বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনের অমূল্য রত্ন – সঙ্গীত পরিচালক “আলম খান”

0
160

লাকী ইসলাম:

বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনের অমূল্য রত্ন – সঙ্গীত পরিচালক “আলম খান”।জনপ্রিয় মহান শিল্পী পপগুরু আজম খান,তাঁর সহোদর।কথা বলায়,আড্ডায় প্রয়াত আজম খান যেমন সহজ সাধারণ ছিলেন, সুরকার আলম খানও ঠিক একইরকম।শুধু সহজ সাধারণই নন তাঁর মনটাও যেনো কোমল ফুলের মতো।জনপ্রিয় শিল্পী এন্ড্রু কিশোর
আলম খানের সুর করা বেশকিছু বিখ্যাত গান গেয়েছেন। এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর পর প্রয়াত শিল্পীর কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।কতটা নরম মনের হলে কিংবা কাউকে প্রিয় চোখে দেখলে মানুষ এভাবে কাঁদতে পারে!তাছাড়া এন্ড্রু কিশোরের প্লেব্যাক যাত্রাই শুরু হয়েছিলো আলম খানের সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার অচিনপুরের রাজকুমারী গানটির মাধ্যমে।এও এক অন্যরকম সুখ,দুঃখজাগানিয়া অনুভূতি।

রক,মেলোডিয়াস সব ধাচের সুর নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন তিনি। ছেলেবেলায় মাকে দেখতেন কাজের মাঝেও বিখ্যাত গানগুলো গুনগুন করে গাইছেন।চাকরিজীবী বাবা কোনো প্রোগ্রামে গেলে গান করতেন।সুতরাং গান গাওয়ার ইচ্ছা তাঁর মধ্যেও জন্মে।কিন্তু একসময় তাঁর মনে হলো শচীন কর্তাসহ সেসময়ের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকদের মতো তিনিও সঙ্গীত পরিচালনা করবেন,তাঁদের মতো হবেন।অবশ্য সেজন্য সুরকে জানতে হবে,তা নিয়ে প্রচুর কাজও করতে হবে।ব্যস,সঙ্গীতের গুরু ধরে তালিম নিলেন রাগ রাগিনীর উপর।

পাকিস্তান আমলে টেলিভিশনের বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে তিনি সুরকার হিসেবে কাজ করেছেন।এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন।১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সাথে ‘তালাশ’ সিনেমায় সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তকের’ সঙ্গীত পরিচালনাও তিনি করেন।১৯৭০ সালে বন্ধুর বাবা আব্দুল জব্বারের ‘কাঁচ কাটা’ সিনেমায় তিনি এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

গীতিকার মুকুল চৌধুরীর লেখা ‘ওরে নীল দরিয়া’ গত চল্লিশ বছরের বাংলা গানের তালিকায় শীর্ষসেরা।আর শীর্ষসেরা হবেই বা না কেন?সেই সময়ে বিশাল অর্কেস্ট্রার আয়োজন করে সঙ্গীত পরিচালক আলম খান গানটি সৃষ্টি করেছিলেন।গানটিতে ট্রেন, লাইন ক্রস করার সময় যে শব্দ হয় সেই লাইনের ইফেক্ট তিনি তৈরি করেছিলেন, কাঠের মধ্যে তিনটি খাঁচ কেটে তাতে আর একটি কাঠ দিয়ে শব্দ তুলে।ট্রেনের হুইসেল এর শব্দ ফুটিয়ে তুলেছিলেন বাঁশির মাধ্যমে।সাম্পানের পুরনো বৈঠার শব্দ সৃষ্টি করেছিলেন দুটি পাট কাঠি বেঁধে তাতে আর একটি পাট কাঠি দিয়ে শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে।সম্পূর্ণ গানে কী দারুণ মেধা যে তিনি প্রয়োগ করেছেন,তা জানা যায় গানটি নিয়ে তাঁর বিভিন্ন স্মৃতিচারণায়। তাই প্রয়াত পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বউ’ সিনেমার কালজয়ী ‘এই গানটির সাথে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে,থাকবে আলম খানের নামটিও।’৮৩ সালে অভিনেতা সোহেল রানা পরিচালিত নাগ পূর্ণিমা সিনেমায় গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’ গানটিতে রক ধাচ বসিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।দুর্দান্ত এই গানটি কণ্ঠে তুলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো গুণী শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের।গানটির রেকোর্ডিং সম্পন্ন হওয়ার পর শিল্পীর গলা বসে গিয়েছিলো।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কথা ও আলম খানের সুরারোপিত ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’ গানটি আজও তুমুল জনপ্রিয়।’ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ ‘চুমকি চলেছে একা পথে’ ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’ ‘কী জাদু করিলা’ ‘তুমিতো এখন আমারই কথা ভাবছো’ ‘সবার জীবনে প্রেম আসে, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘তোমরা কাউকে বলোনা’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ তাঁর সৃষ্ট সুরসমৃদ্ধ এই গানগুলো বাংলা চলচ্চিত্রের গানগুলোকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের আসন।

রজনীগন্ধা তাঁর প্রিয় ফুল। ‘আমি রজনীগন্ধা’গানটিতে তাই এমন মধুর সুর তিনি দিয়েছেন যেন তা মানুষের কান থেকে হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছে।

২০১০ সালে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে।ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করে তিনি সুস্থ হন।২০১৫ সালে হার্টে ব্লক ধরা পড়লে সেখানে রিং পরানো হয়।জানামতে বর্তমান তিনি সুস্থ আছেন।

গুণী এই সঙ্গীত পরিচালক ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাথী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ এই কীর্তিমানের সুস্থ সুন্দর দীর্ঘায়ুকামনা করছি।সেইসাথে তাঁকে তাঁর ৭৬ তম জন্মদিনে অনেক অনেক দোয়া ও শুভেচ্ছা।♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here