ছাতাহীন ১১ বছর!

0
659

শামসুল ইসলাম কবীর:
নিকষ অন্ধকার। চারদিকে সারমেয়কুলের চিৎকার।এরমধ্যেই দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যাওয়া, বাসার দিকে।এমনও হয়েছে গলি পার হওয়ার জন্য রিক্সার জন্য অপেক্ষা করেছি ঘন্টার ওপর।৯২’র শেষের দিকে দৈনিক আজকের কাগজে রিপোর্টিং শেষে যখন বাসায় ফিরতাম, ভয় ছিল আমার সাথী! একদিন কথায় কথায় আম্মাকে জানিয়েছিলাম সেটা।ব্যাস,আর কখনোই আমাকে সেই ভয়ার্ত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি।কারণ, আমার আলেম আব্বা।রাত বারটার পরই বাসা থেকে বেরিয়ে পরতেন।ঝিগাতলা ১৫ নম্বরে এসে দাড়িয়ে থাকতেন,আমার জন্য।
বাংলাবাজার পত্রিকা কিংবা মানবজমিন-কাজ শেষে কখনোই বাড়ি ফেরা হতো না রাত ১টার আগে।টানা ৮/৯বছর আমার আব্বা মাওলানা একেএম তাজুল ইসলাম ঠিক অপেক্ষা করতেন আমার জন্য। ঝড়,বৃষ্টি কোন কিছুই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি ঘরে। শুরুতে বরক্ত হতাম।বলতাম,আপনার কষ্ট করার দরকার কী।স্মিত হাসতেন। বলতেন,’তুই কুকুর ভয় পাস।তাছাড়া আমারও ভালো লাগে’।পরে আমিও অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম এই সূচিতে।বাপ-বেটার কতো কথা হতো এই সময়টায়।অন্ধকারে তিনি যেনো ছিলেন আমার ভয় দুর করার ছাতা!
দীর্ঘ ১১ বছর সেই ছাতার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত আমি।২০১০ সালের ২৪ মার্চ আমার আব্বা সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। লক্ষিপুরের বসিকপুর আলিয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন প্রিন্সিপাল হিসেবে। বাবা নেই,এটা যখনই ভাবি-খুবই অসহায় হয়ে যাই। দিন শেযে যখন রাত নামে,অবধারিতভাবে বাবা এসে হাজির হন আমার চিন্তায়।আম্মাও বাদ যাননা।অসুস্থ বাবা বিছানায়,কিছু করার শক্তি নেই। তাতে কি-‘বাবা আছেন ‘ এই শব্দ আমার মানষিক শক্তি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। বাবার ছায়া খুঁজি আমার ছেলের মধ্যে। দাদার নামেই তার নাম-তাজুল ইসলাম।বাবা নামক ছাতা ছাড়া আমি নিঃস্ব। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই অসহায়ত্ব নিয়েই কাটাতে হবে।মহান আল্লাহর কাছে প্রর্থণা,আপনার রহমতের ছাতা থেকে যেন আমার বাবা-মা বঞ্চিত না হন।রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।

লেখক: সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here