চীনা ভ্যাকসিন: বাংলাদেশে ট্রায়াল কীভাবে হবে?

0
94

বাংলা খবর ডেস্ক:
অনেকদিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চীনা কোম্পানির টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ট্রায়ালের কাজটি করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর,বি।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সাতটি হাসপাতালের নিজ থেকে আগ্রহ প্রকাশকারী চার হাজার দুইশ’ জন স্বাস্থ্যকর্মী বাছাই করে তাদের এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে।

যত দ্রুত সম্ভব তা শুরু করার জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে ট্রায়ালের পদ্ধতি

আইসিডিডিআর,বি-র কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছে, সেই নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

যাদের ওপর ট্রায়াল চালানো হবে, তাদের একদলকে দেয়া হবে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক উপাদানসহ আসল টিকা।

আরেকদলকে এমন কিছু দেয়া হবে, যাতে আসল টিকার কোন উপাদান থাকবে না (যেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্ল্যাসিবো বলা হয়)।

কিন্তু কাউকেই জানানো হবে না কাদের আসল টিকা আর কাদের প্ল্যাসিবো দেয়া হচ্ছে।

দুটি দলকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ছয় মাস।

এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টেলিমেডিসিন ইউনিট ইতোমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তা চালু থাকবে।

ট্রায়ালে অংশ নেয়া দুই দলের প্রত্যেকের সাথে টেলিমিডিসিন ইউনিট নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। তাদেরকেও বলা হবে, তাদের শরীরে ছোট-বড় কোন সমস্যা দেখা দিলেই তা সেই ইউনিটকে সাথে সাথে জানিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।

যাদের আসল টিকা দেয়া হবে এবং টিকার আসল উপাদান যাদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে না- এই দুই দলের প্রত্যেকের শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে-সে সব তথ্য নিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহে পর্যালোচনা করা হবে। এবং এ ব্যাপারেও একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে।

এই বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনা রিপোর্টের মাধ্যমে টিকার কার্যকারিতার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত আসবে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যবেক্ষণের শেষ সময় পর্যন্ত-এই পুরো সময়কে গুরুত্ব দিয়ে অনেকগুলো বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই সময়ে অংশগ্রহণকারীদের শরীর নিরাপদে আছে কিনা- সেটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নজরদারিতে রাখা হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী।

ট্রায়ালের জন্য লোক বাছাই

আইসিডিডিআর,বি-র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: কে জামান এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ট্রায়ালের মূল দায়িত্বে রয়েছেন।

ড. জামান বলেছেন, ঢাকায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সাতটি হাসপাতালে নিজ থেকে আগ্রহী স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে এই ট্রায়াল চালানো হবে।

“প্রোটোকল যেটা অনুমোদন হয়েছে, তাতে আমরা বলেছি, ঢাকার সাতটি কোভিড হাসপাতাল থেকে আমরা ভলান্টিয়ার নেবো। এই ভলান্টিয়াররা হবেন চিকিৎসক, নার্স এবং ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট। এই স্বাস্থ্য কর্মীদের ৪২০০জনকে আমরা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ট্রায়ালের জন্য নেবো।”

তিনি আরও বলেছেন, “যাদের বাছাই করা হবে, তাদের অবশ্যই স্বেচ্ছ্বায় আসতে হবে। কারণ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কেউ নিজে থেকে আগ্রহী না হলে জোর করে প্রয়োগ করা যায় না।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ঢাকায় চীনা দূতাবাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত চীনা নাগরিকদের মধ্যেও যারা স্বেচ্ছ্বায় আগ্রহী হবেন, তারাও ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন। চীনা দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারকে এমন প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে বাংলাদেশের আপত্তি নাই।

যে সাতটি হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে ট্রায়াল করা হবে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এই হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট-২, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কূর্মিটোলা হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল।


একটি ভ্যাকসিনই আপাতত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভরসা বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আইসিডিডিআর,বি জানাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে ট্রায়াল শুরু করার চেষ্টা করা হবে,তবে সুনির্দিষ্ট সময় এখনই তারা জানাতে পারছেন না।

আইসিডিডিআর,বি এর ড: কে জামান জানিয়েছেন, চীনা কোম্পানি এক লাখ ভ্যাকসিনসহ ট্রায়ালের সব খরচ দেবে।

এখন তারা সেই ভ্যাকসিন এবং যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরও বলেছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য তিনশ জনের মতো লোক নিয়োগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এখন এই ব্যবস্থাগুলোর কাজ তারা শুরু করবেন। এই প্রস্তুতিপর্বে কিছুটা সময় লেগে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সেজন্য তারা সুনির্দিষ্ট সময় বলতে পারছেন না।

ড: জামানের বক্তব্য হচ্ছে, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব ট্রায়াল শুরু করতে চাই। দুই মাসের মধ্যে ৪২০০ স্বাস্থ্যকর্মী বাছাই করে এই সময়ের মধ্যেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের কাজটা শেষ করতে চাই। এর পরে ছয় মাস তাদের পুরোপুরি পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের শারীরিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বুঝতে একটা লম্বা সময় প্রয়োজন হবে।”

কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রায়ালের পুরো কাজ করবে আইসিডিডিআর,বি। তাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা তারা নেবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here