জলবায়ু পরিবর্তনে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

0
60

বাংলা খবর ডেস্ক:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। শনিবার ‘ক্লাইমেট অ্যামবিশন’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় তিনি কার্বন নিঃসরণ প্রতিশ্রুত মাত্রায় কমিয়ে আনারও আহ্বান জানান । এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে এই প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার। তাছাড়া চীনও এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ায় কারণে এই প্যারিস চুক্তির বিষয়ে আরো গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ওই শীর্ষ সম্মেলনে গুতেরাঁ এ আহ্বান জানিয়েছে। এ সময় গুতেরাঁ তার বক্তব্যে অন্য দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেন, কেউ কি এখন আর অস্বীকার করতে পারচ্ছি যে- আমরা দিন দিন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে একটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি? তাই বৈশি^ক তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে বিভিন্ন দেশের বর্তমান প্রতিশ্রুতিগুলো পর্যাপ্ত নয়।

তিনি আরো বলেন, পথ পরিবর্তন না করলে আমরা এ শতকেই গড় তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ কারণে আমি বিশ্বের সব দেশের সব নেতার প্রতি নিজ নিজ দেশে জলবায়ু রক্ষায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। বায়ুম-লে কার্বন নির্গমন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় না আসা পর্যন্ত এই জরুরি অবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানান গুতেরাঁ।

উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া ও প্রকৃতি। অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে হচ্ছে দাবানল। গলছে বরফের বিশাল বিশাল চাঁই। আর সেই বরফগলা পানি বাড়িয়ে দিচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন অনেকবার সতর্কতা দিয়েছে।

এবারের এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক বৃটেন। তারা শুক্রবার দিনশেষে নতুন একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৃটেন বলেছে, তারা ফসিল জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পগুলোতে সরাসরি সরকারি অনুদান বা সমর্থন বন্ধ করবে। জি-৭ ভুক্ত অন্য দেশগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে জলবায়ু বিষয়ক অধিকারকর্মীরা। তারা তেল ও গ্যাসভিত্তিক কোম্পানিগুলোতে সমর্থন বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। প্যারিস চুক্তির প্রতি নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত, জার্মানি ও ফ্রান্স।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একান্ত প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে স্বাক্ষরিত হয় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। এরপর থেকে উন্নত দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে বলা হয়। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে সফলতা খুবই কম। পরবর্তিতে প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন আবার ওই চুক্তিতে যোগ দেবেন বলে তার নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে চলমান করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশ লকডাউন ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে এ বছর কার্বন নিঃসরণ কিছুটা কমেছে বলে জানায় জাতিসংঘ। মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পরিবর্তে জীবাশ্ম নির্ভর জ্বালানির দিকে জি-২০ভুক্ত দেশগুলো তাদের প্রণোদনা শতকরা ৫০ ভাগের বেশি বৃদ্ধি করেছে। এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই অর্থ আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছ থেকে ধার নিচ্ছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউরো বাজেট ও কোভিড-পুনরুদ্ধার তহবিলের শতকরা ৩০ ভাগ খরচ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন খাতে। শুক্রবার তারা এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ১৯৯০ সালের মাত্রা থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণ শতকরা কমপক্ষে ৫৫ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে আরো অংশ নেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনও সহ ডজন খানেক দেশের সরকার প্রধান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here