন মাটির নিচ থেকে কয়লা তুলে আনছে, তেমনি মুক্ত আকাশে দেশের নিরাপত্তায় যুদ্ধবিমান পরিচালনা করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম, যে দেশ তার সামরিক বাহিনীতে নারীদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে। ভারত নারীদের উন্নয়নে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম চালু রেখেছে। ’
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের অধিকাংশ জুড়েই ছিল করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি। এ লড়াইয়ের অগ্রভাগে যে যোদ্ধারা ছিলেন বা আছেন, শুরুতেই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোদী বলেন, ‘আমরা অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আমি সব করোনাযোদ্ধাকে তাদের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। সব স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং নার্স, যারা জাতির সেবা করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। ’
ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার প্রথম দিন আমাদের করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র একটি ল্যাব ছিল। এখন তার সংখ্যা ১ হাজার ৪০০। প্রথমদিকে আমরা মাত্র তিনশ’ পরীক্ষা করতে পারতাম, এখন প্রতিদিন ৭ লাখ পরীক্ষা হচ্ছে। এত কম সময়ে আমরা এত উন্নত করেছি। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ৪৫ হাজার আসন বাড়ানো হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘হেলথ আইড’ চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর আমরা নিজেরাই জানি, ভারতের চিকিৎসা সেবা বিশ্বে কত উন্নত। সেটির উন্নয়নের ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। ’
এসময় মোদী জানান, ভারতে করোনা ভাইরাসের তিনটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং তা উৎপাদন করে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের কাছে বিতরণের পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে।
জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়েও আমাদের বিবিধ চিন্তা রয়েছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে, সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানে রাখছেন। দেশের সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আরও কার্যক্রম চলছে, সেখান থেকে রায় আসলে আমরা এ অঞ্চলের আরও উন্নতি করতে পারবো। একইসঙ্গে লাদাখ এবং সিকিম নিয়েও আমাদের আলাদা চিন্তাভাবনা রয়েছে। ’
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দিল্লীর লালকেল্লায় কঠোর সামাজিক দূরত্ব এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিনটি উদযাপন করা হয়। এবারের আয়োজনে খুব বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল না। তাছাড়া এবার কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেনি।