করোনায় বাবা-মা হারিয়ে পেশা ছাড়তে চাইছেন ডাক্তার জাকি

0
566

বাবা-মা হারানো ডা. জাকি উদ্দিন। সংগৃহীত ছবি

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে মা-বাবাকে হারিয়ে নিজের পেশার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তা ছাড়তে চাইছেন কুমিল্লার এক সরকারি চিকিৎসক। গতকাল বৃহস্পতিবার জাকি উদ্দিন নামে ওই চিকিৎসক সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখেন- ‘আই শ্যাল নট কন্টিনিউ দিজ প্রফেশন এনিমোর’। তার এরকম একটি স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে কুমিল্লায়।

জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতেন ডা. জাকি উদ্দিন। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না থাকায় কুমিল্লার রেসকোর্সের বাসা থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতেন তিনি।

ছয় মাসে আগে তিনি, তার ছোট বোন ও বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের চার জনকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে মারা যান তার মা জাহানারা নাসরিন (৫৬)। তিনি চান্দিনা বড় গোবিন্দপুর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

এদিকে করোনা থেকে ডা. জাকি সুস্থ হলেও তার প্যারালাইজড বাবা সালাউদ্দিনের (৬৬) নানা উপসর্গ থেকে যায়। গত বুধবার রাতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বোনের কাছে বাবার অসুস্থতার খবর শুনে দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাসায় যান জাকি। এরপর কুমিল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তার বাবার মৃত্যু হয়।

ডা. জাকির বাবা সালাউদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মূখীও মশাখালী গ্রামে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালাউদ্দিনের পুত্রবধূ ডা. শমরিতা অনন্যা।

এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডা. জাকি উদ্দিন। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘কোভিড রোস্টারে নাইট ডিউটিতে ছিলাম। আব্বুর অবস্থা খারাপ শুনে আমি ডিউটি থেকে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। কিন্তু আটকাতে পারলাম না। জ্ঞান থাকা অবস্থায় বলেছিল, বড় বাবু ব্যবস্থা করবে। আমি আব্বু-আম্মুর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। একদম এতিম হয়ে গেছি ছয় মাসের ভেতর। কোভিড দিয়ে ইনফেকটেড করে মেরে ফেলেছি। নো প্যারেন্টস ডিজার্ভ অ্যা চাইল্ড লাইক মি। হু কিলস দেয়ার প্যারেন্টস উইদইন সিক্স মানথস। আই থিঙ্ক আই শ্যাল নট কন্টিনিউ দিজ প্রফেশন এনিমোর।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন চিকিৎসক কোভিড ইউনিটে সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি রয়েছেন নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা। হাসপাতালটিতে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা সেবা শুরু হওয়ার পর ডাক্তার ও নার্সদের জন্য আলাদাভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন পালনের জন্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, কুমিল্লা ক্লাব ও আবাসিক হোটেল গোল্ডেন টাওয়ারে ব্যবস্থা করা হয়। কিছুদিন পর ঠিকাদারদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রণোদনার কথা উল্লেখ থাকলেও কুমিল্লার কোনো চিকিৎসকই প্রণোদনা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।


ডা. জাকি উদ্দিনের সেই স্ট্যাটাস

বিএমএ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন, ‘কী বলব, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছয় মাসের ব্যবধানে তরুণ ডাক্তারটি মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল। তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে দায়িত্বরতদের জন্য কোয়ারেন্টিন বা আবাসিক ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন। কত টাকা এই দেশে অপচয় হয়। পুকুর কাটা, খিচুড়ি রান্না, কলাগাছ লাগানোসহ প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ, কেনাকাটার লাগামহীন আকাশচুম্বী দাম, নাম না জানা ও নামসর্বস্ব প্রজেক্ট, কত খাতেই তো অর্থ অপচয় হয়। ডাক্তারদের জন্য কি উন্নত ব্যবস্থাপনা করা যায় না?’

এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘জাকির বাবা-মা হারানোর ঘটনা বেদনাদায়ক। এখানে কাজ করা সবাই বেশ ঝুঁকিতে আছেন। আমরা সরকারি চাকরিজীবী। মন্ত্রণালয় যেভাবে চাইছে, সেভাবে কাজ করছি। কিছু পরিবর্তনের সামর্থ্য তো আমাদের নেই। আশা করি মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ভাববে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here