আক্ষেপ মিটলো তরুণ ক্রিকেটার জয়ের ব্যাটে

0
283

বাংলা খবর ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব ছিল না কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের। বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকদের সেই আক্ষেপ মিটলো তরুণ ক্রিকেটার জয়ের ব্যাটে।
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরির নজির গড়লেন ২১ বছর বয়সী ওপেনার।
ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার জয়। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে জয় উপহার দিয়েছেন ধৈর্যশীল এক ইনিংস। ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। সব ফরম্যাট মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি পাওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি জয়। ২০১৭তে কিম্বার্লি মাঠে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১১০* রানের ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহীম।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য জয়। ডানহাতি এই ওপেনার প্রথম শ্রেণির ম্যাচই খেলেছেন এখন পর্যন্ত ১০টি। ১৭ ইনিংসের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস রয়েছে ৫টি। সেঞ্চুরি ২টি। গত নভেম্বরে যখন প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পান, তখন প্রথম শ্রেণিতে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল জয়ের। তবে জাতীয় লীগে ৫৮ গড়ে রান করার পর এই ওপেনারকে সুযোগ দিতে আর ভুল করেননি নির্বাচকরা। বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু তখন বলেছিলেন, ‘লম্বা সংস্করণের মানসিকতা জয়ের মধ্যে আছে বলে মনে হয়েছে। আর সে ফর্মেও আছে।’
জয়ের টেস্ট টেম্পারমেন্ট দেখা গিয়েছিল মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। কিউই পেসারদের গতি ও সুইং সামলে প্রথম ইনিংসে জয় খেলেছিলেন ৭৮ রানের ইনিংস। ২২৮ বলের ইনিংসে ৭ বাউন্ডারিই তার ধৈর্যশীল মানসিকতার সাক্ষী। ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি এই ওপেনারের। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় পেতে সমস্যা হয়নি।
চোটে পড়ে নিউজিল্যান্ডে দ্বিতীয় টেস্ট মিস করেন মাহমুদুল হাসান জয়। এরপর ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট- বিপিএল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে ৯ ম্যাচে ফিফটি হাঁকান একটি। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৬৫ রানের। বিপিএল শেষে ফের জাতীয় দলের দায়িত্ব। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন এক কন্ডিশনে। যেখানে টেস্ট খেলা মানেই যেন বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে হার। প্রোটিয়াদের ঘরে এর আগে ৬ টেস্টে কোনো সেঞ্চুরি ইনিংস ছিল না বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ৭৭ রান মুমিনুল হকের।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি না পাওয়ার দুই দশকে সেই আক্ষেপ ঘুচলো জয়ের হাত ধরেই। কেশব মহারাজের করা ৯৭তম ওভারের পঞ্চম বলটা ছিল শর্ট লেন্থের। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে খেলে দুই রানের জন্য দৌড়ান জয়। দ্বিতীয় রান পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় ঢুকে যান তিনি। গ্যালারি থেকে করতালিতে জয়কে অভিনন্দন জানান তার সতীর্থরা। মাঠে থাকা দর্শকদের ভালোবাসাতেও সিক্ত হন তিনি।
২৭০ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন জয়। ১০ চারের সঙ্গে ছক্কা ১টি। নাজমুল শান্ত ছাড়া টপ অর্ডার ব্যাটারদের কেউই জয়কে তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি তাকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তারা। নয়তো টপ অর্ডারের থেকে একটু ভরসা পেলে জয়ের ব্যাটিংয়ে সুফল আরও ভালোভাবে নিতে পারতো দল। প্রথম দিনের শেষ বিকালে সিমন হারমানের স্পিনে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। সাদমান ইসলাম ৯, অধিনায়ক মুমিনুল হক শূন্য, মুশফিকুর রহীম ৭ রানে আউট হন। ৯৪ রানে ৪ উইকেট খোয়ানোর পর দ্বিতীয় দিনের শুরুতে জয় হারান তাসকিনের সঙ্গ। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে লিটন দাসের সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন জয়। সপ্তম উইকেটে ইয়াসির আলী রাব্বীর সঙ্গেও তার অবদান ৩৩ রান। দলীয় ২১৬ রানে রাব্বীর বিদায়ের পর মিরাজের সঙ্গে শুরু হয় তার নতুন লড়াই। জয়-মিরাজের দৃঢ়তায় চা বিরতির আগ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট খোয়ায়নি বাংলাদেশ। ৪১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৫৭/৭ সংগ্রহ নিয়ে চা বিরতিতে যায় টাইগাররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here