২২ কোম্পানির বাস চলবে ৪২ রুটে

0
137

বাংলা খবর ডেস্ক:
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর ২৯১টি রুটে বাস চলাচল করছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নগরীতে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯ হাজারের বেশি। এরমধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি। ২০ রকমের নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলের সংখ্যা সাত লাখ ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক অনুপাতে রাজধানীতে তিন লাখের বেশি যানবাহন চলতে পারে না। যদিও নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করে কমপক্ষে তিনলাখ যানবাহন। অযান্ত্রিক ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলছে ১০ লাখের বেশি। এই প্রেক্ষাপটে নগরীতে যানজট সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না। তেমনি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছেনা। একের পর এক উড়াল সড়ক নির্মাণেও চলাচলের গতি বাড়ছে না সড়কে।

তাই যানজট নিরসন এবং গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর ৪২টি রুটে ২২ কোম্পানির মাধ্যমে বাস চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মঙ্গলবার এক বৈঠক শেষে একথা জানান।

নগর ভবনে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন বিষয়ে গঠিত কমিটির ত্রয়োদশ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মেয়র বলেন, আজকে মঙ্গলবার বৈঠকে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন প্রতিনিধিবৃন্দ। সেই প্রতিবেদন আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছি। ঢাকায় বাস চলাচলের ২৯১টি রুট রয়েছে, সেখানে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে আমরা রুট কমিয়ে ৪২টি করার চিন্তা করেছি। সেই ৪২টি রুটে আড়াই হাজার মালিকের বাস পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে আমরা ২২টি কোম্পানি দিয়ে পরিচালনা করব। এই ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে আমাদের বাস রুটগুলো পরিচালিত হবে।

এর আগে আনিসুল হক যখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন, সে সময় তিনি ঢাকার গণপরিবহন সঙ্কট লাঘবে বিদেশ থেকে চার হাজার বাস এনে সেগুলো সাতটি আলাদা কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পর বিষয়টি আর এগোয়নি।

তাপস বলেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে ঢাকার বাইরে থেকে কোন গণপরিবহনকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না। এখন যেমন অন্যান্য শহর থেকে বাসগুলো ঢাকায় ঢুকছে। গাজীপুর থেকে বাসগুলো মতিঝিল পর্যন্ত আসছে অথবা নারায়ণঞ্জ থেকে বাসগুলো চলে যাচ্ছে গাবতলী পর্যন্ত। এই পুরো বিষয়টাকে আমরা সমন্বয় করব, যাতে বাইরে থেকে যে বাসে করে যাত্রীরা ঢাকায় আসছেন, তারা ঢাকার সীমানা সংলগ্ন কোন একটি বাস টার্মিনালে নামেন। সেখান থেকে অন্য বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছবেন।

মেয়র বলছেন, এ ব্যবস্থা করা হলে ঢাকার ওপর চাপ ‘অনেক কমে যাবে’। আগামী ৮ ডিসেম্বর কমিটির পরবর্তী বৈঠক বসবে। তার আগে অংশীজনদের সঙ্গেও এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। তারা আরও বিশ্লেষণ করবেন। তারা ক্লাস্টার ও রুটগুলো নির্দিষ্ট করবেন। এটা করতে পারলে আমরা মনে করি একটি বড় ধাপ আমরা শেষ করব।

তাপস বলেন, এখন রাজধানীতে মাত্র তিনটি বাস টার্মিনাল আছে। এর মধ্যে দুটি উত্তরে, একটি দক্ষিণে। বাকি বাসগুলো রাস্তায় রাখা হয়। তাতে যানজট হয়। এসব বিষয় অলোচনায় ঢাকায় বাস রাখার জন্য প্রাথমিকভাবে দশটি টার্মিনাল করার প্রস্তাব এসেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা আরেকটি প্রতিবেদন চেয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে তারা দশটি টার্মিনালের কথা বলেছে। কোন কোন জায়গায় হতে পারে, এটা সকলে মিলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেবে। আমরা আগামী জানুয়ারির মধ্যে টার্মিনাল নিয়ে একটা প্রস্তাব দিতে পারব বলে মনে করি।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ এহসানে এলাহী, রাজউক চেয়ারম্যান মোঃ সাঈদ নূর আলম, বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব ও ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দীন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমাল উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে গত পাঁচ নবেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে হলে বাস রুট সংস্কারের কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেছেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর কাজটি আর এগোয়নি। এখন এ কাজটি এগিয়ে নিতে আমি দুই মেয়রকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক নিরাপত্তা : ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও উদ্যোগ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি আরও বলেন, সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার এখন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আরও ৩০ বছর আগে করার দরকার ছিল।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন যতই হোক, সড়কে এবং পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে, নিরাপদ করতে না পারলে আমাদের সকল উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here