যদি মরে যাই আর দুঃখ নেই

0
124

কামরুল হাসান:
এই যে বেঁচে গেলাম, এরপর যদি মরে যাই আর দুঃখ নেই। কত গান শুনছি, বই পড়ছি, নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছি- এমন সুযোগ কী কখনো পেয়েছি?
কাল চাঁদ দেখলাম, এক ফালি চাঁদ। ঢল জ্যোৎস্নার চেয়ে এক ফালি চাঁদ আমার বড় প্রিয়। যেন নববধূর ঘোমটার আড়াল চুইয়ে পড়া আলো ।
আমার বাসার ঘুলঘুলিতে একটি পাখি বাসা বেধেছিল। এতদিন দেখিনি। কাল দেখলাম। কোন পাখির বাসা তাও জানি না। এত না জানা নিয়ে বেঁচে আছি কী করে?। চন্দ্রবিন্দুতে চন্দ্রিল লিখেছেন, ‘বেঁচে থাকাটায় যেন সাদা হাতি’। জীবন্ত মানুষ সত্যি কি শ্বেতহস্তী?
আমাদের প্রাচীরের ওপারে এক চিলতে খেলার মাঠ। সকাল বিকেল ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে হৈ হুল্লোড় করে। সবাই বস্তির ছেলে। ওদের কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। ‘মেলায়-খেলায় টিকিট নেই, হাসপাতালে বেড নেই, বাড়িতে ঘর নেই, খেলবার মাঠ নেই, অনুসরণ করবার নেতা নেই, ওদের প্রতি সম্ভাষণে কারও দরদ নেই…’। এতদিন তার কিছুই দেখিনি, বরং বিরক্তিই ছিল। আজ মনে হলো, এত যে হইচই সবই কী কেবল বখাটেপনা, জীবনের উদযাপন নয়? আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল, এই ছেলেরা তোমাদের বল লাগবে? বল…।
করোনা আক্রান্ত হয়ে এতদিনের ঘরবন্দি জীবনে মনে হলো নির্জনতার চেয়ে কোলাহলই বড় মধুর। লালন তা না বুঝেই ভুল করে একতারা হাতে দিগন্তের দিকে হেঁটে গেছে। আর হাঁটু গেড়ে বসে নির্জনতার জয়গান করেছে। রবীন্দ্রনাথও উসকে দিয়েছেন- ‘আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে একলা চলো রে…’।
মহাভারতের সংকলক ব্যাসদেব তাঁর মা সত্যবতীকে একবার বলেছিলেন, মা, পৃথিবীর যৌবন গত হয়েছে। পাপে ভরে যাচ্ছে পৃথিবী, চলো বনে ফিরে যায়। ঋষি ব্যাসদেব কি জানতেন, মানুষ একদিন নির্জনতার বদলে কোলাহলের কাছে মাথা নত করবে, প্রাণ ভিক্ষে চাইবে।
কোলাহল যে কত জরুরী তা বোধ হয় সভ্যতাও এতদিন টের পায়নি। আজ হাত জোড় করে থ্রি ইডিয়টের সেই গানটি গাইতে ইচ্ছে করছে,
Give me some sunshine
Give me some rain,
Give me another chance
I wanna grow up once again.
কোলাহলের জয় হোক।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here