স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায়

0
67

বাংলা খবর ডেস্ক:
কোটি বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দুই প্রান্তে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ।

সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশের জন্য প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তৈরি করা হয়েছে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও আশপাশে বসানো হয়েছে ছয়টি নিরাপত্তাচৌকি। এ ছাড়া বসানো হয়েছে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। জনসভাকে ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জার কাজও শেষ পর্যায়ে।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে এই জনসভায়। সভাস্থলে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। জনসভাস্থলে তৈরি করা হয়েছে তিনটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র (মেডিক্যাল ক্যাম্প)। এর মধ্যে ২০ শয্যার একটি ও ১০ শয্যার দুটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। জনসভায় নৌপথে আগতদের জন্য বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় ২০টি পন্টুন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ তৈরি করা হয়েছে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার। সাথে বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জন্য আরো ২২টি শৌচাগার।

এ ছাড়া প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের দর্শনার্থীদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর ও ৫০০ মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে নারীদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা। সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, এনএসআই, এসএসএফ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

আজ শুক্রবার দুপুরে শিবচরের বাংলাবাজার (ফেরিঘাট) জনসভাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনসভা শেষে সবাই যাতে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যেতে অতিথিদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপটিন পুলিশ (ডিএমপি) এ নির্দেশনা জারি করেছে। এছাড়া অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ঢাকা মহানগরী থেকে যাত্রা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

এছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য অতিথিদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমন্ত্রণপত্রে। অতিথিদের আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ও বলা হয়েছে এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়।

আমন্ত্রণপত্রে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে আসার জন্য বলা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চাবি, চাবির রিং, কলম, মোবাইল, ছাতা, হাতব্যাগ, ক্যামেরা ও ইলেক্ট্রনিক বস্তু না নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে মাস্ক পরাসহ কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট সব প্রটোকল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে দেওয়া স্টিকারটি গাড়ির সামনের কাচের বাঁ পাশে দৃশ্যমান স্থানে লাগানোর জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া শনিবার সকাল ৯টায় অতিথিদের অনুষ্ঠানস্থলে আসন গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। এরপর সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর এক মিনিট পরই প্রদর্শিত হবে প্রামাণ্যচিত্র। এরপর সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সভাপতির বক্তব্য দেবন।

ডিএমপির রুট নির্দেশনাগুলো হলো-

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকা থেকে আগত অতিথিদের চলাচলে রুট: ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন চানখারপুল (নিমতলী) মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-দোলাইর পাড় টোলপ্লাজা-দোলাইর পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

২. জিরো পয়েন্ট (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ গুলিস্তান) থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের রুট: জিরো পয়েন্ট-গুলিস্তান আহাদ বক্স সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-দোলাইর পাড় টোলপ্লাজা-দোলাইর পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে।

৩. মতিঝিল শাপলা চত্বর ও ইত্তেফাক থেকে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের গমনাগমন রুট: মতিঝিল শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক ক্রসিং-হাটখোলা মোড়সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-দোলাইর পাড় টোলপ্লাজা-দোলাইর পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে।

৪. কমলাপুর, টিটিপাড়া থেকে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের চলাচলে রুট: কমলাপুর, টিটিপাড়া ক্রসিং-গোলাপবাগ মোড়-ইনগেট সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-দোলাইর পাড় টোলপ্লাজা-দোলাইর পাড় ক্রুসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার:

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু কাল (২৫ জুন) মহাধুমধামে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

আইজিপি জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।

পুলিশপ্রধান বলেন, জনসভাস্থল শেষে সবাই নিরাপদে যেন বাড়ি যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এখানে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন এসএসএফ, ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে বেনজীর বলেন, প্রতি মুহূর্তে আপডেট তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে শুধু জনসভাস্থলই নয়, সারা দেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

পুলিশ বাহিনীও পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উদযাপন করবে জানিয়ে আইজিপি বলেন, সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনন্দ উৎসব করবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here