বাংলা খবর ডেস্ক:
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে কখনো দৃশ্যপটে ছিলেন না তিনি। দুই-আড়াই বছর ধরে বর্তমান সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের বিরোধী পক্ষের কোনো সভা বা কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি শফিকুল ইসলাম মানিককে। তিনিই কিনা সভাপতি পদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন সবার আগে! গতকাল চুপিসারে এসে জমাও দিলেন। সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাল ফরম জমা দেন বাদল রায়ও। এখন তাদের কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে আগামী ৩রা অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে দেখা যাবে ত্রিমুখী লড়াই।
গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। সবার আগে বর্তমান সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে সম্মিলিত পরিষদের বাইরের সব প্রার্থী একে একে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যান। দুপুরে শরীয়তপুরের কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক চঞ্চলের মাধ্যমে সভাপতি পদে মনোনয়ন পত্র জমা দেন বাদল রায়।
শুরুতে চঞ্চল বাফুফে ভবনে ঢুকতে বাধার সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় বাদল রায়ের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাদল রায় যাতে তার মনোনয়ন ফরম জমা দিতে না পারে সেজন্য আমাকে বাফুফে ভবনে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। অতীতেও সালাউদ্দিন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন। আমাকে বাধা প্রদান তারই অংশ হতে পারে বলে মনে করি আমি।’ এরপরই সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেন শফিকুল ইসলাম মানিক। আগের দিনও কেউ জানতো না মানিক শীর্ষ পদে প্রার্থী হবেন! মজার বিষয় হলো, তিনি নিজেও নাকি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। গতকাল মনোনয়ন জমা দিয়ে মানিক বলেন, ‘আমি সকালেই সিদ্ধান্ত নিই নির্বাচন করবো। তাই বাফুফে ভবনে এসে ফরম নিয়েছি। বাফুফেতে পরিবর্তন দরকার। তাই পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে ভোটের ময়দানে এসেছি।’ নির্বাচন করার কারণ কি জানিয়ে মানিক বলেন, ‘আমার মনে হয়, ১৩৯ জন কাউন্সিলরের অধিকাংশই বাফুফের মসনদে পরিবর্তন চান। আমিও চাই। তাই দেশের ফুটবলের অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করছি।’ এ সময় তিনি আরো বলেন ‘যখন খেলেছি, নিজের জন্যই খেলেছি। অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে কোচিং করিয়েছি। এখানেও নিজের স্বার্থ ছিল। তবে এবার দেশের জন্য কিছু করতে চাই। দেশের ফুটবলের উন্নয়ন করতে চাই।’ কাউন্সিলরদের প্রতি আস্থা রেখে মানিক বলেন, ‘যদি কাউন্সিলররা নীতি ও নৈতিকতা বজায় রাখেন তবে আমি জয়ী হবো। ফুটবলকে ভালোবাসি এবং এর যৌবন ফিরিয়ে আনতে চাই বলেই নিজের গাঁটের এক লাখ টাকা খরচ করে সভাপতি পদে মনোনয়ন কিনেছি।’
গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে প্রার্থীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সদস্য প্রার্থী অমিত খান শুভ্রকে সমর্থন দিতে চলে আসেন সাবেক সহ-সভাপতি এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। সাবেক তারকা ফুটবলার ইকবাল হোসেন, ইলিয়াছ হোসেন, বিজন বড়ুয়া, নুর উদ্দিন নুরু উপস্থিত ছিলেন। প্রতিপক্ষের সদস্য প্রার্থী ফজলুর রহমান বাবুলকেও দেখা যায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে। তবে বেলা চারটার দিকে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের রুম থেকে বেরিয়ে এসে সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা একযোগে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি। পরে সভাপতি প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখনই কোনো কথা বলতে চাই না। সময় রয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষ হলে আমরা সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহার প্রকাশ করবো।’
এদিকে গতকাল ২১ পদের বিপরীতে ৪৯ জনই তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার করতে পারবেন প্রার্থীরা। ১৩ই সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর আগামী ৩রা অক্টোবর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত বাফুফে নির্বাচন।