দেশে এবার সাপের কামড়ে প্রাণহানি বাড়তে পারে

0
228
ছবি: সংগৃহীত

সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ:
দেশে এবার সাপের কামড়ে মানুষের প্রাণহানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সাপের খাদ্য সঙ্কট ছিল এবার সবচেয়ে বেশি। আর বন্যার পানি সরে গেলে খাবারের সন্ধানে সাপ ঝোপ-ঝাড় থেকে বেড়িয়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের বাসা বাড়িতে হানা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপের কামড় থেকে রেহাই পেতে গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে কৃষকদের মাঠে কাজ করতে বেশি সর্তক থাকতে হবে। এছাড়া দিনে-রাতে বাড়িতে ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

দেশে এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এ বছরের বন্যার পানি তিস্তা অববাহিকায় বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যায় যা ছিল এ অববাহিকার জন্য একটি রেকর্ড।এছাড়া স্থায়িত্বের দিক থেকেও এ বন্যা এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। স্থায়িত্বের দিক থেকেও এই বন্যা ১৯৯৮ সালের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। দেশে সাধারণত বছরে দুই ধাপে বন্যা আসে। জুলাই-আগস্টে প্রথম ধাপের একটি। এরপর আসে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। এবারের বন্যা জুনের শেষের দিকে আগাম শুরু হয়েছে যা এখনো চলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তবে সেপ্টেম্বরে আরেকটি বন্যা আসার। দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার কারনে সাপের এবার খাদ্য সঙ্কটও দেখা দেবে। এজন্য বন্যার পর পর দেশের গ্রামাঞ্চলে সাপের উপদ্রুপ বেড়ে যেতে পারে।

সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা: রোবেদ আমিন বাংলা খবরকে জানান, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরে প্রায় পাঁচ লাখ আশি হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যান। দেখা গেছে, প্রতি বন্যায় অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই- এ তিন মাস সাপের দংশন এবং তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ ছাড়াও ঢাকার আশে পাশে নিন্ম জলাভুমেিত সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। জানা গেছে দেশে যেসব সাপ রয়েছে তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। সাপে কাটার ঘটনা গ্রামাঞ্চলে, এবং কৃষি-ক্ষেত খামার এলাকায় বেশি ঘটে থাকে। এছাড়া স্থলভূমিতে থাকা সাপ পায়ে বেশি দংশন করে।

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. নূর জাহান সরকার বলেন, যেহেতু বন্যা দীর্ষস্থায়ী হচ্ছে তাই সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী এখন তাদের জান-প্রাণ বাঁচানোর তাগিতে প্রাকৃতিক নিয়মেই এক সাথে থাকে। তবে বন্যার পানি সরে গেলে এরা কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেমন ছুটবে, এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়িঘরেও ঢুকতে চেষ্টা করবে। এর কারন হচ্ছে তীব্র খাদ্যেও তীব্র সংকট। সাপ তাই ছুটবে কৃষি ক্ষেতে যাবে ইদুরসহ অন্যান্য পোকামকড় ক্ষেতে। এছাড়া বাড়ি ঘরেও যাবে খাবারের সন্ধানে। কৃষি ক্ষেতে কৃষকরা কাজে গেলে সাপের আচমকা আক্রমনে কৃষকরা যেমন শিকারে পরিনত হতে পারে। তেমনি বাসাবাড়ি ঘুমে মধ্যেও সাপের ছোবলের শিকার হতে পারেন অনেকে। কারণ সাপ খাবারের সন্ধানে বিছানা উঠে যেতে পারে । লেপ তোষকের ভেতরের আশ্রয় নিতে পারে। আবার আশ্রয় নিতে পারে গ্রামাঞ্চলে রান্না ঘরের পাশাাশি হাস-মুরগির বাসায়। যদিও সাপ একটি নিরীহ প্রাণী তারপরেও সে ভুল বুঝে বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা যে কোন মানুষকে কামড় বসিয়ে দিতে পারে। তাই এসময়ে গ্রামে রাতে-দিনে ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়েই ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন ড. নূর জাহান সরকার । এছাড়া গরুর খোয়ারের পাশাপাশি হাঁস- মুরগির খোয়াড়ের মালিকদের সর্তক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here