‘ বার বার রিজেক্ট হয়ে নিজেকে তুচ্ছ মনে করছিলাম ‘

0
84

শামস আফরোজ আরেফিন:
জীবনে যখন আমি দুঃখের সাগরে ডুবে ছিলাম, নানান সমস্যা আর না পাওয়ার ব্যথায় যখন আমি জর্জরিত হয়ে ছিলাম ও প্রতিটা ক্ষেত্রে বার বার রিজেক্ট হয়ে নিজেকে তুচ্ছ মনে করছিলাম, ঠিক তখনই আমি Thoughts of Shams নামের এই পেইজটা খুলি।

প্রথমে শুধু লিখতাম, মনের সব কথা লিখতাম, ভালো লাগতো। পরে আমার লিখার বিষয় গুলো নিয়ে ভিডিও বানানো শুরু করলাম ২০১৮ তে। বাহ্ দারুন লাগতে শুরু করলো আমার 😊 নিজের ভিডিও দেখে নিজেই হাসতাম আর কিছু সময়ের জন্য ভুলেই যেতাম যে আমার কোন দুঃখ আছে। অবাক হই ভেবে আমার সমস্যা সমাধান করতে কখনোই কেউ এগিয়ে আসে নি, কেউ কিন্তু কোনোদিন কোন খোঁজ নেয় নি যে আমার কষ্ট টা কোথায়? কারন আমি কে? আমি তো আর এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না!
অথচ আমার ভিডিও নিয়ে আর আমাকে নিয়ে, আমার পরিচিত মানুষগুলোর মধ্যে একটা নাড়া পরে যায়। হায়রে সমালোচনা রে! গেসে গেসে শেষ! এই মেয়ে নিচে নামায়া দিচ্ছে সবার মান সন্মান! আরে দেখে যান এই মেয়ে পড়া লেখা শিখে কি সব বলে! এসব বলে বলে আমার জানের চেয়েও প্রিয় নানুকে পর্যন্ত আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাওয়া হয়!

আর সো কল্ড ফ্রেন্ডস রা তো হেসেই খুন! আল্লাহ শামস এর এই অবস্থা! ভিডিও বানায়! রাবা হইতে আসছে। ছিঃ!

ওই মুহূর্তে মা ছিলেন পাশে, আর হাসবেন্ড বলল, উচিৎ কথা বলছো তো তাই তোমার পরিচিতদের গায়ে লাগছে! আর ফলোয়ার্সদের কথা কি বলবো! তাদের কাউকেই আমি চিনি না অথচ আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে। আমার হাসবেন্ড কেও কিন্তু শুনতে হয়েছিল, তোমার ওয়াইফ এগুলা কি করে! বন্ধ করাও এসব ভিডিও!

একবার আমিও ভাবলাম যে হ্যা কি করছি? নাহ মন দিয়ে পড়ি, সরকারি চাকরি বা ব্যাংকের চাকরি পেতেই হবে। বার বার ফাইনাল ভাইভা পর্যন্ত যেয়ে যেয়ে আবার সেই রিজেক্ট হওয়ার কাহিনী শুরু হলো। ভিডিও বানানো বন্ধ। এদিকে মানষিক ভাবে আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাওয়া আমি।

একদিন ঠিক করলাম আমি আর ব্যাংকের জন্য চেষ্টা করবো না! ঢুকলাম এক স্কুলে৷সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আর বেতন ১৫০০০ টাকা। যা বুঝলাম আর দেখলাম যে টিচারের চেয়ে আমাদের বাসার খালা, যিনি আমার মাকে কাজে সাহায্য করেন, তার মাষিক ইনকাম আর সন্মান আমার চেয়েও বেশি। কিন্তু চাকরিটা তাও করে যাচ্ছিলাম, আর পাশাপাশি টুকটাক ভিডিও।

২০২০ সাল করোনা এসে হাজির। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা। ঘরে বসেই স্কুলের কাজ করছি বাট বেতনের খবর নাই। মেজাজ খারাপ হলো ব্যাটা তুই বেতন দিতে পারতেসিস না আবার একটার পর একটা কাজ চাপায়া দিতেসিস! মা বলল, ছাড় এই ঘোরার ডিমের চাকরি। আল্লাহ ভরসা ভালো কিছুই হবে। আমার জামাই বলে এই ফালতু চাকরি ছেড়ে দাও, তুমি কি না খেয়ে মরবা?
আসলে আমি তো নিজে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। আমার পরিচিতরা ও তাদের ছেলে মেয়েরা যে ৪০ ৫০ ৬০ ৭০ হাজার টাকার চাকরি করে। আমারও তো কিছু একটা করতে হবে!

নাহ্, পরে আম্মুর কথাটাই শুনলাম। চকরি টা ছেড়ে দিলাম। একটা কথা বলে রাখি, আমি চাকরি ছাড়ার পরও তিন মাস সেই স্কুলের টিচাররা কোন বেতন পায় নি কিন্তু সেই লোক কোরবানিতে আবার ১ লাখ টাকার গরু কিনে ছবি পোস্ট করে দাম সহ। এটা কেমন ধর্ম পালন করা হলো সেটা আমার বুঝে আসলো না। তার প্রতিষ্ঠানের মানুষ না খেয়ে মরে আর সে গরু নিয়ে বাহাদুরি করছে।

আমার শেষ মাসের স্যালারি টা আজও সেই প্রতিষ্ঠান থেকে দাওয়া হয়নি। কিন্তু আমার যে কোন আফসোস নেই। চাকরি ছেড়ে একটার পর একটা ভিডিও বানাই আর প্রত্যেকটা ভিডিও সেই লেভেলের ভাইরাল হয়। ইউটিউব আর ফেসবুক থেকে সমানে টাকা আসতে শুরু করলো। চারিদিক থেকে স্পনসরশীপের অফার। আমার জীবন যেন এক পলকে পাল্টে গেল। আমি খুশিতে পাগল হতে যেয়েও পারছি না! যেই ভিডিওর কারনে আমাকে নিয়ে যারা এতো কথা বলেছে তারাই এখন আমার রেফারেন্স দেয়, শামস তো আমার ফ্রেন্ড, আমার আত্মীয়, আমার পরিচিত!

আর হ্যা একটা কথা, আজ আমি সেই ব্যাংক গুলোর ভাইভা বোর্ডে বসে থাকা লোকগুলোকে মন থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই যারা আমাকে রিজেক্ট করেছিলেন। আপনারা আমাকে রিজেক্ট না করলে আমি হয়তো কখনোই এই জায়গায় আসতে পারতাম না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here