বাংলা খবর ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে শিগগিরই মৃত্যুর সংখ্যা সপ্তাহে লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি সেবা কার্যক্রমের প্রধান ডা. মাইক রায়ান। গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ কথা বলেন। আনাদোলু এজেন্সির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আবারও ভয়ঙ্কর হচ্ছে মহামারি করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এরই মধ্যে আবারও ভয়াবহ এই দুঃসংবাদ দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের ১৪৮তম সভা। সেই ভার্চুয়াল সভায় সোমবার ডা. মাইক রায়ান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহে ৫০ লাখ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারও ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহেই বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। হয়তো শিগগিরই বিশ্বব্যাপী প্রতি সপ্তাহে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু দেখতে হতে পারে আমাদের।’
বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ালো সাড়ে ২০ লাখ
বিশ্বে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। সর্বশেষ ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৪ হাজার ২৩২ জনে। আর এতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ২৩২ জনে। সুস্থ হয়েছেন ৬ কোটি ৮৬ লাখ ২৬ হাজার ৫০৬ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে এই তথ্য জানা যায়।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন ৪ লাখ ৮ হাজার ৬২০ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছেন। বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যাও দেশটিতে। এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৬ জন এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮৫ লাখ ১২ হাজার ২৩৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৩২৮ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৩ জনের।
করোনা: বিশ্বে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার এখন বৃটেনে:
হতাশাজনক এক ডাটা। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার এখন বৃটেনে। ১৭ই জানুয়ারি সমাপ্ত সপ্তাহে সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৯৩৫ জন মানুষ মারা গেছেন। এই সংখ্যা প্রতি ১০ লাখে ১৬.৫ এর সমপরিমাণ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিভিত্তিক গবেষণা টিম ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’য় সংকলিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে আর কোনো দেশেই বৃটেনের মতো মাথাপিছু মৃত্যুহার এত বেশি নেই। এর মধ্য দিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রকে অতিক্রম করেছে বৃটেন। ১১ই জানুয়ারি থেকে চেক প্রজাতন্ত্রে মৃত্যুহার ছিল সর্বোচ্চ। রোববার রাতে তাদের সর্বশেষ মৃতের তথ্যসম্বলিত তথ্য প্রকাশ হয়।
তাতে দেখা যায়, চেক প্রজাতন্ত্রে প্রতি ১০ লাখ মানুষে এই মৃত্যুহার ১৬.৩। রোববারও সেখানে মারা গেছেন ৬৭১ জন মানুষ। পর্তুগালে এই হার ১৪.৮২। স্লোভাকিয়ায় ১৪.৫৫ এবং লিথুয়ানিয়ায় এই হার ১৩.০১। সপ্তাহান্তে এবং সোমবার বৃটেনে মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে। এর কারণ, সেখানে এ সময়ে রিপোর্টিংয়ে পিছিয়ে থাকার জন্য এমনটা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, এ সপ্তাহ শুরুর পর থেকে বৃটেনে মৃতের হার আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
এতে আরো বলা হয়, বৃটেনে তৃতীয় দফায় দেশজুড়ে লকডাউন দেয়া হয়েছে। এ জন্য সেখানে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসতে পারে। সাত দিনে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে এক পঞ্চমাংশ। আগামী কয়েক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত অক্টোবর থেকে করোনা মহামারির এপিসেন্টার বা কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইউরোপ। এ অঞ্চলের ৫২টি দেশ এবং টেরিটোরিসে প্রতিদিন গড়ে ৫৫৭০ মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এই সংখ্যা শতকরা ১৭ ভাগ বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় গত সপ্তাহে মৃত্যুহার শতকরা ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ৮৬৯ জন মানুষ। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে গত এক সপ্তাহে মারা গেছেন ৫,৪২,৪১০ মানুষ। ফলে মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত। সেখানে গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ২৭৫১ জন মানুষ।
বৃটেনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, সেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯,২৪৩। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত ও মেক্সিকোর সম্মিলিত তালিকায় বৃটেন এখন পঞ্চম সর্ববৃহৎ মৃতের দেশ। কিন্তু অন্য দেশগুলোতে জনসংখ্যার আকার অনেক বিশাল। এর ফলে সেখানে মাথাপিছু মৃত্যুহার অনেকটা কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৩তম। সেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষে মৃতের হার ৪.৭২। মেক্সিকো অবস্থান করছে ২০তম অবস্থানে। সেখানে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুহার ৭.৭৫।
দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২০ মৃত্যু:
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৯৪২ জনের।
নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭০২ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ৩১ জনে।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৮২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৯৯ টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১১৫ টি, জিন-এক্সপার্ট ২৮ টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৬ টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭৪ টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭ টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৫৭ টি।
এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার চার দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৭ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২৯ জনের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও নারী ছয় জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ছয় জন, রাজশাহী বিভাগে দুই জন। এছাড়া খুলনা বিভাগে এক জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালেই মারা গেছেন ১৮ জন। বাড়িতে দুই জন রয়েছেন।
মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচ রয়েছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৮০ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯৩ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ৯৮ হাজার ২৯৭ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮৭ হাজার ২২৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১১ হাজার ৭২ জন।
ভারতে ভ্যাকসিন নিয়ে দুই জনের মৃত্যু, অসুস্থ ৫৮০
ফাইল ফটোভারতে করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার পর আরও একজনের মৃত্য হয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়ার তৃতীয় দিনে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে ভ্যাকসিন নিয়ে মারা গেলেন দু’জন। সোমবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে রোববার ৪৪৭ জনের দেহে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি একজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়। আর তৃতীয় দিন শেষে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৫৮০ জনের শরীরে। তবে অসুস্থ্য হয়ে পড়া এসব ব্যক্তিদের মধ্যে কারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার উদ্ভাবিত ‘কোভিশিল্ড’ আর কারা ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাকসিন নিয়েছেন, তা প্রকাশ করেনি সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে তাদের এক খবরে জানিয়েছে, ভ্যাকসিনেশনের তৃতীয় দিন শেষে ভারতে ৩ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মোট ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর মধ্যে মারা গেছেন দু’জন।
মৃত একজনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এসেছে। মৃত্যুর সঙ্গে তার ভ্যাকসিন নেয়ার কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হয়েছে। মৃত আরেকজনও ভ্যাকসিন নেয়ার পর হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তবে তার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এখনও আসেনি।
মৃতদের একজন উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের মোহিপাল সিং (৪৬)। সেখানকার এক সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ছিলেন তিনি। টিকা নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। দ্বিতীয়জন কর্ণাটকের বরালির ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। বলা হচ্ছে, এই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক-পালমোনারি ফেইলিওর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭ জনের মধ্যে তিনজন দিল্লির।
উল্লেখ্য, শনিবার ভারতে করোনার টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়। সারা দেশের ৩০০৬টি কেন্দ্রে একই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচীর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ জন করোনা টিকা পেয়েছেন।
‘ভ্যাকসিন নিয়ে অসম নীতির কারণে বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার মুখে বিশ্ব’
করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে অসম নীতির কারণে বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার মুখে বিশ্ব। এমন সতর্কতা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘ্রেব্রেয়েসাস। তিনি বলেছেন, দরিদ্র দেশগুলোতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের আগে ধনী দেশগুলোর যুবশ্রেণি এবং সুস্থ মানুষের টিকা নেয়া মোটেও ঠিক নয়। তিনি আরো বলেছেন, ৪৯টি ধনী দেশে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টিকা। সে তুলনায় একটি দরিদ্র দেশ পেয়েছে মাত্র ২৫টি ডোজ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গঠন করা একটি নিরপেক্ষ প্যানেল বলেছে, আরো আগে আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা উচিত ছিল জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থার। দ্রুততার সঙ্গে জনস্বাস্থ্যখাতে ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য চীনের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে এতে।
এখন পর্যন্ত চীন, ভারত, রাশিয়া, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সবাই করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন টিম। যেমন ফাইজারের টিকা তৈরি হয়েছে আমেরিকা-জার্মানির যৌথ প্রচেষ্টায়। এসব দেশ তাদের নিজেদের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা বিতরণকে প্রাধান্য দিয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস। এতে তিনি বলেন, একেবারে খোলামেলাভাবে আমাকে কথা বলতে হবে। বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব। এই ব্যর্থতার মূল্য দিতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মানুষকে। তাদের জীবন যাবে এবং জীবিকা বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন- ‘মি ফার্স্ট’ বা আমিই প্রথম নীতির ফলে নিজের কাছেই নিজেকে পরাজিত হতে হবে। কারণ, এর ফলে মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং মজুতের ধারণা উৎসাহিত হবে। এই কার্যক্রম করোনা মহামারিকে শুধুই দীর্ঘায়িত করবে। করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিধিনিষেধ প্রয়োজন। কারণ, এর ফলে মানবজাতির এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিও প্রলম্বিত হবে। তিনি বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের টিকা বিতরণ বিষয়ক স্কিম কোভ্যাক্স কার্যক্রমের ওপর তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতির কথা বলেন। জানান, এই কার্যক্রম আগামী মাস থেকে শুরু হবে। তিনি বলেন, সব সদস্য রাষ্ট্রের জন্য এই টিকা নিশ্চিত করা আমার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। আগামী ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মধ্যেই প্রতিটি দেশের কাছে করোনার টিকা দিয়ে তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এটা হবে করোনা মহামারির কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে একটি আশার প্রতীক।
এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮০টি দেশ। এই কার্যক্রমে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক টিকা বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপ। এর লক্ষ্য দেশগুলোকে একটি ব্লকে নিয়ে আসা, যাতে তারা ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির সঙ্গে আরো শক্তিশালী নিয়ে দাম কষাকষি করতে পারে। ডোনার বা দাতাদের আর্থিক সহায়তায় টিকা কিনতে চেয়েছে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের কিছু দেশ। এমন দেশের সংখ্যা ৯২। টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ৫টি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির কাছ থেকে এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০ কোটি ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে পেরেছে। আরো ১০০ কোটি টিকা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন। এর ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা টিকা বিতরণ শুরু করবো- বলেন তিনি।
তার এমন সতর্কতার জবাবে বৃটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, বিশ্বের সব দেশের কাছে করোনা ভাইরাসের টিকা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমর্থক, আর্থিক সমর্থনকারী এবং বৈশ্বিক কর্মসূচিতে অংশীদার বৃটেন। সবার জন্য যাতে টিকা নিশ্চিত হয় এ জন্য আন্তর্জাতিক এসব প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বেশি আর্থিক সমর্থন দিচ্ছে বৃটেন। এ জন্য কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে বৃটেন দিয়েছে ৫৪ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড। বৃটেনে কমপক্ষে ৪০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। ইংল্যান্ডে এখন যেসব মানুষের বয়স ৭০-এর দশকে এবং ক্লিনিক্যালি খুব ঝুঁকিতে আছেন, তাদেরকে দেয়া হচ্ছে টিকা।
করোনার ভয়ে তিন মাস বিমানবন্দরে, অবশেষে গ্রেফতার:
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিমানবন্দরে টানা তিন মাস কাটানোর পর অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন এক ব্যক্তি। ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ঘোরাফেরা করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার শিকাগো বিমানবন্দরে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আদিত্য সিং নামে ঐ ব্যক্তিকে।
বিমানবন্দরের কর্মীরা পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে একটি ভুয়া আইডি কার্ড এগিয়ে দেন ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবক। পরে দেখা যায়, কার্ডটি আসলে বিমানবন্দরের এক অপারেশন্স ম্যানেজারের যেটি গত অক্টোবরে হারিয়ে গিয়েছিল ।
পুলিশ বলেন, সিং গত ১৯ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলস থেকে শিকাগোর ও’হারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ বিষয়ে সহকারী স্টেট অ্যাটর্নি ক্যাথলিন হ্যাগার্টি বলেন, করোনার ভয়ে বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরতে ভয় পাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন আদিত্য।
জানা গেছে, আদিত্য সিং লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ধরনের অপরাধের রেকর্ড নেই। তিনি শিকাগো কী করতে গিয়েছিলেন, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।