আরও কঠিন হতে পারে করোনা পরিস্থিতি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

0
88

বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনাভাইরাস আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান।

বুধবার তিনি বলেন, করোনার নতুন ঢেউ যেভাবে ছড়াচ্ছে, বিশেষত উত্তর গোলার্ধে কোভিড ১৯-এর নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রথম দিকের চেয়ে কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় বছরটি আরও কঠিন হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যনতুন রূপে হানা দিচ্ছে করোনা। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। উপরন্তু বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

গেল ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৫ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে; একই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৬ লাখের বেশি।

এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মোট কোভিডে আক্রান্ত ৯ কোটি ২৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর প্রাণহানি প্রায় ২০ লাখ।

এমন সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান জানাচ্ছেন, মহামারীর দ্বিতীয় বছরে করোনা সংক্রমণের যে গতিশীলতা দেখছি সে বিষয়গুলো বিবেচনা করলে বলা যায় এটি আরও শক্তিশালী হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। এটি বর্তমানে বিশ্বের ২১৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের পরিসংখ্যান রাখা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৬ জন। আর মারা গেছেন ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ১৬২ জন।

কোভিড: মৃত্যু ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়াল

ওদিকে এক বছরেও করোনা মহামারীর দাপট কমেনি এতটুকু। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন ধরন। কোনো কোনো দেশে দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে। সর্বনাশা করোনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে সারাবিশ্বে ১৯ লাখ ৮৬ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই তথ্য ওয়ার্ল্ডওমিটারসের।

করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের পরিসংখ্যান রাখা আন্তর্জাতিক এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৬ জন। আর মারা গেছেন ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ছয় কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ১৬২ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৫। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯২৮ জন।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৮৩১ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন এক লাখ ৫১ হাজার ৭৬৫ জন।

ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। আক্রান্তে দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাতিন আমেরিকার দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৯ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন দুই লাখ ৬ হাজার ৯ জন।

প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। এটি বর্তমানে বিশ্বের ২১৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনা আক্রান্তরা নেগেটিভ হলেই সুস্থ নয়:

[প্রতিকী ছবি]

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেই যে তারা সুস্থ হয়ে গেছেন, এটা ঠিক নয়। করোনামুক্ত হওয়ার পর দুই থেকে তিন মাস চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরও হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ব্রেনসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের এক শ্রেণির ডাক্তার ও রোগীদের অবহেলায় অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

এদিকে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান। উপসর্গ থাকলেও দেরি করে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করে পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর দেখা যায়, তার আগেই এই ভাইরাস নীরবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ৫০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষতি করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।

চিকিৎসক গবেষকেরা জানান, কোভিড-১৯ মানবদেহের এমন কোনও অঙ্গ নেই যার ক্ষতি না করছে। ফুসফুস তো বটেই, এমনকি লিভার, হৃদপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ককেও ছাড়ছে না করোনা ভাইরাসের এবারের প্রজাতি। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে—অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরীরের এই ক্ষতিটা বোঝা যাচ্ছে করোনা নেগেটিভ হওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে। এই সমস্যা কারো কারো আরও পরে হয়। অতি সন্তর্পণে কোষের মধ্যে ঢুকে তা আত্মগোপন করে থাকে। ধীরে ধীরে কোষগুলোর ক্ষতি করতে থাকে। নীরবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ৫০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষতি করে থাকে। রক্ত জমে চাকা চাকা হয়ে যায়। হার্ট ও ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। তাই করোনা নেগেটিভ হওয়া মানেই কিন্তু পুরোপুরি রোগমুক্তি নয়। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর টানা দুই বার তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মিজানুরের নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরবর্তী চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ত্রুটি ছিল। সঠিক চিকিত্সা ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর নেগেটিভ রিপোর্ট আসা মানেই তাকে সুস্থ ভাবা ঠিক না। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু করোনা নেগেটিভ আসার পর তার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আবার কারোর উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরও অনেকের মাংসপেশি ব্যথা করে। ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, লিভারসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। তাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরও দুই থেকে তিন মাস চিকিত্সকদের পরামর্শে থাকতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্টের পরও যে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে, এই বিষয়টি এক শ্রেণির ডাক্তার ও রোগীরা অবহেলা করে। যার মাশুল দিতে হয় জীবন দিয়ে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগীর নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও দুই থেকে তিন মাস ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই সময়ে ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, ব্রেনসহ শরীরের সব অর্গানের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব অর্গানের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার পরীক্ষা করে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো চলাচল করা যাবে না।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা রোগীদের ফুসফুসের বেশি ক্ষতি হয়। তাই করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সাধীন থাকতে হবে। এক শ্রেণির ডাক্তারও এ বিষয়ে পরামর্শ দেন না রোগীদের। ফলে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে রোগী নিশ্চিন্তে পরিশ্রম করে। শরীরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে অক্সিজেন কমে যায় এবং হার্টবিট বেড়ে গিয়ে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, যাদের লিভারে সমস্যা নেই, তারা করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন সমস্যা হয় না। তবে লিভার সিরোসিসসহ লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় যারা আক্রান্ত তাদের করোনা হলে ঝুঁকি বেশি। লিভার সিরোসিসে আক্রান্তরা করোনা সংক্রমিত হলে রোগীদের ৪০ শতাংশই মারা যায়। যেসব ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের তা না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখার আগে সাবধানতা অবলম্বনের ওপর তিনি জোর দেন।

এ এম জেড হাসপাতালের মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সায়েম বলেন, নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও অনেক রোগী পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ এই সময়ে রক্ত ঘন হয়ে যায়। ফুসফুসে চাপ বাড়ে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ব্রেন ও হার্ট স্ট্রোক হতে পারে। ‘মাল্টিপল অর্গান ফেইল’ হয় অনেকের। তাই করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও সুস্থ ভাবার কোনও অবকাশ নেই। করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর এক থেকে দুই মাস ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্র: ইত্তেফাক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here