বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু রবিবার

0
55

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্তমান সরকারের চতুর্থ বাজেট সংক্ষিপ্ত সময়ে সংসদে পেশ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। এ কারণে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের মতো বাজেট পেশকালে অধিবেশনে উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

বাজেট পেশের পর অর্থবিল-২০২২ পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ২৯ জুন এই বিল পাস হবে। আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এর আগে আগামী রবিবার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।

সংসদে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উত্থাপিত লিখিত বাজেট বক্তৃতা ছিল ২০৮ পৃষ্ঠার। গত কয়েক অর্থবছরে বাজেট পেশের পাশাপাশি তার চুম্বক অংশ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হলেও গত বছর অর্থমন্ত্রী পাঠ না করে প্রায় পুরো অংশই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন। এবারও অর্থমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার পর ডিজিটাল উপস্থাপনা শুরু হয়। শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপনা শেষ করেন মন্ত্রী।

প্রতিবছর বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবন জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এবারও সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। সকলকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। আর মূল ভবনে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগেই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়। তবে বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করেন তিনি। দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, একই সতর্কতা মেনে আগামী রবিবার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে আলোচনা চলবে। সংসদ সদস্যরা কে, কবে অংশ নেবেন তা ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার সম্পূরক বাজেট পাস হবে। এরপর আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হবে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে:

তামাকজাত পণ্য : সিগারেটের নিম্ন স্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে।

বিলাসবহুল গাড়ি, রিকন্ডিশন্ড ও হাইব্রিড গাড়িতে ২০০০ সিসি থেকে ৪০০০ সিসিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসবেরও দাম বাড়বে।

রেলের টিকিট : শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত/তাপানুকূল সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে টিকিটের দাম বাড়বে।

এ ছাড়াও আমদানীকৃত পনির, দই, এসি, মোবাইল, পেপার কাপলেট, জিআই ফিটিং, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, গাড়ির সিলিন্ডার, লাইটার, কম্পিউটার প্রিন্টারের টোনার, মেডিটেশন সেবার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আমদানীকৃত ইলেকট্রনিক কেবল, সব ধরনের পাইপ, আমদানীকৃত মোটরসাইকেল, সব ধরনের রাবার জাতীয় পণ্য, আমদানীকৃত সোলার প্যানেল, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল, আমদানীকৃত চেয়ার, প্রিন্টিং কালি, আমদানীকৃত বিলাসবহুল পাখি, কিট-মাস্কসহ সব ধরনের কভিড-১৯ সরঞ্জাম ইত্যাদি।

যেসব পণ্যের দাম কমবে:

কানে শোনার যন্ত্র, হুইলচেয়ার, এলইডি টিভি, কাজুবাদাম, পশুখাদ্য, হ্যান্ড টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, এসি, রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম, হাঁস-মুরগির খামারের যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, কৃষিপণ্য, উড়োজাহাজের আমদানি মূল্য, এলপিজি গ্যাস, মুড়ি, চিনি, পাওয়ার টিলার, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ব্যাটারি-চার্জার, পোলট্রি ও ফিশ ফিড, ব্রেইল বুক, পলিথিন ব্যাগ, স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক ব্যাগ (ওভেন প্লাস্টিক ব্যাগসহ) ও মোড়ক সামগ্রী ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here