শেষ বিতর্কের আগেই ট্রাম্প-বাইডেন বাহাস

0
120

বাংলা খবর ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১৩ দিন। এরপরই ফয়সালা হয়ে যাবে হোয়াইট হাউজের চাবি উঠবে কার হাতে। এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দেশজুড়ে জনমত জরিপে বেশ ভালভাবে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট দল থেকে প্রার্থী জো বাইডেন। তবে সুইংস্টেটগুলোতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ব্যবধান খুবই অল্প। ওদিকে সামনেই বৃহস্পতিবার এবারকার সর্বশেষ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক। সেই বিতর্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন দুই প্রার্থীই। রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিতর্ক আয়োজকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, শেষ বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতির ইস্যু থেকে বেরিয়ে এসে আয়োজকরা ডেমোক্রেট প্রার্থীকে সহায়তা করছে।

অন্যদিকে পাল্টা অভিযোগ ছুড়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারিতে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এ অবস্থায় সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্যাম্প থেকে কমিশন অন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটস’কে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে দুই প্রার্থীর মধ্যে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় বিতর্কের বিষয় নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ট্রাম্পের প্রচারণা বিষয়ক ম্যানেজার বিল স্টেপিয়েন বলেছেন, তৃতীয় বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতিতে ফোকাস করার বিষয়ে তাদের ক্যাম্পেইন থেকে এরই মধ্যে সম্মতি দেয়া হয়েছে। বিতর্কের মডারেটর এবং এনবিসি নিউজের প্রতিনিধি ক্রিস্টেন ওয়েলকার গত সপ্তাহে বিতর্কের টপিকস বা বিষয়বস্তু ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান পরিবার, আমেরিকায় বর্ণবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা ও নেতৃত্ব।

সোমবার অ্যারিজোনার প্রেসকটে বিকেলে নির্বাচনী র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি মিসেস ওয়েলকারকে একজন ‘র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্রেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বিতর্কে ওয়েলকার ভাল করবেন না বলে পূর্বাভাষ দিয়েছেন। অন্যদিকে জো বাইডেন তার নিজস্ব পররাষ্ট্র বিষয়ক রেকর্ডের কারণে এই নীতিতে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্টেপিয়েন। তিনি আরো বলেছেন, বিতর্ক বিষয়ক কমিশন জো বাইডেনকে তার নিজের কাহিনী থেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে। তিনি কমিশনকে জো বাইডেনপন্থি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, পুরো বিতর্ক একটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তারা উদ্দেশ্যমুলক অবস্থান নিয়েছে। ফলে জনগণ কেন তাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, তা নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। ওদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। সে সময়ে তার ছেলে হান্টার বাইডেনের ইউক্রেনের একটি ‘স্বার্থসংশ্লিষ্ট’ বিষয়ে ইমেইলের ব্যাপারে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বাইডেন।

জবাবে ডেমোক্রেট শিবির থেকে ট্রাম্পকে ঘায়েল করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডেমোক্রেটদের জাতীয় পর্যায়ের প্রেস সেক্রেটারি টিজে ডাকলো বলেছেন, প্রচারণা শিবিরগুলো এবং ডিবেট বিষয়ক কমিশন কয়েক মাস আগে একমত হয়েছে যে, বিতর্কে মডারেট বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যিনি উপডিস্থত থাকবেন, কি নিয়ে বিতর্ক হবে তা তিনিই নির্ধারণ করবেন। কিন্তু এখন ট্রাম্প শিবির মিথ্যা কথা বলছে। কারণ, ডনাল্ড ট্রাম্প এখন এই ভেবে ভীত যে, তাকে কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

ওদিকে প্রথম বিতর্কের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিশেষ করে এবারের প্রথম বিতর্কে জো বাইডেনের কথার মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্য ট্রাম্প খুবই সমালোচিত হচ্ছেন। ফলে বিতর্ক আয়োজকরা নতুন নিয়ম গ্রহণ করেছেন তৃতীয় ও চূড়ান্ত বিতর্কে। এর অধীনে মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেয়া হবে। ৯০ মিনিটের এই বিতর্ক কোনো বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই প্রচার হবে। একে ১৫ মিনিটের করে ৬টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি পর্বে দু’জন প্রার্থীই দু’মিনিট নিরবচ্ছিন্ন সময় পাবেন। এ সময় যিনি বক্তব্য রাখবেন, তখন তার প্রতিপক্ষের মাইক্রোফোন বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া বাকি সময় হবে মুক্ত বিতর্ক। এ সময়ে মাইক্রোফোন বন্ধ রাখা হবে না।

ট্রাম্প-বাইডেন শেষ বিতর্কে থাকছে ‘মিউট বাটন’

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শেষ বিতর্কে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলীয় দুই প্রার্থীকে বাধাহীনভাবে কথা বলার সুযোগ দিতে ‘মিউট বাটন’ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

নির্বাচনকে ঘিরে আয়োজিত প্রথম বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী একে অপরের কথায় বাধা দিয়ে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন তা এড়াতেই এবার এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রিপাবলিকান শিবির এ পরিবর্তন নিয়ে আপত্তি জানালেও বৃহস্পতিবার রাতের এ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছে।

৩ নভেম্বরের ভোটের আগে টেনেসির ন্যাশভিলে হতে যাওয়া এ বিতর্ক দুই প্রার্থীর জন্যই বিপুল সংখ্যক ভোটারের কাছে পৌঁছানোর শেষ সুযোগ বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত মাসের প্রথম বিতর্কে ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও সঞ্চালকের কথার মাঝখানে কথা বলে হট্টগোল বাধিয়েছিলেন।

এবারের বিতর্কে প্রতিটি ১৫ মিনিট পর্বের শুরুতে দুই প্রার্থীকে ২ মিনিট করে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। সেসময় তারা যেন বাধাহীনভাবে কথা বলতে পারেন, সেজন্য মিউট বাটন ব্যবহার করে অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ রাখা হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

সূচনা বক্তব্যের পর একে একে দুই প্রার্থীর মাইক্রোফোন অন করে দেওয়া হবে, যেন তারা কথা বলতে পারেন।

এই বিতর্কের বিষয়ে রিপাবলিকান প্রচার শিবিরের ব্যবস্থাপক বিল স্টেপিন বলেছেন, “পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সুবিধা করে দেওয়ার সর্বশেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে শেষ মুহুর্তে নিয়ম পরিবর্তন করলেও ট্রাম্প, জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্ক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রসঙ্গে বাইডেন শিবিরের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মুখোমুখি শেষ বিতর্কের আগেই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোটিরও বেশি ভোটার আগেভাগেই তাদের ভোট দিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সোমবার পর্যন্ত তিন কোটি ২ লাখ ভোটার হয় ডাকযোগে না হয় আগাম ভোটের কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ব্যালট জমা দিয়েছেন, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন প্রকল্পের তথ্য থেকে এমনটি জানা গেছে। এই সংখ্যা ২০১৬ সালের মোট ভোটের এক পঞ্চমাংশের বেশি বলে জানিয়েছে তারা।

কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার রোধে ৩ নভেম্বর ভোটের দিন ভিড় এড়াতে আরও কয়েকটি রাজ্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আগাম ভোটের কেন্দ্র খুলবে, সেক্ষেত্রে আগাম ভোটের পরিমাণ আরও বাড়বে।

এক ফ্লোরিডাতেই ডাকযোগে ২৫ লাখের বেশি ভোট পড়েছে, আগাম ভোটের প্রথম দিনেও রাজ্যটির কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।

ভোটারদের মধ্যে একজন, ৫৭ বছর বয়সী লুইস পেরেজ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্পের ব্যর্থতার কারণেই তিনি বাইডেনকে ভোট দিচ্ছেন।

“শুরু থেকেই এ নিয়ে মিথ্যা বলেছেন তিনি,” বলেছেন কোনো দলের সঙ্গেই সম্পর্ক না থাকা এ পেশাজীবী।

নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার আন্তোনিও সানচেজ বলেছেন তিনি অবশ্যই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

“তিনি স্বাধীনতার পক্ষে ও সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন,” বলেছেন কমিউনিস্টশাসিত কিউবা থেকে আসা এ প্রকৌশলী।

“আমার দুই মেয়েই চিকিৎসক। আমার মনে হয় না, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও এটা হওয়া সম্ভব ছিল,” বলেছেন ৫৯ বছর বয়সী সানচেজ।

রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসসের সর্বশেষ জনমত জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ফ্লোরিডায় ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যে খুবই সামান্য ব্যবধান দেখা গেছে, যাকে কার্যত ‘টাই’ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here