হারলেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মাহমুদুল্লাহ

0
476

বাংলা খবর ডেস্ক:
নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। রবিবার (২৪ অক্টোবর) শারজায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে এই পরাজয়েও প্রাপ্তি খুঁজে নিচ্ছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

মূলত দলের ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন টাইগার দলপতি। বাংলাদেশের দাঁড় করানো স্কোর জয়ের মতই ছিল দাবি করে বলেছেন, ‘১৭১ রান জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। লিটন দাস ও নাঈম শেখ ভালো শুরু এনে দেওয়ার পর মুশফিক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের দশম ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। এর পরই সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায়। আশা করি, আগামী ম্যাচে ভুলগুলো শুধরাতে পারবো।’

এক্ষেত্রে অধিনায়কের কথায় যে কেউই একমত হবে। কারণ, শারজার উইকেটে ১৭১ রান জয়ের জন্য যথেষ্ট স্কোর। টাইগারদের উইকেটও পড়েছে মাত্র ৪টি। তাই ব্যাটারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। কিন্তু, বাজে ফিল্ডিং ও লিটন দাসের ক্যাচ মিসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ম্যাচ শেষে রিয়াদ বলেন, ‘স্পিনাররা ভালো বল করেছে, তবে আমরা কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি। টি-টোয়েন্টিতে এমনটা হতেই পারে। এই ম্যাচ আমাদের ব্যাটিং ইউনিটকে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে বিশ্বাস করি। পরের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি।’

ওদিকে এরআগে গতকাল সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অর্ধশতক হাঁকান নাঈম শেখ। এর আগে বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ টাইগার ওপেনার।

পাওয়ার প্লের বাদনাম উড়িয়ে গতকাল শুরুর ৬ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪১ রান। লিটন দাস বিদায় নেন ১৬ রানে। কিন্তু নাঈম খেলেন ৫২ বলে ৬২ রানের ইনিংস। তিনি যখন আউট হন তখন স্কোর বোর্ডে সংগ্রহ ১৬ ওভারে ১২৯ রান।

বিদায় নেয়ার আগে বিশ্বকাপে নিজের মতো করে আরো একটি ফিফটি হাঁকালেন তরুণ ব্যাটার। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম। দু‘জনের জুটিতে এসেছে তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রান। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হাতে রেখে নির্ধারিত ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭১ রান। ইনিংস বিরতিতে মুশফিকুর রহীম বলেন, ‘সত্যি বলতে, উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। আমরা আইপিএল ও অন্য ম্যাচগুলি দেখছিলাম। ১৪০ রান এখানে যথেষ্ট মনে হচ্ছিল। তবে আজ উইকেট ভালো। জিততে হলে বোলিং-ফিল্ডিং ভালো করতে হবে আমাদের। বিশেষ করে, নতুন বলে ব্যাটিং সহজ। তাই শুরুতে উইকেট নিতে হবে।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মুশফিকুর রহীম ছিলেন বিবর্ণ। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে সামনে পেয়েই যেন জ্বলে উঠলেন। তার বর্ণীল ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি গড়, রান, ফিফটি ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট যে লঙ্কানদের বিপক্ষে। গতকালও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান লঙ্কান দলপতি দাসুন শানাকা। আগে ব্যাট করতে হয়েছে বলে আক্ষেপ নেই অবশ্য টাইগার দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। টস জিতলে যে ব্যাটিংই নিতেন। ওপেনিং জুটি অনেকদিন ধরেই চিন্তার কারণ। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ৩ ম্যাচেও হতাশাজনক পারফরম্যান্স। ৩ ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি উপহার দেয় মাত্র ১৯ রান। তবে গতকাল বদলে গেল সেই ইতিহাস। ৫.৫ ওভারে লিটন দাস ও নাইম শেখের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪১ রান। যদিও যথারীতি ব্যর্থ লিটন, ফিরেছেন ১৬ বলে ১৬ রান করে। লাহিরু কুমারার বলে মিড অফে ক্যাচ দেন। সাজঘরে ফেরার আগে লঙ্কান পেসারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায়ও জড়ান।

এরপর ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান শুরুটা দারুণ করলেও বেশিক্ষণ টিকেননি। চামিকা করুণারত্নের বলে বোল্ড হন ৭ বলে ১০ রান করে। তবে অন্য প্রান্তে নাঈম ছিলেন নিজের মতোই। ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৭২ রান। ব্যাট হাতে খারাপ সময় কাটানো মুশফিক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে স্লগ সুইপে ছক্কা হাঁকিয়ে যেনো বার্তা দিলেন আজ রানে ফিরছেন। বাঁহাতি পেসার ভিনুরা ফার্নান্দোকে হাঁকানো দ্বিতীয় ছক্কায়ও ছিলো আত্মবিশ্বাসের রসদ। ১৪তম ওভারে লাহিরু কুমারাকে চার হাঁকিয়ে ৪৪ বলে নিজের ফিফটি ও দলীয় ১০০ রান পূর্ণ করেন নাঈম। তার আগে ব্যক্তিগত ৪৬ রানে অবশ্য তাকে ফেরানোর সহজ সুযোগ পায় লঙ্কানরা, তবে সরাসরি থ্রোতে রান আউট করতে ব্যর্থ হন।

ততক্ষণে আরও চড়াও হন মুশফিক, ১৫তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে সুইপ শটে হাঁকান ব্যাক টু ব্যাক চার। তবে অন্য প্রান্তে নাঈম ৫২ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে আউট হলে ভাঙে দুজনের ৫১ বলে ৭৩ রানের জুটি। আফিফ হোসেন ৬ বল খেলে ৭ রানে আউট হলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। ৩২ বলে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ফিফটি। মুশফিক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৫৭ রানে। শেষ দিকে দুই বাউন্ডারিতে ৫ বলে ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ।

নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখেন: সমালোচকদের উদ্দেশে মুশফিক

দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কবে ফর্মে ফিরবেন মুশফিক? অনেকদিন ধরেই মুশফিকের ব্যাট হাসছে না। গত সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৫ ইনিংসে মুশফিক করেছিলেন মাত্র ৩৯ রান।

বিশ্বকাপে অবশ্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬ রান করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরের ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ৮ নম্বরে।

বেশ কিছুদিন ফর্মে না থাকায় সমালোচকদের কথা হজম করতে হয়েছে জাতীয় দলের এই অন্যতম তারকাকে। এদিকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দলের পরাজয় নিয়েও সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে তাকে।

কোচ, নির্বাচকদেরসহ বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে ঠিকই আপন মহিমায় জ্বলে উঠবেন মুশফিক।

ঠিক তাই ঘটল। সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪ নম্বরে নেমে ৩৭ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেছেন মি. ডিপেন্ডেবল।

সাম্প্রতিক সময়ের এই সমালোচনা নিয়ে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে মুশফিক জানালেন, সমালোচনা তেমন একটা গায়ে মাখেন না তিনি। গালি ও তালি দুটোই হজম করতে অভ্যস্ত তিনি।

অবশ্য সমালোচকদের একহাত নিতে ছাড়লেন না মুশি।

বললেন, ‘যারা সমালোচনায় মগ্ন, তারা যেন নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখেন।’

শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশফিক বলেন, ‘মাঠের বাইরে কী কথা হচ্ছে? এমন কথা তো হবেই। ভালো করলে তালি দেবে, খারাপ করলে গালি দেবে। আমি ১৬ বছর ধরে খেলছি, আমার জন্য এসব নতুন কিছু না। আমার কাছে এসব খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। যারা আমাদের নিয়ে এসব বলে তাদের উচিত নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখা। কারণ তারা তো বাংলাদেশের হয়ে খেলে না। আমরা খেলছি। আমরা সবাই ভালো করার চেষ্টা করি, কোনোদিন হয় কোনদিন হয় না। তবে দিনের শেষে আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, আমাদের কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয় এটিই।’

টি-টোয়েন্টির মারমুখি ফরম্যাটে দেখেশুনে খেলে উইকেটে থিতু হওয়া নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি কাইরন পোলার্ড নইযে ২-৩ বল পেলেই মারব। আমার একটু সময় লাগে। তবে আমারও শক্তির জায়গা আছে, দুর্বলতার জায়গাও আছে। কয়েকটা ম্যাচ হয়তো খারাপ গেছে একটু, তবে কথা শুনে মনে হচ্ছে, পাঁচ-ছয় বছর ধরে রান করি না। এটাও আমাকে বাড়তি উজ্জীবিত করেছে। আজ ভেবেছিলাম, যত বেশি রান করতে পারি। সেটা ১০ কিংবা ৮০ রান, যা-ই হোক না কেন।’

আফ্রিদিকে টপকে শীর্ষে সাকিব

পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষেই শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়েছিলেন তিনি। সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ককে টপকাতে সময় নিলেন না সাকিব আল হাসান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেই এককভাবে চূড়ায় উঠলেন টাইগার অলরাউন্ডার। গতকাল সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ওভারেই ২ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে যান আফ্রিদিকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচে ২৮ ইনিংসে বল করেছেন সাকিব। বাঁহাতি স্পিনে সাকিবের শিকার ৪১ উইকেট। অবসরে যাওয়া আফ্রিদি ৩৯ উইকেট নেন ৩৪ ম্যাচে।
কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে সাকিবের কাছাকাছি থাকা সবাই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা লাসিথ মালিঙ্গার শিকার ৩৮ উইকেট।

পাকিস্তানের স্পিনার সাঈদ আজমল নেন ৩৫ উইকেট। এই বিশ্বকাপে খেলছেন এমন বোলারদের মধ্যে সাকিবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ডোয়াইন ব্রাভোর। এই ক্যারিবিয়ান পেসারের শিকার ২৫ উইকেট।

বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব। ৯২ ম্যাচে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১১৭।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দারুণ এক মাইলফলকের সামনে সাকিব। সব টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে আর ৪ শিকার প্রয়োজন তার। সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ (৩৯৬) উইকেট সাকিবের। আর চার উইকেট পেলে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে চারশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁবেন তিনি। ৫৫১ উইকেট নিয়ে শীর্ষে ডোয়াইন ব্রাভো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here