এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ছাত্রলীগের ৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

0
113

বাংলা খবর ডেস্ক:
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় শনিবার সকালে ৯জনকে আসামি করে সিলেট শাহপরাণ থানায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার এম সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। রাতে ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সাইফুরের রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রচুর পরিমাণে দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সাইফুর রহমান (২৮), রবিউল ইসলাম (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫) ও তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮) ।

এদের মধ্যে অর্জুন ও তারেক (২৮) বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। আসামিদের মধ্যে সাইফুরের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের দিরাইয়ে, মাছুমের কানাইঘাটে, অর্জুনের জকিগঞ্জে, রনির হবিগঞ্জে এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জে।

ওদিকে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুক্রবার রাতে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এক দম্পতিকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সিলেটে জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেক্কারজনক এমন ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুরে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন করা হয়েছে। এরআগে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটে বিক্ষোভের ডাক দেন।

সিলেটে এসএমপির পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, আসামি ধরতে পুলিশ তৎপর। এরই মধ্যে ভিকটিমের জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। যাবতীয় আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন ছাড় নেই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির এক দম্পতি এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসেন। এসময় ছাত্রলীগকর্মী এম সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনির নেতৃত্বে স্বামী ও স্ত্রীকে পার্শ্ববর্তী কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। পরে রাত ১০টায় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষিতা ও তার স্বামীকে উদ্ধার করে। ধর্ষিতা বর্তমানে ওসামানী হাসপাতালে ওসিসিতে-এ চিকিৎসাধীন। ঐ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের প্রাইভেট কারও ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ প্রাইভেটকারও উদ্ধার করেছে।


এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শনে সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম কিবরিয়া। ছবি-সংগৃহীত

ঘটনার পর রাতভর অভিযান চালালেও কোন অভিযুক্তকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। সূত্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রথমে চাপা দিতে আপোস মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ও পুলিশ জেনে গেলে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে সময়ক্ষেপনের কারণে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

হল ছাড়ার নির্দেশ:
ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ অধ্যক্ষ দুপুরে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জরুরী বৈঠকে বসেছেন। করোনার সময়ে হোস্টেল বন্ধ থাকলেও ছাত্ররা কিভাবে ছাত্রাবাসে থাকছে এ প্রসঙ্গে জানা যায়, কিছু শিক্ষার্থী টিউশনি করানোর কারণে ছাত্রাবাসে থাকছেন। তাদেরকেও হল ছাড়তে হবে।

ছাত্রলীগ ক্যাডারের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা:
ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার এম. সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে শনিবার সকালে অস্ত্র আইনে মামলা করছে পুলিশ। এর আগে পুলিশ শুক্রবার রাত ২টার দিকে কলেজ ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে সাইফুরের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রচুর পরিমাণে দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। এই সময়ে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও সাইফুর রহমানসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডার ছাত্রাবাসে বসবাস করতো। ছাত্রাবাসে অবস্থান করে কলেজ ক্যাম্পাস, টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় তারা নিয়মিত ছিনতাই ও অপহরণ করতো। রাতে ছাত্রাবাসে জুয়া ও মাদকের আসরও বসাতো বলে সূত্র জানায়।

ইত্তেফাক/আরকেজি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here