ভ্যাকসিন আসার আগেই বাংলাদেশ থেকে কোভিড-১৯ চলে যাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে দ্বিমত

0
82

বাংলা খবর ডেস্ক:
ভ্যাকসিন আসার আগে বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাস চলে যেতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই মন্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

গতকাল জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন যে, হয়তোবা বেশিদিন লাগবে না বাংলাদেশ থেকে কোভিড চলে যাবে। ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কিনা জানিনা।

কিন্তু তিনি কোন যুক্তিতে এমন ধারণা পোষণ করছেন বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার করেননি।

এই ভাইরাসটি নিজে থেকে চলে যেতে পারে এমন কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেক এগিয়ে গেছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।

ওইসব দেশের সাথে বাংলাদেশ যোগাযোগ স্থাপন করেছে যেন কোথাও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সেটা দ্রুত নিয়ে আসা যায়। সরকার সব প্রস্তুতি রেখেছে বলে শোক দিবসের ওই অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

কিন্তু ভ্যাকসিন আসার আগে এই সংক্রামক ভাইরাস এমনিই চলে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক আহমেদ বলেন, “রোগতাত্ত্বিকভাবে বলা যাবে না যে ভ্যাকসিন নাও লাগতে পারে। সারা বিশ্ব ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসকে আয়ত্তে আনতে ভ্যাকসিন ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ করোনাভাইরাস কোন ডায়রিয়া বা সাধারণ ফ্লু এর মতো রোগ না।

”এটা ভীষণ সংক্রামক এবং এটা যতদিন মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে থাকবে, ততদিন এর মিলিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন আসলেই একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”


করোনাভাইরাস সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তাই করোনাভাইরাস বাংলাদেশ থেকে এমনিই চলে যাবে সেটা যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক কথা নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

একটা দেশের স্বল্প সংখ্যক জনগোষ্ঠী যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন তারপরও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তারা বলছেন, “অন্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে বাংলাদেশে সেটা সংক্রমিত হবে না, এটা হতে পারে না।”

উল্লেখ্য, গত পাঁচ মাসে সরকারি হিসেবে অন্তত ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।

জুলাই-অগাস্টেও মৃত্যুর হার গড়ে ২০%-২৪% এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যা বিগত মাসগুলোর তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের এই গ্রাফ উর্ধ্বমুখী থাকলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বাংলাদেশে কোভিড ১৯শে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে গেছে। সুস্থতার হার বেড়ে গেছে। এটা একটা বিরাট অর্জন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে এবং সুস্থতার হার অনেক ভালো – ৫০% এর বেশি।”

মৃত্যুর হার কমে যাওয়ায় মানুষের মনে সাহস এসেছে এবং বিশ্বের অনেক দেশের চাইতে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো বলেই হাসপাতালে ৭০% শয্যা খালি পড়ে আছে, এমনটা দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে ৪০০০- ৫০০০ চিকিৎসক টেলি-মেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ বাড়ি থেকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাওয়ার কারণে হাসপাতালে ৭০% বেড খালি পড়ে আছে। শুধুমাত্র মুমূর্ষু রোগীরা যাচ্ছেন। এখন আর কেউ রাস্তায় বা হাসপাতালের বাইরে বিনা চিকিৎসায় পড়ে নেই। এই সফলতাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।”


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন মানবদেহের ওপর ট্রায়াল চালানো হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়

চিকিৎসকদের এই ত্যাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের এই সফলতার কারণে বাংলাদেশের মানুষ সাহসের সাথে তাদের দোকানপাট খুলেছে, কারখানা খুলেছে, তারা প্রয়োজনে বাইরে যেতে সাহস করছে বলে জানান মন্ত্রী।

মানুষ জানে যে দেশে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এ কারণে তাদের আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।”

এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সেবাদানকারীদের বড় অর্জন বলে তিনি মনে করেন।

তার এমন ধারণা বাংলাদেশের বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর কারণ হিসেবে মি. হোসেন বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সময় হাসপাতালগুলোয় ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ছিল। অনেক রোগীকে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়া সম্ভব হয়নি। এই ভঙ্গুর পরিস্থিতির এখন কিছুটা উন্নত হলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়াকেই বেশি নিরাপদ বলে মনে করছে। এ কারণেই হাসপাতালে ভিড় কম।”

এছাড়া রিজেন্ট, জেকেজি, নিম্নমানের মাস্ক কেলেঙ্কারির পর যথার্থ হাসপাতাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা সামনে এসেছে।

এ নিয়ে আগে থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here