শ্রীলঙ্কার যে হাসপাতালে মানুষের দানে ঘটলো মিরাকল

0
63

বাংলা খবর ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কার প্যানাদুরা বেজ হাসপাতালের (পিবিএইচ) কোভিড ওয়ার্ড। রোগীতে ঠাঁসা। তার ভিতর চিকিৎসকদের প্রবেশের পথটুকুও যেন বন্ধ হয়ে আছে। বেডে রোগী। বিছানার নিচে রোগী। দুই বিছানার মাঝে রোগী। এমনই এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে। ছিল না সরঞ্জাম।
কিন্তু দু’জন ব্যক্তির উদ্যোগে অসংখ্য মানুষ সহায়তা তহবিলে অর্থ দিয়েছেন। অল্প সময়েই যেন এক মিরাকল বা অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেছে। সব হয়েছে ওই হাসপাতালে। এ খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কার অনলাইন সানডে টাইমস। এতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় করোনা ভাইরাসের প্রথম দফা সংক্রমণ ছিল হাল্কা। দ্বিতীয় দফা তার চেয়ে কিছুটা বেশি। আর তৃতীয় দফায় যেন সবাইকে আঘাত করেছে। পিবিএইচ হাসপাতালে একের পর এক রোগী যেতে থাকেন।

চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালের অবস্থা ক্রমশ নাজুক অবস্থায় যেতে থাকে। হাসপাতালে বা বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রে বেড খালি না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বলা হয়। ২৫ শে এপ্রিল থেকে ২৬ শে এপ্রিলের মধ্যে পিবিএইচে প্রতি০িদন প্রায় ৫০ জন করে রোগী যেতে থাকেন। তাদের বেশির ভাগেরই লক্ষণ প্রকাশিত। তাদেরকে যে ওয়ার্ডে রাখা হয়, তাতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নাজুক। স্যাঁতস্যাতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেছেন, মেঝেতে রোগী। এমনকি বেডের নিচে পর্যন্ত রোগী অবস্থান করেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, বেডের নিচেও তারা স্থান নিতে পারেননি। ফলে বেডের ওপরে বসেই তাদেরকে ঘুমাতে হয়েছে। কিছু রোগীর অধিক পরিচর্যার প্রয়োজন ছিল। নজরদারির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ওয়ার্ডটি রোগীতে, মানুষে এতটাই ঠাঁসা ছিল যে, আমরা ভিতরে প্রবেশই করতে পারিনি। বিষয়টি মেডিকেল স্টাফদের জন্যও খুব বিপজ্জনক ছিল। ওয়ার্ডটির ভিতরে কোনো এক্সাস্ট ফ্যান লাগানোর মতো উপায়ও ছিল না। কারণ, কর্মীরা এর ভিতরে প্রবেশের সাহস দেখান নি। আইসিইউতে শুধু কোভিড রোগীরাই ছিলেন না। পিবিএইচে কোনো হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটও (এইচডিইউ) নেই।

ওই চিকিৎসক আরো বলেন, রোগীদের মধ্যে একজন ছিলেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ে। কিন্তু তাকে আমরা আইসিইউতে স্থানান্তর করতে পারিনি বেড পূর্ণ থাকার কারণে। তার তখন ব্রেনে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাকে আমরা ওই ওয়ার্ডে ভেন্টিলেশনে রাখি। দুদিন পরে সে মারা যায়। এই অবস্থায় করোনা মোকাবিলা ভয়াবহ এক অবস্থার সৃষ্টি করে। প্রতিদিনই পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। শারীরিক দিক থেকে মেডিকেল স্টাফরা বেশি মাত্রায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে নার্সদের অভিজ্ঞতা আরো ভয়াবহ। কারণ, তাদের চোখের সামনে রোগী মারা যাচ্ছেন।

কিন্তু এই যে অবস্থা এর সবকিছু পাল্টে গেছে একটি সাহায্যের আবেদনে। এগিয়ে আসেন সন্ধ্যা সালগাদো এবং তার স্বামী প্রিয়াথ। তারা প্যানাদুরার অধিবাসী। অন্যদের মতো তারা বহু বছর ধরে এই হাসপাতালকে সহায়তা করে আসছেন। একদিন সন্ধ্যা একজন চিকিৎসককে ম্যাসেজ পাঠিয়ে তার কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে ওই চিকিৎসক তাকে জানালেন, আমি আশা করি এই ওয়ার্ডে মানুষগুলো যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, আপনি তাদেরকে সহায়তা করতে পারেন। আমরা এর আগে এত মানুষকে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগতে দেখিনি। আমি শুধু আপনাকে জানাতে চাই যে, এসব মানুষকে রক্ষা করতে আপনাকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখলেন সন্ধ্যা। ১৭ই মে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানালেন পিবিএইচের দুটি ওয়ার্ডকে এইচডিইউতে পরিণত করতে চান। কারণ, বহু মানুষ ভুগছেন, মারা যাচ্ছেন। নাকে ক্যানুলা থেরাপি দেয়ার জন্য মেশিন কিনতে হবে। প্রতিটির দাম ১৩ লাখ রুপি। এ নিয়ে তিনি লিঙ্কডইন-এও লিখলেন। ফলে যে অর্থ সংগ্রহ হলো তা দিয়ে সন্ধ্যা ৫টি মেশিন কেনা যায়। তবে টার্গেট ধরা হয় কমপক্ষে ২৫টি। পরের দিন আরো অর্থ এলো। তা দিয়ে ১০টি মেশিন কেনার জন্য যথেষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে আরো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজন হলো। এর মধ্যে রয়েছে বাই-লেভেল পজেটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার থেরাপি মেশিন, মাল্টি-প্যারা মনিটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ভেন্টিলেটর, ইনফিউশন এবং সিরিঞ্জ পাম্প সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। অষ্টম দিনে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াল কমপক্ষে ৪ কোটি রুপি। ২৬ শে মে ছোটখাট উদ্বোধন অনুষ্ঠান হলো। এতে কোনো রাজনীতিক ছিলেন না। ফিতা কাটার কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। কোভিড রোগীদের নেয়া হলো নতুন করে সাজানো ওয়ার্ডে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো শতভাগ মানুষের দেয়া অর্থে। রোটারি ক্লাব অব কলম্বো রিজেন্সি দান করেছে একটি ওয়াল অক্সিজেন সিস্টেম ও মূল্যবান মেশিন। সবার এগিয়ে আসায় এসব সম্ভব হয়েছে। এই আবেদন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে। কেউ দান করেছেন ২০০ রুপি। তবে গড় দানের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার রুপির মধ্যে। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। এমনি করেই পিবিএইচ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য স্বপ্ন রচিত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here