তিস্তা, সীমান্ত হত্যাসহ বার্নিং ইস্যুর সমাধান হবে অগ্রাধিকার

0
83

বাংলা খবর ডেস্ক:
তিস্তা, সীমান্ত হত্যাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে যত বার্নিং ইস্যু রয়েছে তার গ্রহণযোগ্য (উভয়ের কাছে) সমাধান খোঁজাই হবে ঢাকায় নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের অগ্রাধিকার। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম আলাপে এমনটাই জানিয়েছেন নয়া দূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। গুলশান এভিনিউস্থ ইন্ডিয়া হাউজে অনুষ্ঠিত ওই ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিশন অনুযায়ী আমরা সবকিছু এগিয়ে নেব। তিস্তা চুক্তির প্রশ্নে তিনি বলেন এ জন্য বাংলাদেশকে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সীমান্ত হত্যা প্রশ্নে তার কথা ছিল এমন ‘একটি মৃত্যুও অনেক।’ সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অঙ্গীকারের বিষয়গুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সীমান্তে দুষ্টচক্রের উৎপাতের বিষয়টিও উপস্থাপন করেন তিনি। এর আগে লিখিত বক্তব্যে হাইকমিশনার বিক্রম বলেন, বাংলাদেশ সব সময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এই বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। বৃহস্পতিবার বিকালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মিশন শুরু হয়েছে বিক্রম দোরাইস্বামীর।

এরপরই নিজ বাসভবনে ফিরে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, পরিচয়পত্র উপস্থাপন করার পরপরই আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আমার জন্য সম্মান এবং সৌভাগ্যের। বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাতকে পরিচিত হওয়া এবং তাদের বন্ধুত্ব ও সমর্থন কামনার সুযোগ আখ্যা দিয়ে নয়া দূত বলেন, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটি কখনোই হ্রাস পাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্বের উৎস পারস্পরিক শ্রদ্ধা। ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি জাতিকে রূপদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, অসংখ্য মৃত্যু এবং মা বোনের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপেক্ষা করে অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সঙ্গে নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচার ও কঠোরতার মুখোমুখি হয়েছিলেন আপনারা। আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের সহায়তা করতে পারা ভারতের জন্য সবসময়ই সম্মানের হয়ে থাকবে যেমনভাবে, প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও আপনাদের সাহসের প্রতি ভারতে আজও আমরা সম্মান জানাই। সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে ভারত সমানভাবে সম্মানিত জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম গতিতে আপনাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে আমরা আপনাদের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার চেতনার প্রশংসা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সাফল্য এবং ক্রিকেট পিচে টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য মনোবলের উল্লেখ করে ভারতীয় দূত বলেন, সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে দেখে। ভারতও বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এই উপযুক্ত স্বীকৃতিতে আনন্দিত। মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বার্ষিকীÑ স্মরণীয় বছরগুলোর স্বীকৃতির প্রসঙ্গ এবং মুুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা জানিয়ে ভারতীয় দূত বলেন, আখাউড়া স্থল সীমান্ত থেকে সরাসরি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করে তাঁর উজ্জ্বল নেতৃত্বের প্রতি আমার বিনীত ও আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।

শুক্রবার যাচ্ছি সাভারে বাংলাদেশের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, আমি স্বীকার করি নিকটতম সম্পর্কের পরিচর্যা প্রয়োজন। আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোন সুযোগই নষ্ট করবো না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাবো। এই নির্দেশ আমাদের সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই কারণেই, কোভিড মহামারীর মধ্যেও, আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্থগিত করা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে তার প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আমরা খুব শিগগির বিমান যোগাযোগ চালু করতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় একটি বিশেষ ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা চালু করবো। তিনি বলেন, আমরা কোভিড মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমনভাবে কাজটি হবে যাবে বাংলাদেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করে এবং অগ্রাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করা যায়। একই সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের মূল্যবোধকে প্রকাশ করে ।

প্রেসিডেন্টের কাছে পরিচয়পত্র পেশ: এদিকে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের কাছে বৃহস্পতিবার পরিচয়পত্র পেশ করেন ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। সেখানে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, আমরা যতই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের নেতারা আমাদের সম্পর্কে জন্য তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের এই প্রচেষ্টায় গণমাধ্যমের বন্ধুদের সবসময় সহায়তা কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যাশা পূরণে আমি এবং আমার সহকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব এবং আপনাদের সমর্থন ও শুভেচ্ছার জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। আমরা বন্ধু, অংশীদার এবং প্রতিবেশী হিসাবে সর্বদা আপনাদের জন্য উপলব্ধ থাকব। ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন ভারত শুধুমাত্র বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী নয়, বিশ্বস্ত বন্ধুও। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক কূটনৈতিক পরিম-ল ছাড়িয়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন, নবনিযুক্ত হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাবনাময় প্রতিটি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন। নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। তিনি জানান ভারতে যে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদিত হবে সেটা বাংলাদেশ সময়মত পাবে। ভারতের নতুন হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে প্রেসিডেন্টের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here