বাংলা খবর ডেস্ক:
পরাজয় মানবেন না ট্রাম্প। শুরু করেছেন আইনি লড়াই। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ঘোষণা দিয়েছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়া মসৃণভাবে সম্পন্ন হবে। এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার কেন্দ্রীয় আইনজীবীদের ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ৩রা নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন হোয়াইট হাউজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার প্রথম অগ্রাধিকারে থাকবে করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলা। এ জন্য তিনি তার টিম নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন, যাতে হোয়াইট হাউজে পা রাখার পর পরই তিনি এ নিয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন! নির্বাচনের আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন একাধিকবার।
বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। তার সেই কথা এখন যেন সত্যে পরিণত হতে চলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্র হতে পারে। যদি ট্রাম্প ২০ শে জানুয়ারিতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করেন, তাহলে কি হবে! যদি তিনি আইনি লড়াই দীর্ঘায়িত করেন, তার ফয়সালা ওই সময়ের মধ্যে না হয় তাহলে কি হবে! এমন আলোচনা এখন সর্বত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ মনে করেন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বাইডেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন এমনটা মনে করেন শুধুমাত্র শতকরা ৩ ভাগ মানুষ। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার ট্রাম্পের নির্বাচনী টিম ঘোষণা দিয়েছে, তারা নির্বাচনের সরকারি ফল ঘোষণা স্থগিত করতে মিশিগান রাজ্যে মামলা করাছে। এর আগেরদিন একই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা পেনসিলভ্যানিয়া। এ রাজ্যের ভোটের ফল গণনার পর জো বাইডেন তার কাঙ্খিত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের রেকর্ড অতিক্রম করেন। ট্রাম্প টিম এর আগেই মামলা করেছে মিশিগান ও জর্জিয়ায় ভোটের বিরুদ্ধে। সে মামলাগুলো বিচারকরা এখনও শুনানিতে তোলেননি। তবে আইন বিশারদরা মনে করেন, ৩রা নির্বাচনের যে ফল তা পাল্টে দেয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে একজন পোস্টাল কর্মীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প শিবির মঙ্গলবার আরো পশ্চাতে চলে গিয়েছে। ওই পোস্টালকর্মী প্রথমে বলেছিলেন, পেনসিলভ্যানিয়াতে ব্যালট টেম্পারিং প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু পরে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের হাউজ কমিটির কাছে দেয়া বক্তব্যে তার প্রাথমিক বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এসব ঘটনা নির্বাচনের ফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন। তাই তিনি তার উপদেষ্টাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বুধবার এসব উপদেষ্টার সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আলোচনা হওয়ার কথা আগামী ২০ শে জানুয়ারি ক্ষমতা নেয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে। তার এই টিমে রয়েছেন অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। এই অন্তর্বর্তী টিমে রয়েছেন ডেমোক্রেটদের মূল অংশ থেকে শুরু করে সক্রিয়া অগ্রবর্তী অধিকারকর্মী। এতে আলোচনায় আসতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন, সম্পদের অসমতা ও অন্যান্য ইস্যু। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পরিবেশ বিষয়ক আইন করার ক্ষেত্রে যেসব মানুষ ছিলেন তাদেরকেও দলে টানছেন বাইডেন।
উল্লেখ্য, টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী পেনসিলভ্যানিয়া এবং নেভাদায় শনিবার ভোটে জয়ী হন বাইডেন। এর ফলে তার ২৭৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার বিজয় নিশ্চিত হয়। তবে এখনও কিছু রাজ্যে ভোটের ফল অনির্ধারিত। এর মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এগিয়ে আছেন শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পেয়ে। এখানে বাইডেন পেয়েছেন শতকরা ৪৮.৭ ভাগ ভোট। জর্জিয়ায় বাইডেন এগিয়ে আছেন শতকরা ৪৯.৫ ভাগ ভোট পেয়ে। ট্রাম্প পেয়েছেন শতকরা ৪৯.২ ভাগ ভোট। অ্যারিজোনায় বাইডেন এগিয়ে আছেন শতকরা ৪৯.৪ ভাগ ভোটে। এখানে ট্রাম্প পেয়েছেন শতকরা ৪৯ ভাগ ভোট। এ অবস্থায় কয়েকটি রাজ্যে নতুন করে ভোট গণনা হতে পারে। তবে তাতে নির্বাচনের ফল পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অন্যদিকে জো বাইডেনও স্পষ্ট। তিনি বলছেন, পরাজয় স্বীকার করতে ট্রাম্পের অনীহা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক আদর্শ বা রীতির লঙ্ঘন। তার কারণে তার পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বাইডেন মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি মনে করেন ট্রাম্পের পরাজয় স্বীকার করে না নেয়া তার জন্যই একটি বিব্রতকর ব্যাপার।
এ অবস্থায় রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্পের পতি। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। তিনি নিজেকে বিজয়ী দাবি করছেন। তার এই দাবির সঙ্গে রয়েছেন তার অনুসারী বেশ কিছু রিপাবলিকান। তারা বলছেন, নির্বাচনের ফল নিয়ে লড়াই চালানোর অধিকার আছে তার। তবে গোপনীয়ভাবে কেউ কেউ বলেছেন, এই দাবি করার জন্য ট্রাম্পের সামনে একটি সীমিত সময় আছে। ওদিকে ভেটেরেনস ডে উপলক্ষে বুধবার আরলিংটন ন্যাশনাল সেমিটারিতে অজ্ঞাত যোদ্ধাদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য দেয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। নির্বাচনের পর এটাই তার প্রথম জনসমক্ষে আসা। তবে এরও আগে তিনি দু’বার গলফ খেলতে বেরিয়েছিলেন।
ওদিকে এখনও পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন বাইডেন টিমের সঙ্গে কোন রকম সহযোগিতা করছে না। সরকারি বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে একটি বাজেট প্রস্তাব করতে হবে। ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরই তা করতে হবে। এ
অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অফিস থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না বাইডেনের অন্তর্বর্তী টিম।