ঘাতকের বুলেট অকালেই শেষ করে দিলো সাংবাদিকের জীবন

0
96

সাজেদুল হক:
জীবনটা কেবল শুরু হয়েছিল তার। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন সাংবাদিকতায়। দু’টি সংবাদমাধ্যমের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা। যতোটা না পেশা, তার চেয়েও বেশি নেশা। ঢাকার অনেক সাংবাদিকের সঙ্গেই টুকটাক কথা হতো। বলতেন, নিজের স্বপ্নের কথা। এ পেশায় অনেক দূর যেতে চেয়েছিলেন বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। কিন্তু হায়! ঘাতকের বুলেট অকালেই শেষ করে দিলো একটি জীবন, একটি স্বপ্ন।

কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে উত্তেজনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা নানা বক্তব্য আর কর্মসূচিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন সারা দেশেরই। বসেছিল না তার বিরোধীপক্ষও। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল এবং কাদের মির্জার সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষের সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন মুজাক্কির। এসময় সংঘর্ষকারীদের ছোঁড়া গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গত রাতে সেখানেই মারা যান ২৫ বছর বয়সী এ সাংবাদিক।
‘ক্রসফায়ারে’ এক সাংবাদিকের নির্মম মৃত্যু সমাজে, রাষ্ট্রে খুব বেশি আলোড়ন তুলবে- এমনটা আশা করা যায় না। এমনিতে এটা ভোগবাদী সময়। সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। ফেসবুকে একটু লেখালেখি হয়। এর বেশি কিছু খুব একটা নয়। একটি জীবন, একটি পরিবার শেষ হয়ে গেলে কারইবা কি আসে যায়? সাংবাদিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বিভক্ত। শক্ত কোনো অবস্থান নিতে প্রায়শই তাদের দেখা যায় না।

নোয়াখালী অঞ্চলে অস্ত্রের রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যেন জোর যার মুল্লুক তার। ধর্ষণের একাধিক ঘটনাও হয়েছে বিপুল আলোচিত। কোনো ঘটনা ঘটলে এসব নিয়ে কথা হয়। আবার ক’দিন পরেই পরিস্থিতি ফের আগের জায়গায় চলে যায়। দেখার যেন কেউ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নোয়াব আলী মাস্টার কি তার সন্তান হত্যার বিচার পাবেন? অস্ত্রবাজির রাজনীতির এই অধ্যায়ের কি শেষ হবে? স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কি পাওয়া যাবে? এক তরুণের এমন মৃত্যুতো কেবল ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু নয়। তার পরিবার কি হারিয়েছে তা এতোদূর বসে আমাদের জন্য অনুধাবন করা সত্যিই কঠিন। ন্যায় বিচারই কেবল হতে পারে এমন পরিবারের জন্য সামান্য সান্তনা।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস। আমরা এই দিনে স্মরণ করছি, ভাষা শহীদদের। আর এমনই একদিনে সহকর্মীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখতে হচ্ছে আমাদের। দুর্ভাগা এই সময়ে স্মরণ করছি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর অমর কবিতা, কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here