‘মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ বের করার নির্দেশ দিয়েছি’

0
100
ফাইল ছবি

বাংলা খবর ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সাহারা খাতুন ও ইসরাফিল আলমের ওপর আনিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন সংসদ নেতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি সেখানে গেছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা সেখানে গেছে নমুনা সংগ্রহ করছে। এই ঘটনা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটেছে- সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। সেটি অবশ্যই বের হবে। আমি কারণ খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।

সংসদ নেতা বলেন, যখনই এধরনের ঘটনা ঘটে, সাথে সাথে আমাদের বার্ন ইনস্টিটিউটের ডা. সামন্ত লাল মেসেজ পাঠিয়েছেন। সার্বক্ষণিক মেসেজ পাঠাচ্ছেন এবং রোগীর অবস্থা জানাচ্ছেন। অনেকেই মারা গেছেন, বাকি যারা বেশিরভাগই তাদের পোড়া অবস্থা এত খারাপ তার পরও চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক যে নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে বিস্ফোরণ হলো।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ওইটুক জায়গায় ছয়টা এসি লাগানো। আবার খবর পাচ্ছি সেখানে গ্যাস লাইনের ওপরেই নাকি মসজিদটি নির্মিত। সাধারণত যেখানে গ্যাসের পাইপ লাইন থাকে সেখানে নির্মাণ কাজ হয় না। জানি না রাজউক অনুমতি দিয়েছে কিনা, এখানে অনুমতি তো দিতে পারে না। দেওয়া উচিত নয়। কেননা, এটি সব সময় আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন মসজিদে সবাই দান করে। কেউ এসি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ কতটা নিতে পারবে, সেই ক্যাপাসিটি ছিল কিনা- বিষয়গুলো দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে তার একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেছি বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংশ্লিষ্টদের প্রত্যেককে নির্দেশ দিয়েছি এর কারণ খুঁজে বের করার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের মসজিদগুলোতে অপরিকল্পতিভাবে এসি লাগাচ্ছেন বা যেখানে সেখানে মসজিদ গড়ে তুলছেন, আদৌ তা মসজিদ করবার জায়গা কিনা বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া বা সেখানে নকশা করা হয়েছে কিনা সেগুলো দেখা একান্ত প্রয়োজন। দুর্ঘটনা সত্যি খুব দুঃখজনক। যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, আর আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভ কামনা করি।

মৃত্যু বেড়ে ২৪:

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জন।

শনিবার থেকে রবিবারের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে মারা যাওয়াদের মধ্যে মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম ও দুই শিশু রয়েছে।

মৃতরা হলেন- ইমাম আবদুল মালেক (৫৫), মো. মিজান ওরফে নিজাম (৪০) ও নাদিম (৪৫), রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭), জুয়েল, রাসেল (৩৪), নয়ন (২৭), রাশেদ (৩০), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), মাইনউদ্দিন (১২) ও বাহারউদ্দিন (৫০), মো. বাহাউদ্দীন (৫৫), জুলহাস উদ্দিন (৩০), শামীম হোসেন (৪৮) ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন, দগ্ধদের মধ্যে বর্তমানে বাকি যারা ভর্তি রয়েছেন, তাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন।

তিনি জানান, দগ্ধ অবস্থায় যে ৩৭ জনকে বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে শনিবার রাত ১১টার মধ্যে মারা যান ২১ জন।

শুক্রবার রাতে এশার জামাত শেষে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে যায়। জানালার কাচ উড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বলা হচ্ছে, এসি বিস্ফোরণে এই ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হওয়া বায়তুস সালাত জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, ‘সাত দিন আগে মসজিদের প্রবেশ কক্ষের মেঝে দিয়ে বুদ্বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। ধারণা করছিলাম যে, এই গ্যাস পাশের গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বের হচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জে তিতাসের আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে গ্যাস লাইন সরিয়ে ফেলার মৌখিক আবেদন করি। অফিসের এক কর্মকর্তা গ্যাস লাইন সরানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চান।’

মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা :

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ এনে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ রবিবার ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির ফলাফল হাতে এলে মামলায় আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর দগ্ধ ৩৭ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যেক জেলায় বার্ন ইউনিট দরকার- মন্তব্য জাফরুল্লাহর

আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় দেশের প্রত্যেক জেলায় বার্ন ইউনিট থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আজ রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে এসে এ মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি বড় অঞ্চল। কিন্তু এখানে বার্ন ইউনিট নেই। নারায়ণগঞ্জে যদি সঙ্গে সঙ্গে ৫০ শতাংশ চিকিৎসা দেওয়া যেত তাহলে এতজনও মারা যেত না। সরকার হাজার হাজার টাকার মেগা প্রজেক্ট করছে কিন্তু সবকিছুর জন্য ঢাকায় আসতে হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় বার্ন হাসপাতাল করতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় কাউকে দায়ী করছেন কিনা জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সুশাসন না থাকায় আজ এ অবস্থা। আগুন প্রধানমন্ত্রী লাগায়নি, কিন্তু তাঁর দায়িত্ব সুষ্ঠু তদন্ত করা যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’

গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৭ জন মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধদের মধ্যে এপর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। বাকিরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here