ক্ষমতার পালাবদল: আজ হোয়াইট হাউজ ছাড়ছেন ট্রাম্প, আসছেন বাইডেন

0
108

বাংলা খবর ডেস্ক:

ক্ষমতার পালাবদলে আজ হোয়াইট হাউজ ছাড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে জো বাইডেনের। তার সঙ্গে শপথ নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে ক্যাপিটল ভবনের সামনের চত্বরে তার অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন জো বাইডেন। তার সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী। ডেলাওয়ারের অঙ্গরাজ্যের নিজ শহর উইলমিংটনকে বিদায় জানানোর পরে মেরিল্যান্ডে অ্যান্ড্রুজ ঘাঁটিতে পৌঁছেছেন বাইডেন। সেখানে পৌঁছানোর আগে তিনি ও তার স্ত্রী জিল বিমানে চড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।

২০০৮ সালে বারাক ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ৩৬ বছর ধরে সেনেটর থাকার সময় এখানেই থাকতেন জো বাইডেন। একটি বিদায়ী বার্তায় তিনি বলেছেন, যখন আমি মারা যাবো, ডেলাওয়ারের কথা আমার হৃদয়ে লেখা থাকবে।

এদিকে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাবেন ট্রাম্প। তিনি চেয়েছিলেন জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিদায় নিতে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। তাই কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই হোয়াইট হাউজ ছাড়ছেন। এর আগে বিদায়ী বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা যা করতে এসেছিলাম তা করেছি। আমি কঠিন লড়াই, সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করেছিলাম।’

বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সকল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে। তাই তিনি হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, আমাদের দেশের উদারতার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়া।’

শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে ওয়াশিংটন ডিসিতে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা। সেনাবেষ্টনির মধ্যেই শপথ নেবেন বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। এর আগে আর কোনো অভিষেক অনুষ্ঠান এমনভাবে হয়নি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ক্যাপিটল হিলের সেই ঘটনার পর থেকে পুরো ওয়াশিংটন কড়া নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং হোয়াইট হাউজের চারদিকে ধাতব বেড়া দেয়া হয়েছে।

সাধারণত যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, সেখানে তার শপথ গ্রহণ দেখার জন্য গুটিকয়েক মানুষকে ক্যাপিটলের সামনের ন্যাশনাল মলে আসতে দেয়া হবে। এমনকি এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ১৮৬৯ সালে সর্বশেষ অ্যান্ড্রু জনসনের পর এই প্রথম আবার এ ধরণের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। বুধবারই মি. ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে ফ্লোরিডায় তার অবকাশ যাপন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

বিদায় ট্রাম্প:

চার বছর আগে এমনই এক বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কখনো স্বভাবগুণে, কখনো আবার ক্ষমতাবলে সব কিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করা সেই ট্রাম্প আজ ক্ষমতা ছাড়ছেন অনেকটা অন্য রকমভাবে। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প আজ এতটাই বিপর্যস্ত যে নিজের উত্তরসূরিকে শুভেচ্ছা জানানোর মানসিক শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল না হলেও ‘স্বাভাবিক’ ছিলেন না ট্রাম্প। অন্তত নেতিবাচক নানা নজির তৈরি করায় মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটা আলাদা অধ্যায় হয়ে থাকবেন তিনি।

আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় (স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কমলা হ্যারিস। ওয়াশিংটনের ক্যাপিটলে হবে তাঁদের অভিষেক অনুষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি হোয়াইট হাউসে তাঁদের উত্তরসূরিদের স্বাগত জানান। কিন্তু জো বাইডেন ও জিল বাইডেন যখন হোয়াইট হাউসে পা রাখবেন, তখন ওয়াশিংটন শহরেই থাকবেন না ট্রাম্প ও মেলানিয়া। গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, আজ কাকডাকা ভোরেই হোয়াইট হাউস ছাড়ার কথা তাঁদের। সকাল ৮টায় মেরিল্যান্ড বিমানঘাঁটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন ট্রাম্প। এরপর সেখান থেকে যাবেন ফ্লোরিডায়, যেখানে আগেই নিজের সব আসবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় যখন বাইডেন শপথ নেবেন, তখন ফ্লোরিডায় অবস্থান করবেন ট্রাম্প। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে না থাকার কথা আগেই নিশ্চিত করেছেন তিনি। জো বাইডেন ও জিল বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে বরণ করে নেবেন প্রধান আপ্যায়নকারী টিমোথি হারলেথ। ট্রাম্পই এই হারলেথকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যিনি একসময় ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে চাকরি করতেন।

৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার কারণে ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। এফবিআইয়ের আশঙ্কা, ট্রাম্পপন্থীরা আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করতে পারে। এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোনো কর্মীও হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাককার্থি। যদিও তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে গতকাল আশ্বস্ত করেছেন দেশটির অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ক্যাপিটলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাঁদের অতীত ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। যদিও অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

বিকেলে শপথ অনুষ্ঠানের পর আরলিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রিতে আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাইডেন। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠান যখন শেষ হবে, ততক্ষণে বাইডেন ও জিলকে বরণ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলবে হোয়াইট হাউস।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ সকালের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের সবাই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। এরপর পুরো এলাকায় শুরু হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এ জন্য হোয়াইট হাউসের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেক কর্মী ভাড়া করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের গালিচা থেকে শুরু করে জানালার পর্দা—সবই পাল্টানো হবে বিকেলের মধ্যে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যে বিশ্ব ডোনাল্ড ট্রাম্প রেখে যাচ্ছেন, তা সামাল দেওয়া বাইডেনের জন্য খুবই কঠিন হবে। ৬ জানুয়ারির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে শুধু বিভাজনের রাজনীতির সূত্রপাতই ঘটায়নি, একই সঙ্গে কংগ্রেস ভবনকে রাজনৈতিক সহিংসতার মঞ্চ হিসেবে রূপ দিয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবেলাও বাইডেনের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া তাঁর জন্য পররাষ্ট্রনীতির হিসাব-নিকাশও জটিল করে রেখেছেন ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে কঠিন এক সমীকরণ তৈরি করেছেন বাইডেনের জন্য। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতেও পূর্বসূরি বারাক ওবামার পথে হাঁটেননি বাইডেন। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ‘একলা চলো’ নীতি প্রয়োগ করে বিশ্বদরবারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অনেকটা খাটো করে ফেলেছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি বাইডেন দিয়েছেন, সেটাকে অনেক দূরের গন্তব্য হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে বাইডেন যখন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তখন ডুমসডে ক্লকের কাঁটা মধ্যরাতের দিকে আরো ১০০ সেকেন্ড এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী অর্থে ডুমসডে ক্লকে যখন রাত ১২টা বাজবে, তখন বিশ্বে প্রলয় ঘটবে। বিশ্বে যখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন এই ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার দিকে এগিয়ে দেন এটির তত্ত্বাবধানে থাকা বিজ্ঞানীরা। ১০০ সেকেন্ড এগিয়ে যাওয়ায় এই ঘড়ির কাঁটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যরাতের সবচেয়ে কাছাকাছি চলে এসেছে। বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণে সেই কাঁটা কতটা পেছাবে, এখন সেই অপেক্ষায় থাকবে বিশ্ব। সূত্র : সিএনএন, এএফপি, গার্ডিয়ান।

মেয়াদের শেষ মুহূর্তে ৭৩ জনকে ক্ষমা করলেন ট্রাম্প:

হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার আগে ৭৩ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি এমন খবর দিয়েছে।

এর আগে বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমরা তা-ই করেছি,, যা করতে এসেছিলাম— এবং প্রত্যাশার চেয়েও বেশি করেছি।

ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিওতে এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি এক কঠিন লড়াই করেছি; কঠিনতম লড়াই… কারণ সে জন্যই আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের কাছে এখনও নিজের পরাজয় স্বীকার করে নেননি ট্রাম্প।

বুধবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে ডেমোক্র্যাটদলীয় বিজয়ী জো বাইডেনের।

ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ দুই সপ্তাহ ক্যাপিটল ভবনে প্রাণঘাতী দাঙ্গায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দ্বন্দ্বেই কেটে গেছে। টুইটার, ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমগুলোতে নিষিদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছে তাকে।

নির্বাচনের ফল উল্টাতে উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় ৬ জানুয়ারি এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

ভিডিওতে ট্রাম্প বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা হলো—আমরা আমেরিকান হিসেবে যা কিছু লালন করি, তার ওপর হামলা। এটি কখনও সহ্য করা হবে না।

ভিডিওতে উত্তরসূরি বাইডেনের নাম তিনি একবারেও মুখে নেননি।

কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর সিনেটেও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে ভবিষ্যতে কোনো সরকারি অফিসের জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না

সাবেক প্রধান কৌশলী স্টিভ ব্যাননকে ক্ষমা করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনিসহ মোট ৭৩ জনকে ক্ষমা ও ৭০ জনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।

বুধবার হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতির বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এমন খবর দিয়েছে।

অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ব্যাননকে ক্ষমা করেছেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রকল্পে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল ব্যাননের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাকে।

রাজনৈতিক জ্ঞানের তীক্ষ্ণতার জন্য তার পরিচিতি রয়েছেন।

‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ সঙ্গে নিয়ে যাবেন ট্রাম্প!

বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যা ৭টায় হোয়াইট হাউজ ছাড়তে পারেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ ছেড়ে তিনি উঠবেন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো’তে। সাধারণত, নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়ার পর সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট বিদায় নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় আজ রাত ১১টার দিকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের শপথ নেয়ার কথা। কিন্তু তার প্রায় ৪ ঘন্টা আগে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ, তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন পারমাণবিক কোড। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’। তিনি এই ফুটবল সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ফ্লোরিডায়।
সাধারণত এই ফুটবলটি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে দুপুরে হস্তান্তর করেন। এ সময়ে সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্টের নিউক্লিয়ার কোড নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে যে নিউক্লিয়ার ফুটবল দেয়া হয়, তার কোড সক্রিয় করে দেয়া হয়। এটি বিশেষ একটি ফুটবল। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট যেসব নির্দেশ ব্যবহার করে থাকেন তার সরঞ্জাম এবং কোথাও পারমাণবিক হামলা চালানোর সরঞ্জাম সংরক্ষিত থাকে। ফলে যতক্ষণ এই নিউক্লিয়ার ফুটবলের কোড নিষ্ক্রিয় করা না হচ্ছে, তা নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়ে গেলে কি ঘটতে পারে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ ছাড়া তিনি নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে কোনো চিঠি রেখে যাবেন কিনা হোয়াইট হাউজে, তাও স্পষ্ট নয়। ১৮৬৯ সালের পর তিনিই হবেন নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট।

সিএনএনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন বুলেটিন অব দ্য এটমিক সায়েন্টিস্টের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো স্টিফেন শওয়ার্টজ। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক ফুটবল ইস্যুতে আরো বেশি কাজ করা উচিত ছিল এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের। তিনি আরো বলেছেন, একই রকম কমপক্ষে তিন থেকে চারটি ফুটবল আছে। এর একটি থাকে প্রেসিডেন্টের কাছে। একটি থাকে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে। শপথ অনুষ্ঠানে এবং স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে। ২০ শে জানুয়ারি একটি ফুটবল চলে যাবে শহরের বাইরে। এর ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ব্রিফিকেসে শুধু একটি ফুটবল থাকবে। ফলে বাইডেনের জন্য অন্য একটি ব্যাকআপ রাখতে হবে।
এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় বহন করেন একটি প্লাস্টিক কার্ড। এটি বিস্কুট বলে পরিচিত। এতে এমনসব কোড আছে, তা দিয়ে প্রেসিডেন্টকে শনাক্ত করা যায় এবং প্রেসিডেন্টই পারমাণবিক অস্ত্র সক্রিয় করার একমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তি। জো বাইডেন শপথ না নেয়া পর্যন্ত পারমাণবিক হামলার কর্তৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ট্রাম্পকে দিয়েছে। এদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ডিএকটিভেটেড বা নিষ্ক্রিয় করে ফেলার কথা। সঙ্গে সঙ্গে বাইডেনের বিস্কুট সক্রিয় হয়ে যাবে। ট্রাম্পের নিউক্লিয়ার ফুটবলসহ তার ব্রিফকেসের ওজন হবে ৪৫ পাউন্ড। এটি বহন করবেন তার এক সহযোগী। দুপুরে যখন ওই নিউক্লিয়ার ফুটবল নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে তখন তিনি সহযোগীর মাধ্যমে ফ্লোরিডা থেকে এটি পাঠিয়ে দেবেন ওয়াশিংটন ডিসি’তে।
আগেই বলা হয়েছে, ১৮৬৯ সালের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন না ট্রাম্প। এই অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকা মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নয়। এর আগে শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন সাবেক ও দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন এডামস, ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জন কুইনসি এডামস এবং ১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যানড্রু জনসন। এর পর ট্রাম্প যোগ দিচ্ছেন তাদের দলে। তিনি হবেন এমন চতুর্থ প্রেসিডেন্ট। এখানে উল্লেখ্য, এই চার প্রেসিডেন্টই এক মেয়াদের ক্ষমতায় ছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিকে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা হিসেবে।

হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়ের পর কী করবেন ট্রাম্প?

বেশিরভাগ সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট তাদের অবসর জীবন কাটান গলফ খেলে, ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে, মোটা অঙ্কের সম্মানিতে বক্তৃতা দিয়ে কিংবা আত্মজীবনী লিখে। তবে গলফ খেলা ব্যতীত বাকি বিষয়গুলো সম্ভবত ডনাল্ড ট্রাম্পের জন্য প্রযোজ্য নয়।

বুধবার শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ। ১৮৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডরু জনসনের পর এবারই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির অনুষ্ঠানে থাকবেন না। ট্রাম্প এরপর কী করবেন তা নিয়ে সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর নেই। তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর কী করবেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প বলছেন, তিনি তার ব্যক্তিগত ক্লাব মার-এ-লাগোতে থাকবেন। তবে ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত ক্লাবটির প্রতিবেশী অনেকেরই আপত্তি আছে তার সেখানে থাকা নিয়ে।

৬ই জানুয়ারি এক বক্তৃতার মাধ্যমে সমর্থকদের উস্কানি দেন তিনি। তারই ফলে তার সমর্থকরা মার্কিন আইনসভা কংগ্রেস ভবন বা ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ চালায়।
আর ওই ঘটনায় তাকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন করেছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেট যদি এই অভিশংসন বহাল রাখে, তাহলে তিনি ভবিষ্যতে কোনো সরকারি পদে প্রার্থিতা বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না।

কর্পোরেট আমেরিকার অনেক বড় বড় কোম্পানি ট্রাম্পকে এড়িয়ে চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাকে অপসারণ করা হচ্ছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ তাকে ঘৃণা করে।

আবার দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তিনি প্রিয়পাত্র। ফলে ট্রাম্প আবারো প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ান আর না দাঁড়ান, তার রাজনৈতিক পুঁজি থাকছেই। তবে টুইটার প্রোফাইল না থাকায় নতুন অনুসারী খুঁজতে তার কষ্টই হবে। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমেও হয়তো তাকে অতটা জায়গা দেয়া হবে না। তাই গুঞ্জন উঠছে, রক্ষণশীলদের প্রিয় চ্যানেল ফক্স নিউজকে টেক্কা দিতে তিনি নিজেই খুলতে পারেন একটি টিভি চ্যানেল। আবার টুইটারকে টেক্কা দিতে নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও খুলতে পারেন তিনি। তবে অবসরকালীন সময়ে মামলার পর মামলায় জর্জরিত থাকবেন তিনি। ক্যাপিটল হিল হামলার আগ থেকেই তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা চলমান ছিল। ছিল ফৌজদারি তদন্তও। ফলে এমনটাও সম্ভব ট্রাম্প জেলেও যেতে পারেন!

কিন্তু ট্রাম্পকে হিসাবের বাইরে রাখা উচিত হবে না। নব্বইয়ের দশকে আটলান্টিক সিটি ক্যাসিনো দেওলিয়া হওয়ার পর তাকে হিসাবের খাতায় রাখেনি কেউ। কিন্তু এক দশক পর ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ শোর উপস্থাপক হিসেবে ফের তিনি আলোচনায় ফিরেন। আবার তার টেলিভিশন রেটিং যখন পড়তির দিকে ছিল, তখন তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। ‘বার্থার’ ষড়যন্ত্র প্রচারের মাধ্যমে তিনি নতুন একটি ডানপন্থি অনুসারীগোষ্ঠী তৈরি করেন, যারা তাকে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টও বানায়। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের কাছে হারলেও তার ভোটের ব্যবধান প্রত্যাশার চেয়েও কম ছিল।

রাজনীতি
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার আগ পর্যন্ত সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে ট্রাম্পই হবেন রিপাবলিকান পার্টির ধারকবাহক। ২০২৪ সালে হয়তো ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। কিংবা পার্টিতে কিংমেকার হবেন। এছাড়াও যেসব রিপাবলিকান তার বিরুদ্ধে গেছেন, যেমন, জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধও নিতে পারেন।
কিন্তু সব দৃশ্যপট পালটে যায় ৬ই জানুয়ারির পর। জানুয়ারির ১৫ তারিখে পিউ রিসার্চের একটি জরিপে দেখা যায়, মাত্র ২৯ শতাংশ জনগণ মনে করেন ট্রাম্প তার কাজে সফল। ৬৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা চান না ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতিতে বড় খেলোয়াড় হয়ে থাকুক।

এই দাঙ্গায় কনজারভেটিভ পার্টিতেও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির তৃতীয় সর্বোচ্চ নেতা লিজ চেনি সহ ১০ জন কংগ্রেস সদস্য ডেমোক্রেটদের পক্ষ নিয়ে ট্রাম্পের অভিশংসনে সহায়তা দিয়েছেন।

সিনেটে পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেলসহ বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ট্রাম্পকে অপসারণে তারা সমর্থন দিতে পারেন। ক্ষমতা থেকে বিদায়ের পরও সিনেটে বিচার চলবে। আর তা হলে, তিনি ভবিষ্যতে আর কোনো সরকারি পদে দাঁড়াতে পারবেন না।

রিপাবলিকানদের সমর্থক বলে পরিচিত একাধিক কর্পোরেশন বা ব্যবসায়ি গোষ্ঠী বলেছে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে ট্রাম্প যে প্রশ্ন তুলেছেন, আর তাতে যেসব রিপাবলিকান প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে, তাদেরকে তারা অর্থ দেবেন না।

কিন্তু তারপরও রিপাবলিকান পার্টির পপুলিস্ট উইং-এর সমর্থন ট্রাম্প পাবেন। ৮ই জানুয়ারি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন ট্রাম্পের মিত্র রোনা রমনি ও টমি হিকস। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ১০ জন রিপাবলিকান সদস্য অভিশংসনের পক্ষে থাকলেও, বেশিরভাগই বিরুদ্ধে ছিলেন। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বেশিরভাগ রিপাবলিকান ভোটার এখনও তাকে সমর্থন করেন। তারা তাকে দাঙ্গার জন্য দায়ীও করেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার পর টুইটার ট্রাম্পের ৮ কোটি ৮০ লাখ অনুসারী সমেত প্রোফাইলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এরপর ফেসবুক থেকেও তিনি নিষিদ্ধ হন। সেখানে রয়েছে ৩ কোটি অনুসারী। তবে ট্রাম্পের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ গত বছর ২৬ লাখবার ডাউনলোড হয়েছে। সেখানে ব্যবহারকারীদের ফোন নাম্বার রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টুইটার ও ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ হলেও রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের অনলাইন উপস্থিতি এখনো বেশ জোরালো। সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার সমস্যা হবে না। কিন্তু এদের বাইরে নিজেকে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়বেন তিনি। এছাড়া পেপাল সহ অনেক অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় অর্থ ও অনুদান সংগ্রহেও বিপদে পড়বেন তিনি।

দ্য ট্রাম্প প্রতিষ্ঠানসমূহ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী হিসেবে মূলত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। তার রয়েছে ট্রাম্প টাওয়ার ব্রান্ড। এছাড়াও নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে রয়েছে তার গলফ সেন্টার। কিন্তু ট্রাম্পের রাজনীতির কারণে তার রিয়েল এস্টেট, হোটেল ও গলফ কোর্স ব্যবসায় নেতিবাচকতা দেখা দিয়েছে। কেননা, এগুলোর বেশিরভাগই নিউ ইয়র্ক বা অন্যান্য ডেমোক্রেটঘেঁষা রাজ্যে।

ট্রাম্পের বেডমিনস্টার গলফ ক্লাবকে ২০২২ সালের পিজিএ গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে চার্লোটসভাইলে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের সমর্থনে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যের জের ধরে অনেকেই তার মার এ লাগো হোটেল গণহারে পরিত্যাগ করেছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে তার রিয়েল এস্টেট ব্যবসা মার খাচ্ছে।
ট্রাম্পের বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগের জিম্মা তার। বড় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডয়েচে ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করেছে বেশি। ঋনও দিয়েছে বেশি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা আর ট্রাম্পকে ঋণ দেবে না। সিগনেচার ব্যাংকের মতো আকারে ছোটো কিছু ব্যাংকও সামিল হয়েছে এই ঘোষণায়। মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠান কাশম্যান ওয়েকফিল্ড ও জেএলএলও তাকে পরিত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে, ফলে সম্পদ বিক্রি করে অর্থ জোগাড় করাও কঠিন হবে। তবে ট্রাম্প হয়তো আমেরিকার বাইরে, যেমন ব্রাজিল, তুরস্ক, ফিলিপাইন ও ভারতে ব্যবসা করতে পারবেন। সেখানে তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার প্রশাসন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে। এসব দেশে আগে থেকেই তার ব্যবসা ছিল। ফলে এসব দেশেও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে ট্রাম্পের।

মিডিয়া
লাইমলাইট সব সময়ই প্রিয় ট্রাম্পের। ফলে অনেকে ধরেই নিয়েছেন মিডিয়ায় সুযোগ খুঁজবেন তিনি। হয়তো বই লেখার চুক্তি। বা কোনো নিউজ চ্যানেলে মন্তব্যকারী হিসেবে। কিংবা নিজেরই কোনো মিডিয়া ভেঞ্চার চালু করার মাধ্যমে।

সম্প্রতি এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছে যে ট্রাম্প তার ‘অ্যাপ্রেন্টিস’ শো ফের চালু করতে চান। এই শো থেকে ট্রাম্প প্রায় ৪২৭ মিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন। আর তা থেকেই নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ফের লাইনে আনতে পেরেছিলেন।
নভেম্বরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, হিকস ইকুইটি পার্টনার্স নামে ট্রাম্পের মিত্র ও আরএনসির ভাইস চেয়ার টমি হিকসের একটি প্রতিষ্ঠান নতুন টিভি চ্যানেল দাঁড় করাত অর্থ সংগ্রহ করছিল। তবে ফক্সের বিকল্প দাঁড় করাতে পারবেন কিনা ট্রাম্প তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী নিজেদের আত্মজীবনী লেখার জন্য অগ্রিম নিয়েছিলেন ৬৫ মিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এর চেয়েও বেশি অর্থ কামাতে চাইবেন। মূলধারার প্রকাশনা সংস্থাগুলো ট্রাম্পের বই ছাপাতে মোটেই দ্বিধা করবে না।

রিটেইল বাণিজ্য
ট্রাম্প নিজের নামে ব্রান্ডি করতে পছন্দ করেন। তার নামে বিভিন্ন ভবন আছে, তেমনি প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা, ভদকা, মেইল-অর্ডার স্ট্রিকসও আছে। তার মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পও নিজের নামে ফ্যাশন ব্রান্ড খুলেছিলেন। কিন্তু ব্রান্ড হিসেবে ‘ট্রাম্প’ নাম এখন বেশ বিষাক্ত। বিভিন্ন রিটেল প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প-ব্র্যান্ডের পণ্য সরিয়ে ফেলেছে। ২০১৭ সালে পিতার উপদেষ্টা হিসেবে ইভাঙ্কা ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘ইভাঙ্কা’ ব্রান্ডের পণ্যও নামিয়ে ফেলা হয়। নর্ডস্ট্রম, নিম্যান মার্কাস বা হাডসন বে- সবাই সরিয়েছে। এখন ইবে বা থ্রেইউপি নামে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের রিটেলারদের কাছেই সেসব পণ্য পাওয়া যায়। ই-কমার্স প্ল্যাটফরম শপিফাই সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
গ্রাহক নির্ভর খুচরা বাজার ধরার কোনো ইচ্ছার কথা ট্রাম্প পরিবার এখনো জানায়নি।

৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিচ্ছেন বাইডেন:

বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন জোসেফ আর বাইডেন। সেই সাথে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

বাইডেন শপথ নেবেন রাত ১১টায়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সরাসরি বিশ্বজুড়ে সম্প্রচার করা হবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। গেল নভেম্বরে তিনি পা দিয়েছেন ৭৮-এ।

প্রথা অনুযায়ী মার্কিন মুলুকের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ক্যাপিটল হিলের ওয়েস্ট ফ্রন্টের সামনে শপথবাক্য পাঠ করাবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্টকে। মার্কিন মুলুকের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়োর শপথবাক্য পাঠ করাবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চলা কমলা হ্যারিসকে।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পঞ্চাশটি প্রদেশ থেকে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচল। তবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে না থাকার কথাই আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অনুষ্ঠানের শেষে আয়োজিত হবে ‘সেলিব্রেটিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠান। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস যেখানে অংশ নেবেন। যা সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকবেন টম হ্যাঙ্কস।

করোনায় প্রাণ হারানো ৪ লাখ আমেরিকানকে বাইডেনের শ্রদ্ধা:

করোনার অপূরণীয় ক্ষতিকে কাটিয়ে আবারও সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়াল করোনায় মারা যাওয়া চার লাখ মানুষের স্মরণসভায় অংশ নেওয়ার একটি ছবি টুইট করে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ওই টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, আজ রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমি এবং পুরো দেশ একত্রিত হয়েছি করোনায় প্রাণ হারানো চার লাখ মার্কিনিকে শ্রদ্ধা জানাতে। গত বছরটি অভাবনীয় উপায়ে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছে। কিন্তু আর নয়। এখন সময় সবাই মিলে সব শোক কাটিয়ে নতুন করে পথচলার।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন জো বাইডেন। তিনি সেখানে লিঙ্কন মেমোরিয়ালে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা যাওয়া চার লাখ মানুষের স্মরণসভায় অংশ নেন।

এদিকে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ওয়াশিংটন ডিসিতে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা। সেনাবেষ্টনির মধ্যেই শপথ নেবেন বাইডেন ও কমলা হ্যারিস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here