রেমডেসিভির ইনজেকশনের ১০ হাজার ‘ভায়াল’ (সিসি) ভারতকে উপহার

0
79

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
করোনাভাইরাস (কভিড) পরিস্থিতি নিয়ে বড় ধরনের সংকটে প্রতিবেশী দেশ ভারত। প্রতিদিন সেখানে কভিডে মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধু ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ গতকাল বৃহস্পতিবার কভিড চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় রেমডেসিভির ইনজেকশনের ১০ হাজার ‘ভায়াল’ (সিসি) ভারতকে উপহার দিয়েছে।

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মুকুন্দ নারাভানে গত মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন করোনাভাইরাসের এক লাখ ডোজ টিকা। এর আগে মার্চে ১২ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরও আগে প্রথম চালানে ভারত থেকে উপহার হিসেবে এসেছিল ২০ লাখ ডোজ টিকা। উপহারের ৩৩ লাখ ডোজ টিকার পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে ভারত। চুক্তির আওতায় পরবর্তী চালানগুলো পাঠানোর আগে ভারত নিজেই সংকটে পড়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অবনতিশীল কভিড পরিস্থিতিতে ভারতের জনগণের জন্য সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর প্রথম চালান এটি। ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান গতকাল ভারত সীমান্তের পেট্রাপোলে ভারত সরকারের প্রতিনিধির কাছে ১০ হাজার ‘ভায়াল’ রেমডেসিভির ইনজেকশন হস্তান্তর করেন। এই ইনজেকশনগুলো তৈরি করেছে বাংলাদেশি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ভারতের কভিড আক্রান্ত জনগণের জন্য চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ইনজেকশনগুলো পাঠানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী গতকাল সন্ধ্যায় এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আকাশপথে, সাগরপথে এবং এখন জলপথে। জরুরি ওষুধের একটি চালান পেট্রাপোলে স্থলসীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। আমাদের প্রতিবেশী ও কাছের বন্ধু বাংলাদেশকে এই সৌজন্য ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। এটি আমাদের অনন্য সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৯ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, কভিড মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতে জরুরি ওষুধ ও মেডিক্যাল সামগ্রী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভাইরাল ইনজেকশন, ওরাল অ্যান্টিভায়াল, ৩০ হাজার পিপিই কিট, সাত হাজার জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ট্যাবলেট।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কভিড বিস্তারের কারণে ভারতে প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ সহমর্মিতা নিয়ে তার কাছের প্রতিবেশী ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জীবন রক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে। ভারতের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে বাংলাদেশের জনগণ প্রার্থনা করছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ভারতকে আরো সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

সেদিনই নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ বলছে যে আমরা রেমডেসিভির উৎপাদন করছি। আমাদের কাছ থেকে নিন। কেন তারা বলছে, কারণ তারা অনুভব করছে যে এটাই সহযোগিতার সময়। ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে এবং আমাদেরও তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’

ভারতে একদিনে করোনা শনাক্তে ফের বিশ্বরেকর্ড

ওদিকে প্রতিদিনই একদিনে সংক্রমণের বিশ্বরেকর্ড ভাঙছে ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ মানুষ। একদিনে শনাক্তের হিসেবে এটা নতুন বিশ্বরেকর্ড। একইসময়ে ভারতে মারা গেছেন তিন হাজার ৯২৭ জন। এ নিয়ে টানা ১০ দিন দেশটিতে তিন হাজারের বেশি রোগী মারা গেলেন। শুক্রবার (৭ মে) এখবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

ছবি – সংগৃহীত

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশদিনে ভারতে ৩৬ হাজার ১১০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। দশদিন সময়সীমা হিসেব করলে এটাই বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এইদিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৭৯৮। ৩২ হাজার ৬৯২ মৃত্যু নিয়ে তৃতীয় স্থানে ব্রাজিল।

ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রে, সংখ্যা ৮৫৩। উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, কর্ণাটক- এই তিন রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৩০০ এর বেশি। ছত্তিশগড়েও একদিনে মৃত ছাড়িয়েছে ২০০।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here