বাংলা খবর ডেস্ক:
ইতিহাস গড়া হলো না প্যারিস সেন্ট জার্মেইকে (পিএসজি ‘র। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি জেতাতে পারলেন না নেইমার-কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। রোববার পর্তুগালের লিসবনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মান জায়ান্টদের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ফরাসি উইংগার কিংসলে কোমান।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এটি বায়ার্নের ষষ্ঠ শিরোপা। সবশেষ ২০১৩তে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এ টুর্নামেন্টে বায়ার্নের সমান শিরোপা রয়েছে লিভারপুলের। বায়ার্ন-লিভারপুলের চেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছে শুধু এসি মিলান (৭) ও রিয়াল মাদ্রিদ (১৩)।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের মধ্য দিয়ে বার্সেলোনার পর দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লো বায়ার্ন। প্রথমবার তারা ট্রেবল জেতে ২০১৩ সালে ইয়ুপ হেইঙ্কেসের অধীনে।
সাত বছর পর আরেক জার্মান কোচ হ্যানসি ফ্লিকের অধীনে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে ফিরলো বাভারিয়ান খ্যাত ক্লাবটি। আর প্রথমবার ফাইনালে ওঠা পিএসজিকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো রানার্সআপ হয়েই।
লিসবনের এস্তাদিও দা লুজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের প্রথমার্ধে লড়াইটা ছিল প্রায় সমান-সমান। এই অর্ধে সেরা পারফরমার দুই গোলরক্ষক। ম্যানুয়েল নয়্যার ও কেইলর নাভাস উভয়েই একটি করে সেভ করেছেন। আর একবার লেভানদোস্কিকে গোলবঞ্চিত করেছে পোস্ট। আর সুযোগ নষ্ট করেছেন এমবাপ্পে। ১৯তম মিনিটে নেইমারের প্রচেষ্টা দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন বায়ার্নের জার্মান গোলরক্ষক নয়্যার। এমবাপ্পের থেকে বল পেয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েছিলেন নেইমার। সামনে ছিলেন শুধু নয়্যার। নেইমারের মাটি কামড়ানো শট পা দিয়ে আটকে দেন বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষক।
২২তম মিনিটে লেভানদোস্কির শটে আঘাত হানে পিএসজির গোল পোস্টে। পরের মিনিটেই ডি মারিয়ার শট পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায় বাইরে। ৩২তম মিনিটে লেভানদোস্কিকে হতাশ করেন নাভাস। ডিবক্সে সার্জ নাব্রির ভাসানো ক্রস থেকে হেড নেন লেভা। তবে ফাঁকি দিতে পারেননি নাভাসকে। ক্ষিপ্রতায় বল ঠেকিয়ে দেন এই কোস্টারিকান গোলরক্ষক। ৪৫তম মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপ্পে। পোস্টের মাত্র ১০ গজ দূরে থাকা এমবাপ্পেকে পাস দেন আন্দার এরেরা। কিন্তু বলটা সরাসরি নয়্যারের কাছে মারেন এমবাপ্পে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বায়ার্নের দাপট। ৫৯তম মিনিটে এগিয়ে যায় ক্লাবটি। ২০ গজ দূর থেকে জশোয়া কিমিচের ক্রস থেকে হেডে পিএসজির জালে বল পাঠান কিংসলে কোমান। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না নাভাসের।
পিছিয়ে পড়ে মরিয়া হয়ে উঠেন নেইমাররা। ৬৬তম মিনিটে পিএসজিকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপ্পে। ডি মারিয়ার বাড়ানো বলে ঠিকমত পা ছোঁয়াতে পারলেই গোলটা পেয়ে যেতেন। তিন মিনিট পর মার্কিনহোসের মাটি কামড়ানো শট ঠান্ডা মাথায় পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন নয়্যার। পিএসজির সমতা ফেরার শেষ সুযোগটি আসে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে (৯০+২ মিনিট)। কিন্তু ডিবক্স থেকে নেইমারের নেয়া শট চলে যায় গোল পোস্টের বাইরে দিয়ে। এরইসঙ্গে হারটাও নিশ্চিত হয়ে যায়
পিএসজির।
স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় কাঁদলেন নেইমার:
২০১৭ সালে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনার মতো ক্লাব ছেড়ে নেইমার প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) এসেছিলেন ক্লাবটির জার্সিতে বিশ্বসেরার আসনে বসতে। প্রথম তিন মৌসুমে একাধিকবার ঘরোয়া আসরের শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন। তবে ইনজুরি সমস্যায় চ্যাম্পিয়ন্স লীগে পিএসজির জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। চতুর্থবারের চেষ্টায় পিএসজিকে তুললেন ফাইনালে। ফরাসি জায়ান্টদেরও এটা প্রথম ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ফাইনাল। পর্তুগালের লিসবনে শিরোপার মঞ্চে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০তে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে পিএসজির। হৃদয় ভেঙেছে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারেরও। ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজতেই হৃদয় ভাঙার সেই বেদনায় চোখের জলে ভেসেছেন নেইমার।
ম্যাচের শুরুতেই ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়াল নয়্যার দারুণভাবে রুখে দেন নেইমারকে।
এরপর নেইমার বেশ কয়েকটি গোল করার মতো পাস বাড়িয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে। ব্যর্থ হয়েছেন দু’জনই। এত কাছে এসেও গড়া হলো না ইতিহাস। ম্যাচ শেষ হতেই চোখের জল আটকাতে পারলেন না নেইমার। শিরোপা উৎসব বাদ দিয়ে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এলেন বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা ও কোচ হ্যানসি ফ্লিক।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন নেইমার। পিএসজি কোচ টমাস টুখেল ও সভপাতি নাসের আল খেলাইফিকেও দেখা গেছে নেইমারকে সান্ত্বনা দিতে।
২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে জিতেছিলেন প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা। কাতালানদের ইউরোপসেরা করতে বড় অবদান ছিল নেইমারের। তিনি চেয়েছিলেন মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে। ফাইনালে এসে হৃদয় ভাঙার বেদনা তাই লুকিয়ে রইল না। নেইমারের চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ল পর্তুগালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্তাদিও দা লুজ স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায়।
প্যারিসজুড়ে সারারাত তাণ্ডব:
১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম ফ্রান্সের কোনো একটি দল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিল।
জিতলেই ২৭ বছর আগে স্বদেশী ক্লাব মার্সেইয়ের পাশে নাম লেখাতে পারত পিএসজি।
আর শিরোপার এত কাছাকাছি এসে তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া প্রচণ্ড রকমভাবে হতাশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পিএসজি সমর্থকরা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ইউকে জানিয়েছে, রোববার রাতে শিরোপা হারানোর বেদনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি প্যারিসের পিএসজি সমর্থকরা। তাই ম্যাচশেষে রাতেই প্যারিসের রাস্তায় নেমে পড়েন সমর্থকরা। শহরের মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এমনকি গাড়ি পুড়িয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। সারারাত ধরে শহরজুড়ে এভাবেই তাণ্ডব চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আর পিএসজি সমর্থকদের এ বিক্ষোভ থামাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সারারাত ধরে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে হাজারও বিক্ষোভকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনে ফরাসি পুলিশ। ভোর ৩টা পর্যন্ত শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আগুন লাগানোর দায়ে কমপক্ষে ৮৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েকজন পিএসজি সমর্থক জানিয়েছেন, হতাশ হলেও এমন তাণ্ডব চালানোর মানে হয় না। এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করা যায় না। এর সঙ্গে তারা জড়িত নন।