রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বৃটেনে তাপমাত্রা

0
209
ছবি: এএফপি

বাংলা খবর ডেস্ক:
হটেস্ট ডে ইন হিস্টরি। ইতিহাসের সর্বোচ্চ গরমের দিন। রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বৃটেনে তাপমাত্রা। প্রথমবারের মতো গতকাল সেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেছে। প্রথম সেখানে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়। অসহনীয় ও অপ্রত্যাশিত এই গরমে গলে যাচ্ছে রানওয়ে, সড়ক। পিচগুলো গলে নষ্ট হয়ে গেছে রাস্তা। স্কুল বন্ধ। কার্যত পুরো বৃটেন অচল।

এমন ভয়াবহ তাপমাত্রার কারণে বন্ধ করা হয়েছে কমপক্ষে ১৭১টি স্কুল। হাসপাতালগুলোতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জরুরি নয় এমন অপারেশন। কারণ, অপারেশন থিয়েটারগুলো পরিণত হয়েছে ওভেনের মতো। রয়েল মেইল কর্মীদেরকে অফিসে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। কারণ, সেখানে বিলি করা হয়নি এমন মেইলের স্তূপ পড়ে গেছে। তাই গরম সত্ত্বেও তাদেরকে কাজে ফিরতে অনুরোধ করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতগুলো এড়িয়ে চলতে সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে চরম এই তাপমাত্রার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত শরীরচর্চাকে স্থগিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সড়কে এবং রেলে কমিউটার সংখ্যা কমে এক পঞ্চমাংশে দাঁড়িয়েছে।
আকস্মিক চাহিদা বেড়ে গেছে বৈদ্যুতিক ফ্যানের। পাশাপাশি বেড়েছে বোতলজাত পানি, আইসক্রিম এবং ক্যানে ভরা ককটেলের। বৃটিশ মিডিয়ার খবরে বলা হয়, গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে লন্ডন হিথ্রো এয়ারপোর্টে তাপমাত্রা উঠে যায় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরের সামান্য আগে সারে’র চার্লউডে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সেখানে ২০১৯ সালে বৃটেনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জুলাইয়ে কেমব্রিজে রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০০৩ সালের আগস্টে রেকর্ড করা হয়েছিল কেন্টে। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সাফোকে। সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই রেকর্ডকেও অতিক্রম করে গেছে। ইংল্যান্ডের চার্লউড সহ অনেক স্থানে মধ্যাহ্নের সময় তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ওয়েস্ট লন্ডনের কিউ গার্ডেন্সে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সারে’র চার্টসি’তে ছিল ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ওয়েস্ট লন্ডনের নর্থহোল্টেও এই তাপমাত্রা ছিল। এসবই ২০১৯ সালে বৃটেনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, সোমবার রাত ছিল বৃটেনের সবচেয়ে উষ্ণ। সেখানে অনেক স্থানেই তাপমাত্রা ২৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।

১৯৯০ সালের ৩রা আগস্ট ব্রাইটনে এই রেকর্ড ছিল ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নেটওয়ার্ক রেল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ আপগ্রেড করেছে। তাতে বলা হয়েছে লন্ডন কিংস ক্রসিং থেকে লন্ডনের উত্তরমুখী কোনো ট্রেন ছেড়ে যাবে না। তাই ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রেড সতর্কতা দেয়া হয়েছে। লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ওভারগ্রাউন্ডে কিছু লাইনে মারাত্মক বিলম্ব হয়েছে। এই ভয়াবহ তাপমাত্রার জন্য রেল খাতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কারণ লন্ডন থেকে টেমস লিঙ্ক অথবা গ্রেট নর্দান ট্রেন চলছিল না। কোনো ট্রেন চলছিল না ব্ল্যাকফ্রায়ার থেকে। কিংস ক্রস বা মুরগেট থেকেও কোনো ট্রেন সারাদিন চলছিল না। এক্ষেত্রে সারা বৃটেনের মানুষের কাছে পরিবহনমন্ত্রী গ্রান্ড শেপস তাদের সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটাতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বৃটেনজুড়ে এই অচলাবস্থার জন্য ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে।

লোকজন অভিযোগ করতে থাকেন যে, মন্ত্রীরা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক চিফ’রা ‘আয়া’র মতো আচরণ করছেন। গরমে লুটন বিমানবন্দরের রানওয়ে গলে যায় সোমবার। এ জন্য অবকাশযাপনে যাওয়া ব্যক্তিদের সফর বিলম্বিত হয়। মঙ্গলবার কেমব্রিজে বৃদ্ধির কারণে সাফোকে নিউমার্কেটের কাছে ‘এ১৪’ সড়কের অনেক অংশ ফুলে ওঠে। কোথাও পিচ গলে যায়। এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে। মঙ্গলবার লন্ডনে সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনকারীদের জন্য ছিল বন্ধ। এর কারণ, অসহনীয় তাপমাত্রা। সঙ্গে এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবস্থায় ছিল ত্রুটি। এ সমস্যা ব্যাখ্যা করে নোটিশ জানানো হয়েছিল ভবনটির প্রবেশপথে। এই চরম তাপমাত্রা আজ বুধবার কমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিষয়ক অফিস। আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্বে বজ্রসহ ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। এতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। বজ্রপাত হতে পারে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। পূর্বাভাসকারীরা বলেছে, স্থানভেদে ১.২ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে এক ঘণ্টা। আবার কোথাও তিন ঘণ্টা ধরে ২ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here