ঋণ ও বিল খেলাপিদের বিষয়ে আইনের পরিবর্তন চায় ইসি

0
89

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ ও বিল খেলাপিদের বিষয়ে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করতে আগ্রাহী নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের পক্ষে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যাংক ও পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আস্থা বিদ্যমান আইনেই যেখানে বলা হয়েছে, ঋণ ও বিল খেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

আজ সোমবার নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ভবনে এ বিষয়ে ব্যাংক ও পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভার আয়োজন করে। সিইসির সভাপতিত্বে গতকাল সকাল ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা এ সভা চলে।

সভা শেষ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যে অধিকার, ঋণ খেলাপের নামে তা যেন কারো ক্ষেত্রে খর্ব না হয়। তবে ব্যাংকগুলো আগের অবস্থানেই রয়েছে।

সিইসি বলেন, ‘২০০৮ সালে বিধান করা হয়েছিল যাঁরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন, তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আমাদের মত হচ্ছে, যাঁদের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা করবে, তাঁরাই খেলাপি হবেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী যাঁরা সত্যিকারের খেলাপি নন, তাঁরাও অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার মৌলিক অধিকার। যেনতেনভাবে যেন ওই অধিকারটা খর্ব না হয় আমরা সেটা চেয়েছিলাম এবং সেভাবে একটি খসড়াও করেছিলাম। ’

সিইসি বলেন, ব্যাংক থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সবাই বিদ্যমান আইনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। আগের আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) থেকে তালিকা দেওয়া হয় তার ভিত্তিতেই ঋণখেলাপি নির্ধারিত হয়।

সিইসি বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুত্, টেলিফোনের বিল নিয়ে আমরা বলেছিলাম, এটা বাহুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি এসব বিল না দেন সহজেই তাঁর লাইন কেটে দেওয়া যায়। তার পরও আমরা প্রস্তাব করতে চাচ্ছিলাম, এ বিষয়ে যাঁদের নামে মামলা হবে তাঁদেরই আমরা বিলখেলাপি বলতে চাই। কারণ, কারো আড়াই শ টাকার একটা টেলিফোন বিল বাকি আছে, তিনি হয়তো জানেও না। হয়তো অসুস্থ ছিলেন। টেলিফোন কম্পানিও তাঁকে খেলাপি মনে করেন না। এ ক্ষেত্রে লাইন কেটে দেওয়া হয়। বিল দিয়ে দিলে আবার পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনী আইনে এ ধরনের বিলখেলাপিরাও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। ’

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলখেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য করার পক্ষে তত্কালীন নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা ছিল, ‘সংসদ সদস্যদের অনেকের কাছে পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ বিল অপরিশোধিত থাকে, যা আদায় করা কষ্টসাধ্য। দেশের আইনপ্রণেতাদের আচরণ অন্যদের কাছে দৃষ্টান্তমূলক হওয়া সমীচীন বিধায় নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য এ বিষয়ে বিধান সংযোজন করা আবশ্যক। ’ সে সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে করা সংলাপের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করে।

গতকালের সভার আলোচনার বিষয়ে সিইসি আরো বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই কেউ যদি টাকা লুট করার জন্য ঋণ পরিশোধ না করেন তাঁর বিষয়টি ভিন্ন। আমি আইনের ছাত্র হিসেবে জানি, লোনটা কিন্তু একটা সিভিল অ্যাগ্রিমেন্ট। কোনো কারণে কেউ ব্যর্থ হতে পারে, এটা জেনেই ব্যাংক ঋণ দেয়। মহামারি হতে পারে, যুদ্ধ হতে পারে, মৃত্যু হতে পারে। অনেক সময় যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হয়, সেই ঋণ যিনি নেন, তিনি ব্যবহার করতে পারেন না। উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না বলে ঋণটাও পরিশোধ করতে পারেন না। দ্যাট ইজ নট এ ক্রিমিনাল বরোয়ার। এই জিনিসটা স্পষ্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংক থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা ব্যাংকিং দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছেন যে এনি ডিফল্টার ইজ আ সিরিয়াস ডিফল্টার। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম একটু ভিন্নভাবে। ’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘২০০৮ সালের আগে এই আইন ছিল না। ২০০৮ সালের আগে এই আইন না থাকার কারণে ব্যাংকগুলো ডুবে গিয়েছিল, লাখ লাখ টাকা খেলাপি ছিল, আর এই আইন হওয়ার পরে ঋণখেলাপি হয় না তাও নয়। আসলে ব্যাংকের ঋণ কিভাবে আদায় হবে, সেটা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ যে মেকানিজম, তার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, যেকোনো একটা কম্পানির সাত শ কোটি টাকার গ্যাস বিল বাকি। সাত শ কোটি টাকা তো এক দিনে হয় না। সেখানে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টেরও দায়িত্ব ছিল একটা পর্যায়ে গিয়ে লাইনটা বন্ধ করে দেওয়া, কেটে দেওয়া এবং গ্যাস সরবরাহ না করা। কিন্তু আমাদের যে সমাজব্যবস্থা, যাঁরা শক্তিশালী তাঁরা ঋণ নিয়ে খেলাপ করতে পারবেন। গ্যাস নিয়ে বিল খেলাপ করতে পারবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কঠিন হয়ে যায়। এ জন্য আমরা বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি। বেশির ভাগ ব্যাংকার বলেছেন, এখন যে বিধানটা রয়েছে সেটা থাকলেই ভালো হয়। আমরা বিষয়টা শুনেছি এবং পরে সিদ্ধান্ত নেব এই সংশোধনে যাব কি যাব না। ’

সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন সীমা জামান, ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী রশিদুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজুল হক পান্না, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব প্রশাসন (জেলা জজ) শেখ গোলাম মাহবুব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) মাকসুদা বেগম, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল কদ্দুস, বিটিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) মাজহারুল ইসলাম, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান রুহুল আহসান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (ডিভিশনাল হেড) মীর ইকবাল হোসেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড নুর হোসাইন আল কাদেরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) ফারুকুজ্জামান, তিতাস গ্যাস লিমিটেডের পরিচালক (অর্থ) অর্পণা ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here