কিভাবে দেশত্যাগ করল পি কে হালদার? : প্রশ্ন হাইকোর্টের

0
80

বাংলা খবর ডেস্ক:
বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে গ্রেপ্তার ও তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেওয়ার পরও কিভাবে পি কে হালদার দেশত্যাগ করল তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। পি কে হালদারে যেদিন দেশত্যাগ করেছে সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের কারা দায়িত্বরত ছিলেন তাদের নামের তালিকা দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, আমরা তার পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিলাম। এরপরও কিভাবে সে দেশত্যাগ করলো? ওইদিন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের কারা দায়িত্বরত ছিল?

এদিকে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে নিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তার তালিকাও দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলায় এ পর্যন্ত দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে দুদককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দিতে হবে। একইসঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স অ্যান্ড মার্কেটস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ এবং আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী সুকুমার মৃধার স্ত্রী সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার সিএডডি(অপারেশন) তাপসী রানী শিকদারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলার সর্বশেষ অগ্রগতিও জানাতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার পৃথকভাবে এ আদেশ দেন ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের এ তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সোমবার আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

কর্মকর্তাদের নামের তালিকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নাম, ঠিকানা দাখিল করার জন্য নির্দেশ ছিল। একই সঙ্গে ওই সময়ে অর্থপাচার রোধে এসব কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা আছে কিনা এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানাতে বলা হয়। এ কারণে ৩৯৪ জনের একটি তালিকা দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তালিকায় ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স অ্যান্ড মার্কেটস এর ১৪৭জন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের ৫৭ জন এবং আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের ১৯০ জনের নাম দেওয়া হয়েছে।

এ তালিকা দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এসব কর্মকর্তা দায়িত্বরত আছেন। এর আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে ম্যানুয়েল সিস্টেম থাকায় তাদের তালিকা প্রণয়নে সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ জন্যও সময় প্রয়োজন। এরপর আদালত সময় দিয়ে আদেশ দেন।

হাইকোর্টের পৃথক একটি বেঞ্চ গতবছর ২১ অক্টোবর এক আদেশে দেশের বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্রই পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন। এরপর ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শিরোনামে গতবছর ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম-ঠিকানা চান হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।
আত্মসমর্পণের নির্দেশ

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা, তার স্ত্রী তাপসী রানী শিকদার, কন্যা অনিন্দিতা মৃধাসহ ৫ জনকে আসামি করে দুদক অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতি পূর্ণ ২০ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার ৮৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলা করে। এ মামলায় গতকাল তাপসী রানী হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে জামিন না দিয়ে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here