আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
নিচের ছবিটি দেখে কারো মনে হতে পারে টুকরো টুকরো করে কেটে সাজিয়ে রাখা উপাদানগুলো কবিরাজী দাওয়াই তৈরির জন্য হামানদিস্তায় পেষা হবে কিনা, অথবা পাত্রে সেদ্ধ করে পুষ্টিকর হালুয়া তৈরি হবে কিনা। কোনোটাই হবে না। আল্লাহর রহমতে ছেষট্টি বছর বয়সে একটু জোড়াতালি দিয়েও আমার দাঁত সক্ষম আছে। অতএব এ ধরনের কাঁচা বস্তু দিব্যি চিবিয়ে খেতে পারি। তবে হ্যাঁ, এগুলোর কোনো কোনোটির ওষুধি গুণ প্রচুর। কোনোটি হজমের ক্ষেত্রে একটু বিঘ্নের সৃষ্টি করতে পারে, সেগুলো পরিত্যাজ্য।
আমার খাদ্যাভাসে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। আমার ওজন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে একই রকম। আমার উদরে স্ফীতি নেই। এতে আমার স্ত্রী ক্ষুব্ধ। আমি নাকি প্রিন্স থাকতে চাই। এর সাথে সে আরো সুন্দর সুন্দর শব্দরাজি যোগ করে আমার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। প্রিন্স সম্পর্কে আমাদের সামনে এক সুদর্শন কিশোর বা তরুণের যে দৃশ্য ভেসে ওঠে এবং আমাদের নয়ন তৃষ্ণাকে পূরণ করে তার সাথে বাস্তবের প্রিন্সদের রূপ বা দেহসৌষ্ঠবের কোনো মিল খুব কম সময়েই থাকে। তবে প্রকৃত প্রিন্সদের বয়স বাড়লেও তারা প্রিন্সই রয়ে যায়। ইংল্যাণ্ডের প্রিন্স চার্লসের বয়স ৭১ বছর। রানি এলিজবেথের মৃত্যুর আগে চার্লসকে প্রিন্স হয়ে থাকতে হবে। সৌদি আরবে আমাদের দেখার সময়েই দুজন ক্রাউন প্রিন্স বাদশাহ হয়েছিলেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৭৭ বছর বয়সে। সত্তরোর্ধ বয়সে একজন পুরুষ নখদন্তহীন ব্যাঘ্র ছাড়া কিছু নন। মকরধ্বজ সর্বরোগহর দাওয়াই কতটুকু কাজে লাগে, তা জানি না। অমন বয়সে ত্বকে ভাঁজ পড়ে যায়। ঘন কালো কেশদাম শ্বেত শুভ্র রঙ ধারণ করে অথবা মাথা থেকে উধাও হয়। রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে দেহের কোণায় কোণায়। তবে কোনো বয়সেই মানুষের তারুণ্যের চেতনা উচ্ছাসের মৃত্যু হয় না। কারণ মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ থাকে। কবি আল মাহমুদ তাঁর “চক্রবর্তী রাজার হাসি” কবিতায় বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের আস্বাদন লাভের পর বলেছেন, “এছাড়াও আমার অন্য ইন্দ্রিয়ও আছে।”
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সাড়ে তিন মাস গৃহবন্দী করে রেখেছিল প্রকোপ একটু কমলে জুন মাসে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাই। দুই মাস পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে নিউইয়র্কে ফিরে আসার পর চৌদ্দদিন বাড়িতে বাধ্যতামূলক আইসোলেশন। করোনার হটস্পট থেকে নিউইয়র্কে ফিরলে প্লেনেই এই মুচলেকা দিয়ে আসতে হয়েছিল। তা না হলে ২,০০০ ডলার জরিমানা। এর মাঝেই করোনা টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। নিগেটিভ ছিল। সেপ্টেম্বরে কাজে যোগ দেই।
আমার খাদ্যাভাসে পরিবর্তন ঘটলে আমি অস্বস্থি বোধ করি। অতএব ঘুরে ফিরে একই ধরনের খাবার খাই। নিজেই ধুয়ে নেই, খোসা ছাড়াই, কুচি কুচি করে কাটি, কোনোটির জন্য শ্রেডার ব্যবহার করি। আজকের নাশতার উপকরণের মধ্যে রয়েছে: শসা, গাজর, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা টমেটো, সেলারি, লাল মূলা, কিসমিস এবং একটি সেদ্ধ ডিম। প্রতিটি উপকরণের পুষ্টি ও ওষুধি গুণ সীমাহীন। বিশেষ করে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে। বয়সে ভাটার টান পড়লে পুরুষদের প্রোষ্টেট এর সমস্যা হয়, অনেক সব্জি নিয়মিত খেলে প্রোষ্টেট সমস্যাকেও দূরে রাখতে পারেন। উপকরণগুলো মিশ্রিত করার জন্য কয়েকটি মরিচ, কয়েক কুঁচি পেঁয়াজ, পুদিনা পাতা, লেবুর রস, বিট লবন ও সরিষা তেল ব্যবহার করেছি। অনলাইনে এসবের পুষ্টিগুণ বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।
সকালে যতটুকু ক্যালোরি প্রয়োজন বর্ণিত সব্জিগুলোতে সে পরিমাণে নেই। শুধু কিসমিস ও ডিমে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। ও হ্যাঁ, একটা কমলাও খেয়েছি। সব মিলিয়ে ৩০০ ক্যালোরির মত হবে। সকালে ৩৫০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। আজ বাড়িতে শুয়ে বসে পড়াশোনা করে কাটাবো। অতএব ৩০০ ক্যালোরিতে চলে যাবে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক