চিকিৎসক সাবিরাকে হত্যার পর আগুন!

0
68

বাংলা খবর ডেস্ক:
রাজধানীর কলাবাগানে একটি বাসা থেকে গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সনোলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ তারেস ডি ক্যাসল অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির ওই ফ্ল্যাটে ডা. সাবিরা ভাড়া থাকতেন। এক তরুণীকে তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম সাবলেট দেন। গতকাল সকালে সাবলেটের ওই তরুণী কানিজ সুবর্ণা হাঁটতে বের হয়েছিলেন। বাসায় ফিরে তিনি দেখেন সাবিরার রুম বন্ধ। তবে রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি বাড়ির কেয়ারটেকারকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। ঘরে আগুন লেগেছে ভেবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন তিনি। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে আগুন নেভানোর পর দেখে সাবিরা মৃত এবং তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরপর খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। ডিবি পুলিশ এসে সাবিরার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন এবং পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সাবলেট থাকা এক শিক্ষার্থী, তাঁর এক বন্ধু, বাড়ির দারোয়ান রমজান ও ডা. সাবিরার ফ্ল্যাটের গৃহপরিচারিকা।’

ডা. সাবিরা রহমান দুই বিয়ে করেছিলেন জানিয়ে ডিবি সূত্র জানায়, তাঁর প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা সামসুদ্দিন আজাদ নামে এক ব্যাংকারকে বিয়ে করেন। আজাদ ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সাবিরা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতেন। সাবিরার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে বিবিএতে পড়ে। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন সাবিরা। গত রবিবার রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডে নানির বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।

সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্য খাতে নেওয়ার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।’

দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ যা বললেন : ডা. সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে শাশুড়ি (ডা. সাবিরার মা) ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার চাই।’

নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে : হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পরই সাবিরার তোশকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তার পরও সাবিরার দেহের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবির বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালি কেটে ফেলা হয়েছে। তাঁর দেহে রক্ত ও পোড়া ক্ষত ছিল। আমরা নিশ্চিত, এটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।’

ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ‘সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে আমরা ওই বাসায় একটি আগুনের সংবাদ পাই। সেখানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেন। মরদেহটির গলা ও পায়ের সামনের অংশ দগ্ধ ছিল। ঘরের তোশক পুড়ে গিয়েছিল। তবে মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুলিশে খবর দেন।’

এদিকে গতকাল বিকেলে কলাবাগান থানার পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, এটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টি নিশ্চিত হতে সাবিরার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here